ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে’ (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৫৪, ১০ জুন ২০১৮ | আপডেট: ২৩:০২, ১০ জুন ২০১৮

২০১৮-১৯ সালের বাজেটে জনগণের দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন ও প্রক্রিয়ার বিশ্লেষণ নিয়ে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন ও ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে আজ রোববার ইআরএফ কনফারেন্স হলে “জাতীয় বাজেট ২০১৮-১৯ পর্যালোচনা: সাংবাদিকবৃন্দের সাথে মতবিনিময়’ শীর্ষক একটি সভার আয়োজন করে। গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন এর সহ-সভাপ্রধান আসগর আলী সাবরীর সঞ্চালনায় বাজেট বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন গবেষণা সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা।

গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এ.আর. আমান সভার সূচনায় বলেন, বাজেটের আকৃতি বেড়েছে সেটা আপাত: দৃষ্টিতে ভাল সংবাদ মনে হতে পারে; কিন্তু জনচাহিদাসম্পন্ন খাতে বাজেট বেড়েছে কি না সেটা বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন সাধারণ বেকারের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত ও তরুন বেকারের জন্য অর্থমন্ত্রী বাজেটে কোন বিনিয়োগ কৌশল দেননি, যা ইনক্লুসিভ গ্রোথের পথে অন্তরায়।

মনোয়ার মোস্তফা তার উপস্থাপনায় বলেন,  মেগা প্রকল্পের ক্রমাগত ব্যয় বৃদ্ধির কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য-পুষ্টিসহ সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন খাতে বাজেট প্রতিবছর কমছে। যার ফলশ্রুতিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে না। একইসঙ্গে আমাদের সমাজে আয় বৈষম্য বাড়ছে। সরকারি হিসাবে শীর্ষ  ৫ শতাংশ মানুষের আয় সর্বনিম্ন ৫ শতাংশের এর আয়ের চেয়ে ১২১ গুন বেড়েছে। ২০১০ সালে এ ব্যবধান ছিল ৩১.৫ গুন। বিশ্লেষণ শেষে তিনি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা, জনকল্যাণ ও সামাজিক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাসের জন্য উন্নয়ন ও বাজেটের বিকেন্দ্রীকরণের মতো ৩টি কৌশলগত সমাধানের প্রস্তাব করেন।

অথনীতিবিদ এমএম আকাশ বলেন, বাংলাদেশের আজকের যে উন্নয়ন তা জনগণের কঠোর পরিশ্রমের ফল, এখানে সরকারে বিশেষ কোন কৃতিত্ব নেই। বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি, তৈরি পোশাক খাত, প্রবাসী আয় ও এসএমই খাতের অবদান এখানে মূখ্য । বর্তমান সরকার এখন যে অবকাঠামোভিত্তিক উন্নয়ন দর্শন চিন্তা করছে তা আদৌ সফল হবে না যদি কমর্সংস্থানের জন্য দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা না যায়। আর দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে দরকার মানসম্মত সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা,  স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ।  কিন্তু সরকার করছে তার উল্টোটা। তাই এ বাজেট কর্সংস্থানমুখী নয় বরং মেগা প্রজেক্টমুখী বলা যেতে পারে।

ইআরএফ সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর আরও জোর দিতে হবে। দেশের শিক্ষিত মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদের কোনো বিকল্প নেই। আরও দক্ষ মানবসম্পদ দরকার।

ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম-এর সহ সভাপতি সালাহ উদ্দিন বাবলু বলেন, আমরা যদি স্বর্ণের বাজার মূল্যের সঙ্গে বাজেটের আর্থিক মূল্যের হিসেবে করি তাহলে দেখবো যে, বঙ্গবন্ধু যে বাজেট দিয়েছিলেন সেই তুলনায় বর্তমান বাজেটের পরিমান অনেক কম। আমরা এই বাজেটে বঙ্গবন্ধুর দর্শনের বা আদশের প্রতিফলন দেখতে পাই না। জনগণের করের টাকায় ব্যাংকিং খাতের দায়শোধের সমালোচনা করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম। স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দের ভোক্তার যে হিস্যা সেটা কিন্তু ১ টাকাও বাড়েনি, যা বাড়ে তা রাজস্ব বাজেট তথা বেতন, ভাতাদি, প্রশাসনিক ব্যয়ে সিংহভাগ চলে যায়। অন্যদিকে সামগ্রিক বাজেটের আকার বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ‘আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার’ আরো বেড়ে যাবে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। বতর্মানে ১০০ টাকার চিকিৎসায় জনগণ নিজে পকেট থেকে গড়ে ৬৬ টাকার বেশি খরচ করে।

বিজনেস ইনিসিয়েটিভ লিডিং চেঞ্জ (বিল্ড)-এর সিইও ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশী সাইকেলের বাজার কেবল তৈরি হচ্ছে এমন সময় ব্রেকিং সিস্টেম ও শ্যাডেল-এর ওপর হঠাৎ করে ১৫ শতাংশ কর আরোপনকে বিকাশমান বাইসাইকেল শিল্পের ওপর নেতিবাচক হস্তক্ষেপ । একইসঙ্গে তিনি আমাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় ধারাবাহিকতার অভাবকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে বলেন যে, তাড়াহুড়ো করে এডহক ভিত্তিতে সরকার বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার জন্য সামনে বিপদে পড়তে হবে। মাত্র এক বছরে মাথায় পরিবেশ বান্ধব শিল্পে ২ শতাংশ কর বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করার সমালোচনা করেন তিনি। আয়মুক্ত করের সীমা বাড়ানোর ওপর জোড় দেন তিনি। তিনি বলেন, যানজট নিরসনে কোনো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেই, অথচ এর কারণে আমরা জিডিপি হারাচ্ছি।

জিটিভি-র চিফ রিপোটার রাজু আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের ৩০ শতাংশ ধনী মানুষ দেশের মোট সম্পদের ৬৪ ভাগ ভোগ করছেন। অন্যদিকে আঞ্চলিক বৈষম্যও বাড়ছে উল্লেখ করে বলেন যে বাজেটে এই বৈষম্য নিরসনের কোন পদক্ষেপ লক্ষনীয় নয়। যারা দারিদ্র সীমার ঠিক ওপরে বসবাস করছেন যে কোন পারিবারিক বা আর্থ-সামাজিক সংকট বা দূর্যোগের ঝুকির কারণে তারা আবার দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে আসতে পারেন।

গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন সভাপ্রধান ড. প্রতিমা পাল মজুমদার বলেন, অর্থমন্ত্রীর ভাষণ অনুযায়ী স্কুলে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য টয়লেট-এর পরিকল্পনাকে তিনি সাধুবাদ জানান। অন্যদিকে ৫ হাজার স্কুলে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগেকে নারী শিক্ষার জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন।

 এসএইচ/

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি