ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মানবদেহে ঢুকছে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৬, ২৬ আগস্ট ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য মানুষ দুধ, মাছ, মাংস, সবজি ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী? আপনি যা খাচ্ছেন তাতে নাকি রয়েছে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি। গবেষণার ফলাফল তাই-ই বলছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল) গাভীর খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেট-জাত দুধ নিয়ে একটি গবেষণা জরিপের কাজ চালিয়েছে।

গবেষণায় যে ফলাফল উঠে আসে তাহলো গাভীর দুধে (প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া) সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন অণুজীবও। একই সঙ্গে প্যাকেট-জাত গাভীর দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত।

এনএফএসএলের এই গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লুৎফুল কবির। তিনি বলেন, যেসব উপাদান পাওয়া গেছে, এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদানই বেশি। টেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লোক্সাসিন, সিপ্রোসিন ও আফলাটক্সিন অ্যান্টিবায়োটিক। এগুলো সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়ার অর্থ হল এগুলো যেকোনো বয়সী মানুষের শরীরে ঢুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, যেসব কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিসট্যান্স হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

- নির্দিষ্ট সময়মাফিক অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া বা প্রয়োগ না করা,
- প্রেসক্রিপশন ছাড়া ইচ্ছামাফিক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা এবং
- বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করা।
যেসব খাবার থেকে মানবদেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করতে পারে 

এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক  লুৎফুল কবির বলেন, আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাচ্ছি তার অনেকগুলো থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন-

• মুরগীর মাংস
• গরু, ছাগল বা খাসীর মাংস
• দুধ এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার
• চাষের মাছ (এসব মাছের রোগ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়)
• শাক-সবজি (অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় না তবে কীটনাশক দেওয়া হয়)

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এখনকার অধিকাংশ পশুখাদ্যে, গো-খাদ্যে, পোল্ট্রি ফিডে অ্যান্টিবায়োটিক থাকে। আর এসব প্রাণীর দেহে অ্যান্টিবায়োটিক থাকা অবস্থায় এর মাংস খাচ্ছে মানুষ। এসব খাদ্যে উচ্চ মাত্রার মার্কারি এবং ক্রোমিয়ামও থাকে। যা খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে চলে যাচ্ছে। এমনকি মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে তা বাচ্চার দেহেও যাচ্ছে।

কতটা উদ্বেগের?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েক বছর আগে থেকেই জানাচ্ছে বিশ্বে যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয় তার অর্ধেকই ব্যবহৃত হয় পশু উৎপাদনে। আর মানুষের জন্য তা বয়ে আনছে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

পশু খাবার উৎপাদনকারীরা বলছে এতে গবাদি পশু সুস্থ থাকবে। আর খামারিরা বিষয়টি না বুঝেই তাদের পশুকে এসব খাবার কিনে খাওয়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা একে ব্যাখ্যা করছেন 'নীরব মহামারী' হিসেবে। মানুষ যখন এসব উৎপাদিত গরু, মুরগী বা মাছ খায়, তখন খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে এসব অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু প্রবেশ করে। এরপর মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন অ্যান্টিবায়োটিক খায়, এই ওষুধ শরীরে আর কাজ করে না।

কিভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?

বিএসএমএমইউর অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, খাবার উৎপাদনের প্রক্রিয়াতে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ক্রেতার কাছে বিক্রি বা খাওয়ার অন্তত ১৫ দিন আগে গরু, মুরগি ও মাছে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সেটা পারলেই মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ঢুকতে পারবে না। তার জন্য নজরদারিও দরকার।

তিনি মনে করেন, যেভাবে ফরমালিন ফ্রি খাবার হচ্ছে সেভাবে উদ্যোগ নিলে এই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ বন্ধ করা সম্ভব হবে। 

উৎপাদন প্রক্রিয়াতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধ করতে হবে। সাধারণ মানুষের সচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে মূল কাজটি রাষ্ট্রকেই করতে হবে। রাষ্ট্র উদ্যোগী হলে খাবারের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত যেমন হবে তেমনি খাদ্যদ্রব্যে অ্যান্টিবায়োটিকও থাকবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লুৎফর কবির বলেন, পরিস্থিতি আতঙ্ক তৈরির মতো নয় আবার হেলাফেলা করাও যাবে না। তবে সচেতন হতে হবে। একটা সময়ে সরকারি পর্যায়ে ফরমালিন নিয়ে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং যার ফলে সেটি বন্ধ হয়েছে।

এভাবে পশু-প্রাণীর খাদ্যের ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হলে যেসব স্থান থেকে তারা অ্যান্টিবায়োটিক সংগ্রহ করে সেসব স্থান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর মনিটরিংয়ের কাজটি করতে পারে।

আর ব্যবসায়ীদের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তারা যাতে পালিত পশু-প্রাণীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধ করে। তবেই এই ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব থেকে মানুষকে বাঁচানো সম্ভব।

তথ্যসূত্র : বিবিসি

এএইচ/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি