ঢাকা, রবিবার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মাদার অব হিউম্যানিটি শেখ হাসিনার ৭১তম জন্মদিন আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১২:১৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্তর বছর পূর্ণ করলেন।। আজ তাঁর ৭১তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

মধুমতি নদীবিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা। শেখ লুৎফর রহমান এবং সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি হাসু। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে, টুঙ্গিপাড়ায়।

দলীয় সভানেত্রীর ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে সব আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিয়ে সেই অর্থ রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ব্যয় করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।তবে বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার জন্মদিনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো।

গত কয়েক বছরের মতো এবারও জন্মদিনে দেশের বাইরে থাকছেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জন্মদিন কাটাবেন তিনি।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিবারের সঙ্গে আছেন।

এর মধ্যে গলব্লাডারে অস্ত্রোপচারের কারণে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরা তিনদিন পিছিয়েছে। সফল অস্ত্রোপচার শেষে বিশ্রামে থাকা সরকারপ্রধান আগামী ৫ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

জীবদ্দশায় শেখ হাসিনা তাঁর বাবার দেখা পেতেন কদাচিৎ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ভাগ্য ফেরানোর আন্দোলনে অগ্রপথিক হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেল জীবন ছিল নিত্য সহচর। আন্দোলন সংগ্রামই ছিল তাঁর যাপিতজীবন। এ কারণে পুত্র-কন্যারা পিতার সান্নিধ্য পেয়েছে খুবই কম।

শেখ হাসিনার পাঁচ ভাই-বোন। কনিষ্ঠদের মধ্যে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সপরিবারে ঢাকায় আসেন। তিনি পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন বসবাস করেন কিছু সময়। ওই সময় শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে আসেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এই বাড়িতেই ছিলেন।

১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। সে বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় তিনিও মানবসেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হন। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালে। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় ১১ দফা আন্দোলন ও ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলুম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে তার পথ থেকে টলাতে পারেনি একবিন্দু।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় স্বর্ণযুগ হিসেবে।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। চিরতরে পঙ্গু হন অসংখ্য নেতাকর্মী।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনের অবসান হলে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে আসীন হন। শেখ হাসিনা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। শুরু হয় গণআন্দোলন। বাতিল হয় পাতানো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান ইয়াজউদ্দিন। ঘোষিত হয় জরুরি অবস্থা। ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

১/১১-এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের। শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু পিতার সংগ্রামী রক্ত যার শরীরে তাকে দমায় কে? শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ষড়যন্ত্র ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে ফিরে আসেন প্রিয় স্বদেশভূমে।

এর মাত্র দু’মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাকে বন্দি করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক মিথ্যা মামলা। কারাগারে তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। গঠিত হয় মহাজোট সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

 ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি