মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ : মেদভেদেভ
প্রকাশিত : ১১:২১, ৩ আগস্ট ২০১৭
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রায় বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর প্ররোচনা হিসেবে দেখছে মস্কো। রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, বিলটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সই করলেন। এতেই স্পষ্ট হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের গুরুত্ব আসলে কতটা। খবর বিবিসির।
২০১৬সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের জবাব দিতেই মার্কিন কংগ্রেস এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। বুধবার রাতে রাশিয়ার ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের বিলে অনেকটা বাধ্য হয়েই স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরপরই ফেসবুকে দেয়া এক বিবৃতিতে মেদভেদেভ বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নের আশার সমাপ্তি ঘটল। যুগ যুগ ধরে এর জের টানতে হবে যদি না বিস্ময়কর কিছু ঘটে।
এই নিষেধাজ্ঞায় সাক্ষরে ওবামার বাধ্য করার সমালোচনা করে মেদভেদেভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রথম প্রক্রিয়া এটি। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে গত নিষেধাজ্ঞা বিল পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫৫ জন কূটনীতিককে মস্কোর দূতাবাস ছাড়ার নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ব্লাদিমির পুতিন।
ট্রাম্পের আপত্তি সত্ত্বেও কংগ্রেসে পাশ হওয়া এই বিলটিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমতি দানের স্বাক্ষর করতে গিয়ে, বিলটিকে তিনি `ফ্লড` বা `ত্রুটিযুক্ত বিল` বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, নতুন এই বিলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আসলে `পূর্ণমাত্রায় বাণিজ্যকেন্দ্রিক যুদ্ধ` শুরুর প্ররোচনা দিচ্ছে।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পুরোপুরি অপদস্থ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস গত সপ্তাহে প্রায় সর্বসম্মতভাবে রাশিয়ার ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের বিল পাশ করে। এই বিল সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হওয়ায় নাখোশ ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তাই অনেকেই মনে করছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিলটিতে স্বাক্ষর করার সময়ে শেষ মুহূর্তে কোনো একটা অজুহাতে ট্রাম্প হয়তো তাতে স্বাক্ষর নাও করতে পারেন।
কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রুশ-অবরোধ বিলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নিজেকে আরো সমালোচিত করে তুলতে চাননি বলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো এই বিলে স্বাক্ষর করেছেন বলেও মনে করছেন অনেকেই।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ভূমিকা এবং ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার ওপর এই নতুন অবরোধ এলো।
গত মাসেই ট্রাম্প-পুতিনের প্রথম বৈঠক হলো জার্মানিতে জি-৭ সম্মেলনে।
এর পর দুই দেশই তাদের সম্পর্ক উন্নয়নে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা বিল আবারো উত্তেজনার পারদই বাড়িয়ে দিল বলেও মনে করছে কেউ কেউ।
তবে, জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার পরেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
তিনি বলছেন, "আমি আজকাল সত্যিই এই ভেবে বিস্মিত হই যে, দুনিয়ায় এমন কোনো ইস্যু কি আছে যেটি নিয়ে আপনি রাশিয়াকে অভিযুক্ত করতে পারবেন না! কিন্তু আমরা খিটখিটে শিশুর মতন নই এবং চারিদিকে যা কিছু ঘটে তার সকল কিছু দিয়েই আমরা বিরক্ত বোধ করি না। আমাদের সহযোগীদের সাথে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও, আমরা কাজ করতে উপায় খুঁজবো"।
"আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে খুশী করতে চাই বা ওই বিলে কী আছে এইসবের জন্য নয়। বরং আন্তর্জাতিক সমাজের কল্যাণের নিমিত্তে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র, আমরা একত্রে কাজ করবো এটা বোঝাতে যে, আমরাও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজ করতে পারি" বলেন রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া ।
মার্কিন নির্বাচনে রুশ-হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ এনে এই অবরোধ দেয়া হলো, সেই অভিযোগ শুরু থেকেই নাকচ করে আসছে রাশিয়া।
নতুন এই অবরোধ বিলের মাধ্যমে রাশিয়ার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধেও অবরোধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের ওপর আরোপ করা এই নিষেধাজ্ঞাটিকে পরমাণু চুক্তির লংঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে ইরান।
নিষেধাজ্ঞার জবাবে ইরান বলেছে, এর মাধ্যমে অ্যমেরিকা পরমাণু চুক্তির লঙ্ঘন করেছে।
//এআর
আরও পড়ুন