ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মানবজীবনে আদব-কায়দা’র তাৎপর্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | আপডেট: ১৩:৪০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ভালো মানুষের ভূষণ শুদ্ধাচার। শুদ্ধাচারী মানুষই ভালো মানুষ। আসলে যা-কিছু ভালো, যা-কিছু কল্যাণকর তা-ই শুদ্ধ। যা-কিছু মন্দ, যা-কিছু অকল্যাণকর তা-ই অশুদ্ধ। যা-কিছু সত্য, সুন্দর ও শুভ তা-ই শুদ্ধ। যা-কিছু অসত্য, পঙ্কিল ও অশুভ তা-ই অশুদ্ধ। যা-কিছু ন্যায় ও মানবিক তা-ই শুদ্ধ। যা-কিছু অন্যায়, জুলুম ও অমানবিক তা-ই অশুদ্ধ। যা শুদ্ধ ও কল্যাণকর তা-ই ধর্ম আর যা অশুদ্ধ ও অকল্যাণকর তা-ই অধর্ম। ধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর অধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। আপনার আচারই বলে দেবে আপনি ধার্মিক, না অধার্মিক। আসলে ধার্মিক যেমন দুরাচারী হতে পারে না, তেমনি দুরাচারীও কখনো ধার্মিক বলে গণ্য হতে পারে না।

শুদ্ধাচারী হতে হলে, ধার্মিক হতে হলে আপনাকে জানতে হবে ভালো-মন্দ সম্পর্কে, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে, করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে। নৈতিকতার কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হবে প্রতিটি কথা ও কাজকে।

 

মানবজীবন তথা মুসলিম ব্যক্তির জীবনে আদব-কায়দার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহুল। 

এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়্যাতের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ সমতুল্য।” 

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “তুমি আদব অন্বেষণ কর; কারণ, আদব হলো বুদ্ধির পরিপুরক, ব্যক্তিত্বের দলীল, নিঃসঙ্গতায় ঘনিষ্ঠ বন্ধু, প্রবাসজীবনের সাথী এবং অভাবের সময়ে সম্পদ।”

আর আদব বা শিষ্টাচার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার দ্বারা ব্যক্তির জীবন পরিশুদ্ধ ও পরিপাটি হয়; আর এ আদব হলো দীন ইসলামের সারবস্তু; সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির জন্য জরুরি হলো আল্লাহ তা‘আলার সাথে, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এবং সাধরণ মানুষসহ সকল সৃষ্টির সাথে আদব রক্ষা করে চলা।

আর এ আদবের মাধ্যমেই একজন মুসলিম জানতে পারবে তার খাবার ও পানীয় গ্রহণের সময় তার অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ; কিভাবে তার সালাম প্রদান, অনুমতি গ্রহণ, বসা, কথা বলা, আনন্দ ও শোক প্রকাশ করা, হাঁচি দেওয়া ও হাই তোলার মত বিবিধ কাজ সম্পন্ন হবে; আর কেমন ব্যবহার হবে তার পিতামাতা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে। 

এক কথায় এ আদব-কায়দা রক্ষা করে চলার মাধ্যমেই একজন মুসলিম কাঙ্খিত মানের ভদ্র ও সভ্য মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং নিজেকে অন্যান্য জাতির চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে; ফলে দীন ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে যাবে সমাজ, রাষ্ট্র ও দুনিয়ার দিক দিগন্তে। তাইতো কেউ কেউ শিক্ষার চেয়ে আদব বা শিষ্টাচারের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তোমরা আগে সুসভ্য হও, তারপর জ্ঞান অর্জন কর।” 

আল-কারাফী তাঁর ‘আল-ফারুক’ গ্রন্থে বলেন, “আর জেনে রাখবে, অনেক বেশি কাজের চেয়ে অল্প আদব অনেক বেশি উত্তম।” 

আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন, “ব্যক্তি কোনো প্রকার জ্ঞান দ্বারা মহৎ হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার জ্ঞানকে আদব দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা অনেক বেশি জ্ঞানের চেয়ে কম আদবকে অনেক বেশি জরুরি বা প্রয়োজন মনে করতাম।”

কোনো কোনো দার্শনিক বলেন, “আকল (বুদ্ধি) ছাড়া আদব হয় না; আবার আদব ছাড়া আকলও হয় না।

জনৈক সৎব্যক্তি তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি তোমার আমলকে মনে করবে লবণ, আর তোমার আদবকে মনে করবে ময়দা।” 

অর্থাৎ তুমি আমলের চেয়ে আদবকে এত বেশি গুরুত্ব দিবে, লবণ ও ময়দার স্বাভাবিক মিশ্রণে উভয়ের অনুপাত যেভাবে কম বেশি হয়।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি