ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

মায়ের মুখ আর দেখা হলো না মোজাম্মেলের

প্রকাশিত : ২২:১৬, ১৭ মার্চ ২০১৯

চার বছর আগে এফআরসিএস পড়তে স্টুডেন্ট ভিসায় নিউ জিল্যান্ডে যান ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহত চাঁদপুরের মেধাবী ছাত্র মোজাম্মেল হক সেলিম মিয়াজি (৩০)। মোজাম্মেল প্রতি সপ্তাহে দেশে গ্রামের বাড়ীতে থাকা মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন। গত মঙ্গলবারও কথা বলেছিলেন তিনি। ‘মা তুমি কেমন আছ? খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করো তো? আগামী রমজানে আমি দেশে আসবো মা’।

কিন্তু মায়ের মুখ আর দেখা হলো না তার। এর আগেই গত শুক্রবার নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের আল নুর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলে এক শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীর নৃশংস হামলায় নিহত হন তিনি।

মোজাম্মেল চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের হুরমহিষা গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান ও জামেনা বেগমের ছেলে। ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হত্যাযজ্ঞের প্রথম দিকে তিনি নিখোঁজ থাকলেও পরবর্তীতে সেখানের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পরিচিতরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে শোকে কাতর স্বজনরা। তার স্বজনরা জানান, ঢাকার একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডেন্টাল বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেড় বছর আগে নিউ জিল্যান্ডে যান মোজাম্মেল হক। তার এফআরসিএস কোর্স শেষ পর্যায়ে ছিল। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।

খাদেরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর হোসেন জানান, হামলাকারীর গুলিতে মোজাম্মেল আহত হয়েছিলেন। হত্যাযজ্ঞের পর ক্রাইস্টচার্চ এলাকার লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে তাকে নিখোঁজ তালিকায় রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি যখন মারা যান তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্রিফ করে বিষয়টি নিশ্চিত করে।

মতলবের ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদুল আলম রিয়াদ জানান, ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহত মেধাবী ছাত্র মোজাম্মেল মার্কস ডেন্টাল কলেজ থেকে বিএসসি ইন ডেন্টিস্ট সম্পন্ন করে উচ্চশিক্ষার জন্য নিউজিল্যান্ডে যান। সেখানে পড়াশুনার পাশাপাশি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। হামলার ঘটনার কথা টেলিভিশনে জানার পরে মোজাম্মেল ওই মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন কিনা তা জানার চেষ্টা করেন তার স্বজনরা। তবে তাৎক্ষণিক তার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেই তথ্য পরে নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে তার স্বজনরা যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে মতলব থানার ওসি, ইউএনও এবং আওয়ামী লীগ নেতারা নিহতের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন।

নিহত ডা. মোজাম্মেল হোসেন সেলিমের মেঝ ভাই মো. শাহাদাত হোসেন মিয়াজী জানান, গত শুক্রবার তার সহপাঠীরা আমাকে মুঠোফোনে ঘটনাটি জানিয়েছেন। সাড়ে ৩ বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ করে আমার ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেন সেলিমকে নিউজিল্যান্ডে পাঠিয়েছি। সে ২০১৫ সালে ঢাকা মিরপুর মার্কস মেডিক্যাল থেকে ডেন্টালে পড়াশুনা শেষ করে। পরে তাকে নিউ জিল্যান্ডে পাঠাই। সে নারায়ণপুর পপুলার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। প্রতি শুক্রবারই আমার সঙ্গে ও মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতো মোজাম্মেল।

মো. শাহাদাত হোসেন মিয়াজী বলেন, ভাইয়ের এফআরসিএস প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। তার আশা ছিল, আরও পড়াশুনা করবে। ভালো চাকরি করবে। নিউ জিল্যান্ড যাওয়ার সময় তার নামে আমরা ব্যাংকে ঋণ করেছিলাম ২০ লাখ টাকা। মনে করেছিলাম, ভাই রোজগার করে পাঠালে তা পরিশোধ করবো। কিন্তু এখন তো ভাইকেই হারিয়ে ফেললাম। ভাইও বলেছিল, পড়াশুনা শেষ হলেই ভালো চাকরি হবে, তখন সব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, হামলার আগে গত সোমবার শেষবারের মতো ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। আগামী রমজানে মাকে দেখতে দেশে আসবে বলেছিল। তিনি ভাইয়ের মরদেহ ফিরিয়ে আনতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজের সময় এক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকে নির্বিচারে গুলি ছুড়ে অনেক মুসল্লিকে হতাহত করে। এরপর পাশের আরেকটি মসজিদে ঢুকে একই কায়দায় গুলি ছুড়ে আরও কিছু মুসল্লিকে হতাহত করে সে। এতে ঘটনাস্থলেই ৪০ মুসল্লি নিহত হন। পরে নিহতের সংখ্যা অর্ধশতে পৌঁছায়। এখনও আহত অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি