ঢাকা, রবিবার   ১২ জানুয়ারি ২০২৫

মানবপাচারের সন্দেহে ভারতীয় তিনশো যাত্রীসহ বিমান আটক ফ্রান্সে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

একটা গোটা বিমান ভাড়া করে তিনশোরও বেশি ভারতীয়কে পাচার করার জন্য নিকারগুয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে সন্দেহ হওয়ায় যাত্রীসহ বিমানটিকে আটক করা হয়েছে ফ্রান্সে। ওই বিমানের দুজনকে হেপাজতে নিয়েছেন তদন্তকারীরা।

ফরাসি সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, ওই বিমানটিতে মানব পাচার করা হচ্ছিল, এরকম সন্দেহ করেই বিমানটিকে আটক করা হয়েছে প্যারিস থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরের ভেট্রি বিমানবন্দরে।

নিরাপত্তা কর্মীরা বিমানটি থেকে দুইজনকে হেফাজতে নিয়েছেন আর তার পরেই পুরো বিমানবন্দরই সিল করে দেওয়া হয়েছে।

বিমানটিতে করে ওই ভারতীয় নাগরিকদের কেন নিকারাগুয়ার রাজধানী মানাগুয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

ফরাসি সংবাদপত্র ‘ল্য মঁদ’ লিখেছে যে ওই বিমানবন্দরে জ্বালানি ভরার জন্য থেমেছিল বিমানটি। তারপরেই গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে বিমানযাত্রীরা মানব পাচারের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। তখনই কর্তৃপক্ষ বিমানটিকে আটকিয়ে দেন।

ভারতীয় দূতাবাস পৌঁছেছে যাত্রীদের কাছে
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করার জন্য যাত্রীরা মধ্য আমেরিকা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

ফ্রান্সে ভারতীয় দূতাবাস ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে।

দূতাবাসের তরফ থেকে একটি বার্তায় জানানো হয়েছে, “দুবাই থেকে নিকারাগুয়ার দিকে যাওয়া বিমানটিতে মূলত: ভারতীয় বংশোদ্ভূত যাত্রীরা আছেন।

"মার্ন অঞ্চলের ভেট্রি বিমানবন্দরে যান্ত্রিক কারণে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। দূতাবাস থেকে একটি দল সেখানে পৌঁছেছে এবং যাত্রীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য কন্সুলার অ্যাক্সেস পাওয়া গেছে। দূতাবাস বিষয়টি তদন্ত করছে," এক্স হ্যান্ডেলে (আগেকার টুইটার) জানিয়েছে ফ্রান্সের ভারতীয় দূতাবাস।

বিমান সংস্থা বলছে তারা নির্দোষ
যে বিমানটিকে আটক করা হয়েছে, সেটি রোমানিয়ার সংস্থা লিজেন্ড এয়ারলাইন্স থেকে ভাড়া নেওয়া। বিমান চলাচল সংক্রান্ত তথ্যের ওয়েব সাইট ‘ফ্লাইটরাডার’ থেকে জানা যাচ্ছে যে লিজেন্ড এয়ারের মাত্র চারটি বিমান আছে।

নিজেকে ওই সংস্থাটির আইনজীবী পরিচয় দিয়ে লিলিয়ানা বাকায়োকো এক ফরাসি সংবাদ চ্যানেলকে জানিয়েছেন যে ওই সংস্থাটি ফরাসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন যে গোটা ঘটনায় ওই সংস্থাটির কোনও ত্রুটি নেই । তবে তাদের বিরুদ্ধে যদি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়, তবে লিজেন্ড এয়ারলাইন্স আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

কতদিন আটক রাখা যায় ফ্রান্সে?
এএফপির খবরে ওই আইনজীবীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, একজন গ্রাহক, যার নাম তিনি বলতে রাজী হন নি, তিনি বিমানটি ভাড়া করেছিলেন এবং প্রত্যেক যাত্রীর পরিচয়পত্র যাচাই করার দায়িত্ব তারই ছিল। বিমানটি রওনা হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে যাত্রীদের তথ্য এয়ারলাইন্সকে জানিয়ে দেন ওই গ্রাহক।

মিজ. বাকায়োকো আশা প্রকাশ করেন যে বিমানটি কয়েক দিনের মধ্যেই উড়ে যেতে পারবে।কোনও বিদেশি নাগরিক ফ্রান্সে অবতরণ করলে এবং তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে বাধা দেওয়া হলে সীমান্ত পুলিশ সেই ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে চার দিন পর্যন্ত আটক রাখতে পারে।

বিচারকের অনুমোদন সাপেক্ষে ফরাসি আইন অনুযায়ী ওই সময়সীমা আট দিন পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে, তারপর ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে আরও আট দিন এবং সর্বোচ্চ ২৬ দিন পর্যন্ত কোনও বিদেশি নাগরিককে আটক রাখা যায়।

তদন্তে ফ্রান্সের বিশেষ অপরাধ দমন শাখা
‘ল্য মঁদ’ জানিয়েছে ফ্রান্সের জাতীয় সংগঠিত অপরাধ দমন সংস্থার অধীন ‘জুনালকো’ বিভাগ এই বিষয়ের তদন্ত-ভার হাতে নিয়েছে।

জুনালকোর কর্মকর্তারা বিমানটির প্রত্যেক যাত্রীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছেন। দুজনকে বিমান থেকে নামিয়ে হেপাজতে নেওয়া হয়েছে।

ফরাসি কর্মকর্তারা বলছেন বিমানটি ফ্রান্সে নামার পরে প্রথমে যাত্রীদের নামতে দেওয়া হয় নি।

কিন্তু শুক্রবার রাতে ভেট্রি বিমানবন্দরের মূল টার্মিনাল ভবনে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

পুরো বিমানবন্দরটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ।

ইউরোপ, আমেরিকায় কড়া হচ্ছে অভিবাসন আইন
ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাদের অভিবাসন আইন যথেষ্ট কড়া করতে শুরু করেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে এবং আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে গৃহযুদ্ধের শিকার হয়ে বহু মানুষ বেআইনি পথে ইউরোপ আমেরিকায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

এঁদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

এর ফলে মানব পাচারকারীদের সক্রিয়তাও বেড়েছে। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা মানব পাচারকারীদের এই চক্র বেআইনি পথে ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষকে পৌঁছিয়ে দেওয়ার কাজ করে থাকে।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশই বিদেশীদের প্রবেশের ব্যাপারে কড়াকড়ি করতে শুরু করেছে।

যেমন যুক্তরাজ্য জানিয়েছে যে ভবিষ্যতে পরিবারের কোনও সদস্যকে অন্য দেশ থেকে নিয়ে আসতে হলে বার্ষিক রোজগার কমপক্ষে ৩৮,৭০০ পাউন্ড হতেই হবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানিয়েছেন যে এই নিয়ম ২০২৫ সালের গোড়া থেকে চালু হয়ে যাবে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের নিয়ম হলো পরিবারের কোনও সদস্যকে সেদেশে নিয়ে যেতে গেলে বার্ষিক রোজগার ১৮,৬০০ পাউন্ড থাকতে হয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি