মানবতাই ধর্ম
প্রকাশিত : ১৭:১৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
পবিত্র কোরআনের সূরা আনফালের ২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ, তোমাদের রাসূল যখন তোমাদের এমন কিছুর দিকে আহ্বান করে যা তোমাদের অনন্ত জীবনের সন্ধান দেয়, তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিও এবং জেনে রাখ আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অবস্থান নেন এবং তাঁরই কাছে তোমাদের একত্রিত করা হবে।
সুতরাং এ থেকেই স্পষ্ট হয় অনন্ত জীবনের চাবিকাঠি রয়েছে আল্লাহ এবং রাসূলের নির্দেশ মান্য করার মধ্যে। সেটাই সত্য পথ- আর সত্য পথে যে চলবে সত্য স্বয়ং তা অন্তরে এসে ঠাঁই করে নেবেন।
মানুষকে তার জন্য যা অর্জন করতে হয় তা হলো মানবতা। মানবতা অর্জন করতে হলে চাই চারটি জিনিসের সমন্বয়-কথা, কাজ, অবস্থা এবং উদ্যমের সার্থক সমন্বয়। যার কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই বা কাজের সঙ্গে কথার- সে তো মানুষ নামেরই যোগ্য নয়।
কথা এবং কাজ যখন এক সুরে বাজে তখন মানুষ অর্জন করে একটা মর্যাদা বা অবস্থা। আর সে অবস্থাকে নিরন্তর সাধনায় যা আরো মর্যাদাবান করে- উচ্চতর মর্যাদায় অভিষিক্ত করে, তারই নাম উদ্যম। এ চারটে জিনিস এক সুতোয় গাঁথা।
একটা থেকে আর একটা বিচ্ছিন্ন নয়- বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। বিচ্ছিন্ন হলেই তা কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। আমাদের সমাজে এমন অনেক আলেম আছেন যাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই-যারা নসিহত করেন কিন্তু আমল করেন না- এদের মানবতা আছে এমন কথা বলা কি সঙ্গত হবে?
এরা তো রাসূলে পাকের (সাঃ) জীবনের মূল নীতিটিই ভঙ্গ করেছেন, রাসূলের আদেশ পালন তো দূরের কথা।
অথচ আল্লাহ পাক উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন , তোমাদের রাসূল তোমাদের যা আদেশ করেন তা মান্য কর-তাহলে পাবে অনন্ত জীবনের অধিকার। আর এমন ব্যক্তির অন্তরেই আল্লাহ স্বয়ং স্থান করে নেন- আর এভাবেই সে মানুষটি অন্তহীন বৈভবের অধিকারী হয়-মর্যাদার অধিকারী হয়। সে মর্যাদার অধিকারী হতে হলে মানুষকে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হবে।
সে সংগ্রাম মানুষের নিজের সঙ্গে সংগ্রাম। এ জন্যেই তো কোরআনে ৭২ স্থানে বলা হয়েছে-লায়াল্লাহুম ইয়াতাফাক্কারুন। ধ্যান করার কথা, চিন্তা করার কথা বলা হয়েছে বার বার। কিসের ধ্যান? পরমাত্মার ধ্যান- নিরাকার পরমাত্মা বার বার রাসূলের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে ওঁর হাতে হাত দিলে আমার হাতে হাত দেওয়া হয়। ওঁকে দেখলে আমাকে দেখা হয়। সুতরাং, জীবনকে নির্মাণ করতে হবে সুন্দরের আদর্শে- আর সে সুন্দর হচ্ছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)।
লেখাটি-হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরির (রহ) সঙ্গে ধর্ম ও দর্শনকেন্দ্রিক কথোপকথন- “সংলাপ সমগ্র” থেকে নেয়া।
এসি