ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

মাদ্রাসায় শিশুরা কী শিখছে খোঁজ রাখুন

আসিফ তালুকদার

প্রকাশিত : ১৮:৪০, ২৯ মার্চ ২০২১

আসিফ তালুকদার

আসিফ তালুকদার

মাদ্রাসায় হাফেজ, আলেম, মওলানা পড়ে ধর্মপ্রাণ হয়ে গড়ে উঠবে সন্তান এই স্বপ্ন নিয়ে অবুঝ সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠান তাদের পিতা-মাতা। কিন্তু আমার মনে হয় বর্তমান মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ইসলামিক মূল্যবোধ শিক্ষার থেকে রাজনীতি চর্চায় বেশি আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে।

কোমলমতি শিশুদের ব্রেইন ওয়াশ করে ভুল ব্যাখ্যায় তাদের জান্নাতের স্বপ্নে বিভোর করে ফেলা হচ্ছে। মাদ্রাসার অধিকাংশ হুজুরেরা যা বলবে তা শুনলেই জান্নাত নিশ্চিত বিষয়টা এমন। কিন্তু এই শিশুদের কখনো শেখানো হয় না যে বুঝেশুনে তা ই করো যা কোরআন ও হাদিস বলে। শিশুদের জান্নাতের লোভ দেখিয়ে হুজুরেরা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। আর যার কারণে খেয়াল করবেন বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে একজন হুজুর আরেক জনের দুর্নাম করছে। এই সকল হুজুরেরা যদি আসলেই ইসলামের মঙ্গল চাইতো তাহলে তারা ভিন্ন ভিন্ন মতে বিশ্বাসী না হয়ে একটা মতে ঐক্যবদ্ধ থাকতো, একটি মাত্র আদর্শে চলতে পারতো। কারণ ইসলামতো এক এবং অভিন্ন পূর্ণাঙ্গ একটি বিধান যা নিয়ে মতপার্থক্যের সুযোগ নেই। মানুষের মাঝে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা না ছড়িয়ে তারা প্রত্যেকে প্রমাণ করতে ব্যস্ত যে অন্যরা যেটা বলছে সেটা ভুল, আর আমি যেটা বলছি সেটাই সঠিক। হুজুরদের মাঝে যদি ইসলামের ব্যখ্যা নিয়ে মতপার্থক্য থাকে তাহলে মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুরা কী শিখবে?  

একটা কথা খুব খারাপ শোনায় এরপরও সত্য কিনা মিলিয়ে দেখবেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এক ছাদের নিচে একসাথে থাকতে পারবে। কিন্তু তথাকথিত বড় বড় হুজুরেরা এক সাথে কোনদিনও এক ছাদের নিচে এক ঘন্টাও থাকতে পারবে না। মনগড়া ফতোয়ায় একজন আরেকজনকে ছোট করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে যাবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (স) এর প্রধান হাতির ছিল ইসলামের দাওয়াত। আর আমাদের নামসর্বস্ব  হুজুরেরা ইসলাম প্রতিষ্ঠায় প্রধান হাতিয়ার হিসেবে জিহাদকে ব্যবহার করতে চাইছে। শিশুদের এমনভাবে শেখানো হচ্ছে  যে ক্ষমতায় গেলেই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। 

একটা কথা কি জানেন? ইসলামের সব থেকে বড় ক্ষতি করছে এই নামসর্বস্ব ক্ষমতালোভী হুজুরেরা। মানুষের ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার করে ইসলামের সঠিক প্রচার না করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের খেলায় মত্ত হয়ে মুসলমানদের সাথে বেঈমানী করছে। ক্ষমতা দেখিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিতে মাদ্রাসার শিশুদের অস্ত্র হাতে রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে তারা। ইসলাম কি এটা সমর্থন করে?? 

এই বিষয়ে বলা বাহুল্য যে ইসলাম কখনো কোন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম সমর্থন করেনি। তাই যদি হতো তাহলে মহানবী (স) কাফেরদের শত নির্যাতন সহ্য করেও কাফেরদের দুয়ারে বার বার ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যেতেন না। উদাহরণ হিসেবে তায়েফে মহানবী (স) এর ইসলাম প্রচারের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তায়েফে মহানবী (স) ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান। কাফেররা দাওয়াততো গ্রহণ করলোই না বরং আল্লাহর বন্ধু আমাদের প্রিয় নবীকে এমন ভাবে পাথর নিক্ষেপ করলো যে তার রক্ত জমাট বেঁধে জুতা আটকে গেল। এ ঘটনা দেখে জীব্রাঈল (আ) আসলেন এবং নবীর কাছে অনুমতি চাইলেন দুই পাহাড় চেপে এনে তায়েফ বাসিকে পিসে মেরে ফেলার জন্য। মহানবী তাকে বললেন যে তুমি যদি এদের মেরে ফেলো তাহলে আমি ইসলাম প্রচার করবো কাদের কাছে? এই হলো ইসলামের মহানুভবতা। 

এ কথা প্রমাণিত যে যদি আল্লাহর রাসূল চাইতো তাহলে কোন কষ্ট ছাড়াই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ছিল। আল্লাহর রাসূল ততোক্ষণ জিহাদ করতো না যতক্ষন না ইসলামকে একদম নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য কাফেররা তৎপর হতো। আর আজ হুজুরেরা ব্যস্ত কথায় কথায় জিহাদ করতে। দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিংবা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কোমলমতি শিশুদের হাতে যারা অস্ত্র তুলে দিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে তারা ইসলামকে ধ্বংসের মূলনায়ক।

মনেরাখা উচিৎ যে মহান আল্লাহ জান্নাত শুধু এই নামসর্বস্ব হুজুরদের জন্য তৈরি করেননি, তৈরি করেছেন মুসলমান এবং সত্যিকারের মুমিনদের জন্য। অতিরিক্ত আবেগ ইসলাম থেকে আপনাকে আলোকবর্ষ দূরে নিয়ে যেতে পারে চোখের পলকে। নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ করা হয়েছে, এখন যদি আপনি অতি আবেগ তাড়িত হয়ে দশ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পড়েন তাহলে আপনি ইসলাম বিকৃত করছেন এবং এ দায়ভার ইসলামের নয় একান্ত আপনার। তাই মাদ্রাসায় শিশুরা কী শিখে বড় হচ্ছে তা এখনই নজরদারিতে আনা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। আপনার সন্তান মাদ্রাসায় কী শিখছে তার খোঁজ রাখার দায়িত্ব আপনার নিজের।

লেখক: সাহিত্য সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ডাকসু।

এসি
 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি