ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

মানুষের জীবনমান উন্নত করা আ.লীগের নীতি : প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:১৯, ৯ নভেম্বর ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মেহনতি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করাই আওয়ামী লীগের নীতি। এ নীতি নিয়ে আমরা সরকার পরিচালনা করি। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের ১৩তম জাতীয় কাউন্সিল উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলন উদ্বোধন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, ‘জাতির পিতা একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশেকে পূর্নবাসন করতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন।

সেই সব কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের ৮২ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করত। জাতির পিতা তা কমিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করেছেন। তিনি বন্ধ হওয়া শিল্প-কারখানা চালু করেছিলেন। সর্বোপরি শ্রমিকেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধু কাজ করেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন দেশে ১৯টি জেলা ছিল, সেখান থেকে ৬০ জেলায় উন্নিত করে তৃণমূলের মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে বঙ্গবন্ধু কাজ করেছিলেন। অর্থনীতির দ্রুত বিকাশের লক্ষ্যে দেশের সব শ্রেণির মানুষকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ ঐক্যের নাম বাকশাল, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ। বাকশাল ছিল ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম কিন্তু বাংলাদেশের দুভাগ্য যে বঙ্গবন্ধু কাজ শেষ করতে পারলেন না।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কি হারিয়েছে? বাংলাদেশের মানুষ হারিয়েছে তাদের ভবিষৎ, হারিয়েছে সঠিক ইতিহাস। বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল আবার হত্যা, খুনে। অস্ত্রের মাধ্যমে জনগনকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।’

এ সময় আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর একটি উদ্ধৃতি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত: আমি আজ শোষিতের পক্ষে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আগষ্টের পর ৭৫ থেকে ৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আবারও বাংলাদেশকে পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে। মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষ ভরসা পায়। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই জনগনের জন্য কাজ করেছে। ২০০৮ সালে আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছি। এরপর এর ধারাবাহিতা থাকায় দেশের মানুষ এখন উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে। দারিদ্রের হার ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। শুধু কৃষি নয় শিল্পায়নের দিকেও আমরা নজর দিয়েছি। শান্তি-উন্নয়ন-উৎপাদন এই তিন মিলে শিল্পায়ন। শ্রমিকদের কল্যাণে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। শ্রমিকদের কল্যাণে আমরাই তহবিল গঠন করেছি। এই তহবিল থেকে তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য সহায়তা দেওয়া হয়। চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়াও তাদের সন্তানদের আলাদাভাবে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দেওয়া হয়। শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য আইন করেছি। জাতীয় শ্রম নীতির মাধ্যমে আমরা তাদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছি। মজুরি নির্ধারণ করেছি। শ্রমিকদের জন্য রেশনিং পদ্ধতি চালু হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষদের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র করেছি। চা শ্রমিকদের নাগরিকত্ব ছিল না। জাতির পিতা তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন।’

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য এ ব্যাংক কাজ করছে। কাউকে যেন তার জমি, বাড়ি বন্ধক রেখে নিঃস্ব হয়ে বিদেশে যেতে না হয় সে জন্য এ ব্যাংক করে দিয়েছি। শুধু তাই নয় বিদেশে যারা যাচ্ছেন তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি।’

কর্মসংস্থান ব্যাংক বেকারদের বিনা জমানতে ঋণ দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিতরা এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কর্মক্ষম হতে পারে। আমরা চাই নারী উদ্যোক্তা গড়ে উঠুক। একদম গ্রাম থেকে নারী উদ্যোক্ত উঠে আসুক। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থান ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি শিল্পকে প্রসার করতে। তবে কৃষি জমি নষ্ট করে নয়।’

এদিকে বিকেল ৩টায় সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সংগঠনের নতুন কেন্দ্রিয় কমিটি ঘোষণা করা হবে। সম্মেলনে সারাদেশের ৭৮টি জেলা কমিটির প্রায় ৮ হাজার কাউন্সিলর এবং ডেলিগেট সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ১২ অক্টোবর দেশের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শ্রমিক নেতা শুক্কুর মাহমুদ সংগঠনের সভাপতি এবং সিরাজুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এমএস/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি