মাদক সম্রাটদের বিলাসবহুল সমাধি
প্রকাশিত : ১২:৪৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২০:৫৪, ৪ অক্টোবর ২০১৭
সমাধিক্ষেত্র যে কতটা জৌলুসময় হতে পারে, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ তাজমহল আর মিসরের পিরামিড। পুরনো দিনের রাজা-বাদশাহ বা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সমাধিগুলো আসলেই দেখার মতো।
আধুনিক যুগে অবশ্য এমন রাজকীয় সমাধি খুব একটা চোখে পড়ে না। এদিক থেকে ব্যতিক্রম মেক্সিকান মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক ব্যবসায়ী থেকে মাদক সম্রাটে পরিণত হওয়া কিছু সন্ত্রাসীর সমাধিস্থল বানানো হয়েছে বিলাসবহুল। এগুলো দেখতে পর্যটন স্পটের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
মেক্সিকান মাফিয়া সম্রাটদের কবরগুলোর উপরে তৈরি করা হয়েছে প্রাসাদ, যার ভেতরে রয়েছে বুলেটপ্রুফ জানালা, ওয়াই-ফাই, বিলাসবহুল সিনেমা-থিয়েটার, এয়ারকন্ডিশন, রান্নাঘরসহ আরো হরেক সুযোগ-সুবিধা। সমাধি দেখতে এসে পরিবারের সদস্যরা যেন এখানে কিছুটা সময় আরামে কাটাতে পারেন, তাই এত সব আয়োজন।
মাফিয়া গ্রুপের এই মাদক সম্রাটরা নিজেরাই মৃত্যুর আগে নিজেদের সমাধিস্থল সাজিয়েছেন। মেক্সিকোর সবচেয়ে কুখ্যাত ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট হলো সিনালোয়া কার্টেল। প্রাদেশিক রাজধানী কুলিয়াকানে বানানো হার্দিনেস দেল হুমাইয়া গোরস্তানটা দেখলেই তাদের অর্থ-বিত্ত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বিশেষ করে সিন্ডিকেটটির প্রধান ম্যানুয়াল তোরেস ফেলিক্সের সমাধিস্থলটি দেখার মতো।এর মধ্যে মার্বেল পাথরের ব্যাপক ব্যবহার চোখে পড়ে।
তিনি পরিচিত ছিলেন দ্য ক্রেজি ওয়ান নামে। বলা হয়ে থাকে, ভয়ানক অসুস্থ মানসিকতার মানুষ ছিলেন তোরেস। হঠাত্ করেই মাথা গরম করে অন্যদের ওপর ভয়ংকর রকমের নিষ্ঠুরতা চালাতেন। ২০০৯ সালে ছেলের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে নির্বিচারে বহু মানুষ মারেন। ২০১২ সালে মেক্সিকান আর্মির সঙ্গে এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় তিন লাখ ৪০ হাজার ডলার খরচে নির্মিত সমাধিস্থলে। সিনালোয়ার আরেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী এল চ্যাপো তাঁর পাঁচ ভাইয়ের জন্য পাঁচটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স সমাধিস্থল তৈরি করেছেন। গুজম্যান পরিবারের এই সমাধিক্ষেত্র বানাতে খরচ হয়েছে মোট ১২ লাখ ডলার।
জীবিত অবস্থায় এই মাফিয়ারা কত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন, তা বোঝানোই এসব জমকালো সমাধি তৈরির মূল উদ্দেশ্য। তবে মৃত্যুর পরও নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার এই প্রবণতাকে স্বাভাবিক বলছেন সিনালোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্লোস আয়ালা। দর্শনের অধ্যাপক কার্লোসের দেওয়া হিসাব মতে, এখানকার বেশির ভাগ সমাধি তৈরি করতে তিন লাখ ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে।
মাদকের বিস্তার ঠেকাতে প্রায় এক দশক ধরে মাফিয়াচক্রগুলোর সঙ্গে সরকারি সেনাদের লড়াই চলছে। এতে নিহত হাজার হাজার মাফিয়া সদস্যের লাশ হয় গণকবরে ঠাঁই পেয়েছে, নয়তো রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে পচেছে। কিন্তু মাফিয়াচক্রের প্রধানরা জায়গা পেয়েছেন বিলাসবহুল সমাধিক্ষেত্রে। তবে এই সমাধিক্ষেত্র দেখে তরুণরা মাধকচক্রে যোগ দিতে পারে বলে এ অঞ্চলগুলোকে নিষিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা দিতে পারে বলে জানা যায় ।
সূত্র : বিবিসি।
এম/এআর