মাদকের চোরাবালিতে ডুবছে তরুণসমাজ
প্রকাশিত : ১৭:৪৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | আপডেট: ২২:৩৭, ২১ জুন ২০২৩
দেশের অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের সন্তান থেকে শুরু করে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরাও আজ মাদকের নেশায় বুঁদ। সর্বনাশা মাদক স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে তরুণ সমাজ। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র মাদকের বিস্তার। যেসব মেধাবীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জাতিকে এগিয়ে নেবে তারা আজ অচেনা চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের একজন নারী সাংসদের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি। রাজধানীর ইস্কাটনে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নিজ গাড়ি থেকে গুলি ছুড়ে রিকশাচালক হাকিম ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলীকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে ভৈরবে এক মাদকাসক্ত স্বামী ঘরে ঢুকে অন্তঃসত্তা স্ত্রীর পেটে কোপ দেন। এতে গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সন্তান মারা যায় এবং স্ত্রী মুমূর্ষু অবস্থায় দিন পার করছেন।
এভাবে দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষই মাদকের মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এর মাধ্যমে তারা নিজেরা শেষ হচ্ছে, পরিবারকে একেবারে নিঃস্ব করে দিচ্ছে, অন্যদিকে জাতি নিমজ্জিত হচ্ছে অতল গহ্বরে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এমন সব তথ্য যা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়, আঁতকে ওঠতে হয়। কোথায় যাচ্ছি আমরা? কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রজন্ম? ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে একটি জাতি যা ওপরে থেকে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই।
সুন্দর চেহারার আমির হোসেন (ছদ্দ নাম)। বয়স ৩২। পড়াশোনা করেছেন রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। এইচএসসি পরীক্ষার পর আমিরের হাতে অনেক সময়। তাই চুটিয়ে প্রেম করেছেন। গুলশানের চাকচিক্যময় জীবন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। বাবা একজন শিল্পপতি। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ান। বন্ধুদের নিয়ে চলে দিনভর আনন্দ উল্লাস। এর মধ্যে আমির দেখেন এক বন্ধু প্রায়ই গাঁজা সেবন করছেন। জানতে চাইলে বন্ধু বলেন, ‘মনের দুঃখ ভোলার জন্যই গাঁজা টানছি’। এর মাঝে একদিন আমিরও বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে গাঁজা সেবন করেন। সময়টা ২০০১ সাল। এরপর শুরু হলো তার অন্যরকম জীবন। খুব দ্রুত আমির গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়েন। প্রেমিকার সঙ্গে এ নিয়ে ঝগড়া হয়। ভেঙ্গে যায় মধুর সম্পর্ক।
আমির বলেন, “মূলত পরিবারের সঙ্গে আমার একটা গ্যাপ ছিল। বাবা সব সময় তার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। মা তার কাজ নিয়ে পড়ে থাকে। ফলে আমাকে সময় দেওয়ার মতো কেউ নেই। ছোটবেলা থেকেই এই একাকিত্ব আমাকে পেয়ে বসে এবং খারাপ দিকে নিয়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া শুরু করি এবং এক ধরনের অভিমান থেকে গাঁজার মধ্যে ঢুকে যাই। পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব হওয়ায় বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকতাম আর নেশা করতাম। এভাবে ডুবে গেছি নেশায়, যা থেকে বের হতে পারিনি।”
দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমির বড়। পরবর্তীতে পরিবার যখন এ বিষয়ে জেনে যায়। তারা মাদক থেকে দূরে সরাতে অনেক চেষ্টা করে। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা চলে। কিন্তু মাদকের নেশা তাকে পাগল করে দেয়। মা-বাবা তার এই আচরণে ভিষণ কষ্ট পান। ছেলের এমন অবস্থা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। দিনের পর দিন গাঁজা, হেরোইন, প্যাথেড্রিনসহ সব ধরনের মাদক নেওয়া তার শেষ। সর্বশেষ তিনি ইয়াবায় আসক্ত হন।
আমিরের ভাষ্য, “আমার কারণে পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে। মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখত বাবার মতো বড় ব্যবসায়ী হব। পড়ালেখা শেষ করব। আমি তার বড় ছেলে। তারা বিশ্বাস করতে চায়না আমি মাদক নিই। আমি তাদের অনেক ক্ষতি করেছি। আমি এখন চেষ্টা করছি এসব থেকে মুক্ত হতে।”
মাদকে আসক্ত হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে আমিরের আরও দূরত্ব তৈরি হয়। মায়ের চেষ্টায় সে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন মাদক সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি আমির। বাবার অঢেল টাকাও সন্তানকে সুস্থ করতে পারছেনা এই সর্বনাশা মাদক থেকে। আমিরের বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সামাজিক অবস্থানের কারণে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তার মধ্যে বইছে হাহাকার। একজন পিতা হিসেবে তিনি কখনো সন্তানের এমন দশা দেখতে চাননি। তার এই দীর্ঘ নিঃশ্বাস যেন কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না। অঢেল সম্পদের মালিক হয়েও; তার প্রশ্ন কেন এমন হলো?
এক সময় তারণ্যের ঝলক ছিল মোহাম্মদ হাবিব সরকারের চোখে মুখে। সবুজবাগ থানার মাদারটেক এলাকায় তার বাসা। বাবা মোহাম্মদ শওকত আলীর নিজের বাড়ি ও ব্যবসার সুবাদে কোনো অভাব ছিল না। এই হাবিব সরকার বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে কৌতুহলবশত প্রথমে ফেনসিডিল সেবন শুরু করেন। তারপর হয়ে পড়েন গাঁজায় আসক্ত। সর্বশেষ ইয়াবা তার তারণ্যের সব কিছু কেড়ে নেয়। ২০০৩ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তার এক বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে মাদক নেওয়া তার শুরু হয়। বাবা-মা যখন জানতে পারেন তখন আর কিছুই নেই। তারা নানাভাবে চেষ্টা করেছেন তাকে মাদক থেকে ফেরাতে, কিন্তু পারেননি। এক বুক কষ্ট নিয়ে বাবা পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
তিন ভাই তিন বোনের সব সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয়। মায়ের চোখে হাবিবের চিন্তায় ঘুম নেই। তাই তিনি তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। ভাবলেন বিয়ের পর হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। কিন্ত ঠিক আর হয়ে ওঠেননি। স্ত্রী যখন জেনে গেলেন স্বামী মাদকাসক্ত তখন থেকে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। স্ত্রী চেষ্টা করেন তাকে ভালো করতে। এর মধ্যে ঘর আলো করে আসে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। এরপরও ভেঙ্গে যায় তার সংসার। এরপর তার ভাগে যে সব জায়গা জমি ছিল সব মাদকের পেছনে শেষ করে দেন।
হাবিব বলেন, “আমার ভাগে যে জমি ছিল, সে জমি আমি মানুষের কাছে মর্টগেজ দিয়ে মাদক নেওয়া শুরু করি। এক সময় টাকা শেষ হয়ে যায়। কারো কাছে আর টাকা পাই না। তখন মাদক কেনাবেচা শুরু করি। মাদক বিক্রি করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৬ বার জেলে গিয়েছি। আমার মা আমার জন্য কাঁদে। কিন্তু এখন আমার কেউ নেই। আমার স্ত্রীও চলে গেছে অনেক আগে। সব কিছু থেকেও আজ আমি নিঃস্ব।”
হাবিব বর্তমানে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মাদকের এমন নীল ছোবলে লাখ লাখ পরিবার আজ দিশেহারা। এ দেশের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে মাদক। স্কুলগুলোতে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে এই মরণ নেশা। একুশে টিভি অনলাইনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এমন তথ্য। শামিম হোসেন নামের এক স্কুলছাত্র মাত্র পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই জড়িয়ে পড়ে মাদকে। প্রথমে কৌতুহল; পরে নেশা। যে নেশা সে কখনই আর ছাড়তে পারেননি।
শামিম বলে, “আমাদের বাসা গোড়ানে। নিজেদের বাড়ি। আমি ১৯৯৬ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমাদের এক ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে প্রথমে গাঁজা সেবন শুরু করি। তারপর তার আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে গাঁজা নিতে থাকি। মা প্রথম প্রথম বলতো আমার চোখ এত লাল কেন। আমি বলতাম চোখে ধুলা-বালি পড়েছে। পরবর্তীতে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে যাই। এক সময় সবাই জেনে যায়। পরে টাকার জন্য ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করা শুরু করি। টাকা না দিলে চুরি করে জিনিস নিয়ে যেতাম। একসময় বাবা আমাকে টঙ্গির কিশোর অপরাধ কেন্দ্রে রেখে আসে। ওই সময় তাদের প্রতি আমার খুব অভিমান হয়। সেখানে এক বছর ছিলাম।”
মাদকের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে এমন অসংখ্য ঘটনা। সুন্দর পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যাচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে সংসার। এক ভাই আরেক ভাইকে খুন করছে। জন্মদাতা পিতা-মাতাকেও হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করছে না। পুলিশ কন্যা ঐশির মাদকের নেশায় পিতা মাহফুজুর রহমান ও মা স্বপ্না রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করতে হাত কাঁপেনি। খবরের পাতায় নিত্যদিনই ওঠে আসে মাদকাসক্তের কারণে মায়ের আর্তি, বোনের হাহাকার, ভাইয়ের কান্না, স্ত্রীর আহাজারি। এমন ঘটনাও ঘটেছে, মাদকের টাকা না পেয়ে নিজের আপন বোনকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সঙ্গ দোষেই তরুণ-তরুণীরা মাদকে আসক্ত হচ্ছে বেশি। এছাড়া মা-বাবার সন্তানের প্রতি অবহেলা, সুস্থ বিনোদনের অভাব, পারিবারিক অশান্তি, আশপাশের পরিবেশ, আইনের শিথিলতা নানা কারণে মাদকে যুবসমাজ জড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে ইয়াবা সেবনকারির সংখ্যাই বেশি। এছাড়া হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেড্রিন, মদ, বিয়ার, কোকেন, গাঁজা অনায়াসে পৌঁছে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের হাতে। এসবের সহজলভ্যতাও অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন তারা।
দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে মাদকবিরোধী কাজ করছেন অধ্যাপক ড. অরুপ রতন চৌধুরী।
তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্ম এখন সবচেয়ে বেশি মাদকের দিকে ঝুঁকছে। তার কারণ আমাদের সুস্থ বিনোদনের অভাব। সাংস্কৃতিক পরিবেশের অভাবে ছেলেমেয়েরা খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া হাতের কাছে টাকা থাকায় এবং মাদকের সহজলভ্যতায় খুব দ্রুত তারা এসবে আসক্ত হচ্ছে। ইন্টারনেটের ব্যবহারও এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। সেখানে তারা ভালো কিছু দেখছে না। আজকে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে যেভাবে আসছে তার থেকে হাজারগুণ বেশি আসছে ইয়াবা। প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় সারাদেশেই এর বিস্তার ঘটছে। এখনই এদের থামাতে না পারলে আগামীতে একটি অসুস্থ প্রজন্ম তৈরি হবে। যা দেশ জাতিকে চরম অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে।”
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা অলি-গলি এখন মাদক কেনাবেচার স্থান। এক সময় নির্দিষ্ট জায়গা থেকে মাদক কিনতে হতো আর এখন সর্বত্রই এর ছড়াছড়ি। রাজধানীর কমলাপুর, তেজগাঁও, মগবাজার রেললাইন, মাজার এলাকা, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ি, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন জায়গায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্যা তরুণ, বয়স্ক, মধ্যবয়স্ক লোক গাঁজায় বুঁদ হয়ে আছে। অনেকে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে ভালো টাকা আয়ও করছে।
কারওয়ান বাজার রেলগেইট সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে বসলে দেখা যায়, অফিস থেকে বের হয়ে অনেকে এখানে এসে গাঁজা বা ইয়াবা কিনছে। বেচা-কেনা চলে ইশারা ইঙ্গিতে। এ সময় একজন মাদকসেবি এসে আড়ালে এক মাদক বিক্রেতা নারীকে কিছু টাকা দেন। একটু পর ওই নারী একটা পুরিয়া এনে আড়ালে তার হাতে দেন। লোকটি মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে যায়। একটু এগিয়ে নারীর কাছে জানতে চাইলাম কেমন চলছে? স্মিত হেসে নারী বললেন- “লাগবে?”
আয় কেমন হচ্ছে আবার জানতে চাইলে বলে, “এখন একটু কম। মাঝে মাঝে পুলিশ ঝামেলা করে। তাই একটু হিসেব করেই বিক্রি করতে হয়। অফিসের অনেক লোক এখানে গাঁজা নিতে আসে। ছাত্ররাও আসে। অনেকে ইয়াবা নেয়। গাঁজার স্টিকের (শলাকা) দাম ৫০ টাকা, ১০০ টাকা। ইয়াবা কয়েক ধরনের আছে যে যেটা চায় সেটা দেই। দৈনিক দুই থেকে তিন হাজার টাকার মতো আয় হয়।’’
মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারা বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মাদক কি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে- জানতে চাইলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার চেষ্টা চলছে। মানুষ যাতে মাদকাসক্ত না হয় সে জন্য এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরছি। যারা আসক্ত হয়ে পড়েছে তাদের নিরাময়ে কাজ করছি। বেসরকারি উদ্যেক্তাদের নিরাময় কেন্দ্র তৈরি করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। বর্তমানে সারাদেশে ২৩৫টি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, মাদক নিয়ন্ত্রণ হবেই। মাদক দেশ ও জাতির শত্রু।”
মাদকসেবীদের সন্তানদের ওপরও পড়ছে এর প্রভাব। মাদক সেবনের কারণে জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু। মা-বাবা যিনিই মাদকাসক্ত হন না কেন এর প্রভাব পড়বে সন্তানের ওপর।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, “মাদক সেবনে সন্তানের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গর্ভাবস্থায় মা যদি মাদক নেয় তাহলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। বিকলাঙ্গ হয়ে সন্তান জন্ম নিতে পারে। বাবা মাদকাসক্ত হলে সন্তান অস্বাভাবিক বা অ্যাবনরমাল হয়ে জন্ম নিতে পারে। এছাড়া পরিবারে মারামারি, হাঙ্গামার কারণে সন্তানের ওপর এর প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে সন্তানও মাদকাসক্ত হয়ে যায়।”
যারা মাদক সেবন করছে তাদের কি সুস্থ হওয়া সম্ভব?
মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘প্রশান্তি’র কর্মকর্তা ফারুক রহমান মিন্টু বলেন, “আমি ১৪ বছর ধরে মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করছি। নিয়মিত চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব। আমাদের এখানে প্রতিনিয়তই রোগী আসে এবং চিকিৎসা চলছে। আমার কাছে মনে হয়েছে আগে মাদক সেবনের ফলে রোগীর শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা দেখা দিত। তখন চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব হতো। আর এখন কেমিকেলের ধরন পরিবর্তন হওয়ায় রোগীদের ৯০ শতাংশই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে আমাদেরকে এখন চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এখন মাদক সেবনে ব্রেনের ওপর প্রভাবটা হচ্ছে বেশি।”
“মাদক থেকে রক্ষা পেতে হলে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। সন্তানকে পরিবারের সময় দিতে হবে। তাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।’’ বললেন ফারুক রহমান মিন্টু।
বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৭০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে বলে জানা গেছে। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে ইয়াবা। সর্বগ্রাসী এই মাদককে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমির, শামিম, হাবিবদের মতো অসংখ্যা মেধাবী যুবক অকালে ঝরে যাবে। জাতি হবে নিঃস্ব।
এএইচএস/