ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

‘মানুষ হতে হলে স্বচ্ছ থাকিস’

প্রকাশিত : ২১:৫৯, ১৭ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৪:৪৫, ১৯ জুলাই ২০১৮

ছোটবেলায় বাবার কাছে আবদার থাকতো, বাজারে গেলে সঙ্গে নিয়ে যাবার। সকাল কিংবা বিকেল, যখনই বাবা সময় পেতো বাজারে যাবার, তখন ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতন-চল বাপ, বাজারে যাই।

এলাকার বাজারে (পিরোজপুর) বটগাছের নিচে একটা ঝাপখোলা সেুলন ছিলো। মাছের বাজারে কাদা পানি আর ভীড় এড়াতে বাবা সেই সেলুনে আমাকে বসিয়ে রাখতেন। একটু বেশি দেরী হলে আমার বুক ধুকপুকানী বাড়তো। অস্থির হয়ে সেলুন ছেড়ে মাছের বাজারে খুঁজতে যেতাম বাবাকে।

দুই হাতে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে বাবাকে দেখতাম নুয়ে হাঁটতেন। আমি তখন ছোট হলেও একটা ব্যাগ অন্তত হাতে নিতাম। বাপবেটায় বাসায় ফিরতাম মহানন্দে। ঘামে ভেজা সাদা শার্ট খুলে রেখে মাছ মায়ের হাতে মাছ কাটা দেখতেন।

আমার বাবা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ছিলেন জজকোর্টের সিনিয়র প্রসেস সার্ভার। বাবার কর্মস্থল জজকোর্টে তখন রীতিমতো মেলা। উকিল, মক্কেল, পুলিশ আসামী সব মিলিয়ে সরব কৃষ্ণচূড়া মোড় এলাকা। পাশেই স্কুল। ক্লাস শেষ করে বাবার কাছে যেতাম দুপুরবেলা। কখনো বা সকালেই।

রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে ছোট্ট মাঠে তখন কাসেম গারুলীর সাপখেলা বেশ জনপ্রিয়। মস্ত অজগর আর ফনা ধরা কাল সাপের বাক্স এখন রুপকথার মতো। তখন বাবার দেওয়া সদ্য ছাপা দুই টাকার নোটে লাখ টাকার খুশী মিলতো।

টাকা দিয়ে বলতেন, -ভাঙিস না।’ হোটেল থেকে সিঙাড়া নিয়ে যা।” টাকাটা পকেটেই থাকতো। বিছানার নিচে জমে থাকতো নতুন টাকা।

বাবার প্রিয় অনেকগুলো ফাউন্টেন পেনের দু’টি আমাকে দিয়েছিলেন। কালো কালি দিয়ে তিনি লিখলেও আমাকে কিনে দিতেন লাল আর সবুজ কালি। ছবি আঁকার জন্য একবার কিনে দিলেন চীনা জলরঙের বাক্স।

বাবা নেই। ষোল বছর ধরে বাবার অসীম শূন্যতা। সেই বাজার, জজকোর্টের আঙিনা কিংবা ফাউন্টেন পেন আমাকে বাবার স্মৃতিতে ফিরিয়ে নেয়। বাবা সবসময়ই সাদা শার্ট পড়তেন। বলতেন,-“সাদা পবিত্রতা আনে মনে। নিজেকে গড়তে হলে মনের শুভ্রতা থাকা জরুরি। মানুষ হতে হলে স্বচ্ছ থাকিস।”

বাবারা শুধু ভালোবাসতেই জানে, কখনো বলতে পারি না-ভালোবাসি।

ভালোবাসি বাবা। ভালো থেকো বাবা। বাবা দিবসে পৃথিবীর সব বাবা’র জন্য ভালোবাসা।

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার, একুশে টেলিভিশন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি