ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

মাতসুশিতা: জীবন যুদ্ধে এক সাহসী বীর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৩

বিশ্ববিখ্যাত প্যানাসনিক করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা কনসুকি মাতসুশিতা জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালে পশ্চিম জাপানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। জুয়াড়ি বাবার অপরিণামদর্শিতার ফলে সবকিছু খুইয়ে পরিবারটি যখন পথে বসতে যাচ্ছিল তখন ৮ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ৯ বছর বয়সী মাতসুশিতা বাইসাইকেলের দোকানে ফুটফরমাশের কাজ করে ধরেন পরিবারের হাল। কিছুদিনের মধ্যেই সেটি ছেড়ে যোগ দেন ওসাকা লাইট কোম্পানিতে। 

দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার কারণে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টরের পদে উন্নীত হলেও স্বপ্ন ছিলো তার আরো বড়। ভাবনা ছিলো মানুষকে কীভাবে আরো সেবা দেয়া যায়। উদ্ভাবন করলেন নতুন এক ধরনের লাইট-সকেট, প্রচলিতগুলোর চেয়ে যা অনেক ভালো। কিন্তু মালিক এর উৎপাদনে রাজী হলেন না। তাইআ চাকরি ছেড়ে দিলেন। স্ত্রী এবং ৩ জন মাত্র সহকারীকে নিয়ে মাতসুশিতা শুরু করলেন তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। অর্থ নেই, ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা নেই এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বা ইলেকট্রিক বাল্ব উৎপাদনে কোনোরকম অভিজ্ঞতা নেই এমন সহকারীদের নিয়ে একটানা কয়েক মাস কাজের পর তারা সফল হলেন। 

উৎপাদন তো হলো। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে দেখা দিলো আবার বিপত্তি। পাইকারি বিক্রেতারা তার পণ্য নিতে চাইলো না পরিমাণে কম বলে। লেগে থাকলেন মাতসুশিতা। গুণগত মান বাড়িয়ে দিলেন। দাম কমালেন ৫০ শতাংশ। পত্রিকায় পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়ার অভিনব উপায় তিনিই প্রথম চালু করেন। হু হু করে বাড়তে লাগলো তার বিক্রি। ১৯২২ সাল নাগাদ মাতসুশিতার প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসেই নতুন নতুন পণ্য নিয়ে হাজির হতে লাগলো বাজারে। ব্যবসাক্ষেত্রে মাতসুশিতা দিলেন এক যুগান্তকারী ধারণা।

প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বাজারে প্রচলিত পণ্যের চেয়ে অন্তত ৩০শতাংশ ভালো পণ্য দিতে হবে আর দাম কমাতে হবে অন্তত ৩০ শতাংশ। আফটার সেল সার্ভিস দেয়ার ধারণাটি মাতসুশিতাই চালু করেন। কর্মীদের তিনি নিজ পরিবারের সদস্য বলে ভাবতেন। মহামন্দার সময় কোম্পানিগুলো যখন কর্মী ছাঁটাই করে মন্দা মোকাবেলার চেষ্টা করছিলো মাতসুশিতা তখন উৎপাদন কর্মীদের বিক্রয়কাজে নিয়োজিত করে চেষ্টা করেছেন ছাঁটাই না করে কীভাবে করা যায়। সেসময় কর্মীদের অর্ধেকবেলা কাজ করালেও বেতন দিতেন পুরোবেলার। এই ভালবাসার প্রতিদানও তিনি পেয়েছেন। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রবাহিনীর অভিযোগের মুখে কোম্পানি প্রধানের পদ ছেড়ে দিতে হলেও তার কর্মীরাই তাকে আবার ফিরিয়ে আনে কোম্পানিতে। তিনি বলতেন, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান শুধু তার শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করবে না, রক্ষা করবে সমাজের স্বার্থও। 

এ পর্যন্ত পড়ে আপনি যদি মনে করে থাকেন এত দান-দক্ষিণা করে মাতসুশিতার কী লাভ হলো, তাহলে আপনি ভুল করবেন। ১৯৮৯ সালে ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যুর সময় তার ব্যক্তিগত সম্পদেরই পরিমাণ ছিলো ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০ হাজার কর্মীসমেত তার প্রতিষ্ঠান ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ইলেকট্রনিক কোম্পানি। আমেরিকার কোনো ভিসিআর বিক্রির দোকানে গিয়ে যদি আপনি ভিসিআর ব্রান্ড খোঁজেন তাহলে দেখবেন সবগুলোই মাতসুশিতা ইলেকট্রিকের। 

জীবনে ১ম হওয়ার জন্যে যে দক্ষতা তা অর্জন করতে হলে আপনাকে পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। প্রতিটি কাজে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। হতে হবে ভালো ছাত্র যে সবকিছু থেকেই শিখতে চায়, শিখতে পারে। ক্রম-উৎকর্ষের জন্যে নিজেকে নিবেদিত করতে হবে ।

এমএম/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি