মায়ের দোয়ায় আনিসুলের সাফল্য
প্রকাশিত : ১৬:৪৩, ২ ডিসেম্বর ২০১৭
(ফাইল ফটো)
আনিসুল হক অনেকের কাছে একটি সফলতার দৃষ্টান্ত। কিন্তু তার উথান এত সহজ ছিল না। বার বার হোঁচট খেয়েছেন। পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। দাঁড়ানোর সেই গল্পগুলো এখন তার নিজ গ্রামের মানুষদের মুখে মুখে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে আনিসুল হক বেশ কয়েক বছর বেকার ছিলেন। চাকরি খুঁজতেন। কিন্তু কোথাও কিছু হচ্ছিল না। একদিন তার বাবা ডেকে তাকে ব্যবসা করার জন্য ১৬ হাজার টাকা দেন। এই টাকা তার বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পেয়েছেন। আনিসুল হক এই টাকা নিয়ে পাট সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করতে যান। কিন্তু প্রথম চালানেই ট্রাক ড্রাইভার ও কর্মচারীদের যোগসাজশে সব পাট চুরি হয়ে যায়। এর কিছুদিন পর তার বাবা নিজেকে নিঃস্ব করে ৮০ হাজার টাকা ছেলের হাতে দেন। তিনি সেই টাকা বিনিয়োগ করেন কয়লার ব্যবসায়। কিন্তু হঠাৎ করে কয়লার দর পতন হওয়ায় ব্যবসায় ধস নামে।
তিনি তার সব পুঁজি হারান। বাবা ছিলেন খুব রাগী মানুষ। ছেলের এই অবস্থাকে তিনি বিবেচনাহীন কাজ বিবেচনা করে ছেলের ওপর রেগে যান। আনিসুল হক তখন লড়াইয়ে পরাজিত সৈনিকের মত বাইরে বাইরে একা একা থাকেন। বাড়ি ঘরে তেমন একটা যান না। এই অবস্থায় একদিন তিনি বন্ধুদের পরামর্শে এক মাজারে যান। মাজারের পীর সাহেব তাকে বলেন, "তোমার আসল মাজার তোমার ঘরে। ঘরে গিয়ে ঘরের পীর ধর।" এ কথা শুনে আনিসুল হক অনেকটা উদভ্রান্তের মত এক বিকেলে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ঘোষপাড়া গ্রামে তাদের নিজ বাড়িতে আসেন। মা তখন আছরের নামায পড়ে জায়নামাযে বসা।
তিনি সেই অবস্থায় এসে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বলেন, মা আমাকে বাঁচাও। আমি আর পারছিনা। মা অনেকদিন পর ছেলেকে পেয়ে অঝোরে কাঁদছেন। এক পর্যায়ে দোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ, আমার ছেলেকে তুমি অনেক বড় কর। অর্থ, যশ, ক্ষমতা সব যেন তার পিছনে ছুটে। আল্লাহ মায়ের দোয়াকে উপেক্ষা করতে পারেননি। এর পরে আনিসুল হক আনসার- বিডিপির ইউনিফর্ম সাপ্লাই দেওয়ার অর্ডার নেন। খুব সামান্য পুঁজিতে। তারপর শুধু এগিয়ে চলা। সামান্য কিছুদিনের ব্যবধানে শিল্পপতি সিরাজউল্লাহ সাহেবের সঙ্গে যোগ দিয়ে জড়িয়ে যান মোহাম্মদী গ্রুপে। এর পরের কাহিনী অনেকের কাছে রূপকথা, অনেকের কাছে ইতিহাস। এই গল্প এখন কবিরহাটে বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের শোনান। শুধু মায়ের দোয়াকে পুঁজি করে একজন লড়াই করা মানুষের এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
এসএইচ/