মায়ের জন্য এলিজি
প্রকাশিত : ১৪:৫৩, ১ আগস্ট ২০২৪
গোরস্তানের সুনসান নীরবতায় এক নির্মল প্রশান্তি আর স্নিগ্ধতায় ভরা মা'য়ের মুখখানি।
কোমল বিছানা চিরতরে ছেড়ে, চার বেহারার পালকি চড়ে- কবরের বিছানায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন।
তখনও সেই ঘুমের মধ্যে কী জীবন্ত এক অবয়ব।
দম আটকে রাখার পর যেন দীর্ঘশ্বাসের মুক্তিতে নির্ভার শরীর।
অসুস্থতায়, যন্ত্রণায় কোচকানো ভ্রযুগলও সেই মুক্তিতে টানটান, সজীব।
বিষের তীব্রতায় কপালে, নাকে, গালে আর কানের কালচে দাগও বিলীন হয়ে-
নিমিষে ফিরে পেলো আমার শৈশবে দেখা হলুদাভ গায়ের রঙ। সেই স্নেহমাখা প্রশ্রয়ের নির্মল হাসি।
কর্পূর আর সুরমার সুবাস প্রতি নিঃশ্বাসে সুগভীর থেকে নিঃশব্দে প্রবেশ করে বাম অলিন্দে।
রক্তের প্রবাহ বন্ধ; শীতল শরীর অস্বাভাবিক ভারী,
তবুও জমে শক্ত হয়নি তখনও।
নরম, কোমল, স্নিগ্ধ, নির্মল, নির্মোহ।
'যেন মৃত্যুর মতো পবিত্রতার প্রতীক হয়ে, মৃত্যুর মতো নিগূঢ়তম সত্যকে অসীম সাহসে বুক পেতে নিয়ে,-
মৃত্যুর মতো আনন্দময় অনন্তযাত্রার অপেক্ষার অবসান হয়েছে'।
দু'হাতে জড়িয়ে বুকের মধ্যে আগলে রাখা-
আমাদের অকৃত্রিম উষ্ণ ছায়াটুকু, আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘপুঞ্জের মতো ভাসতে ভাসতে উধাও হলো।
আমরা অনাথ থেকে অনাদীকালের এতিম হলাম।
'আষাঢ়ের মেঘমালা' কাতারে কাতারে আশুরার কাফেলা হয়ে- ভেসে বেড়িয়ে তাড়া দিয়েছে 'দাফনের'। আকস্মিক রৌদ্রতাপে সেই কালো মেঘই ছায়ার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে 'জানাযায়'; কী গভীর মমতায়!
'সহজ মানুষ মা'য়ের অব্যক্ত কথামালা বাষ্প হয়ে'
উড়ে চললো অনন্তের সিঁড়ি বেয়ে, আলোকবর্ষ দূরে।
২২ বছর অদেখা-স্পর্শহীন বাবার পাশেই স্থায়ী হলো নিথর' নিস্তব্ধ দেহের ঠিকানা। আর 'রুহ' বিচ্ছিন্ন হয়ে-
সব অভিমান-অভিযোগ-অসহায়ত্বের উর্ধ্বে;
সব সম্পর্ক-সম্পদ-সৃষ্টি-স্পর্শের নাগালের বাইরে;
ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর একজন অতিথির
যাপিত বাস্তবতার গর্ভে সৃষ্টি সব আপন-পর ভেদ ছিন্ন করে-
সব চাওয়া-পাওয়া আর পাওনার লেশটুকুও-
মুঠো খুলে ছেড়ে দিয়ে যাওয়ার মতো উদারতায়
মা এখন অনবদ্য-অসীমের অভিযাত্রী।
মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত আযানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে কবরস্থানে মুর্দারের রূহের প'রে মিশে যায়।
আর দীর্ঘদিনের সঙ্গী বাবার সঙ্গে মায়ের পুনরায় দেখায়- দু'জন মিশে যায় মাটির সাথে।
মায়ের রেখে যাওয়া অসীম-অঢেল 'ভালোবাসা' মুগ্ধতায়-বিস্ময়ে হারানোর শোক ভুলিয়ে দেয় নিমিষে।
১৭ জুলাই ২০২৪ || ২রা শ্রাবণ ১৪৩১ || ১০ মহররম ১৪৪৬ || বুধবার, পিরোজপুর