মিথ্যা বলেছিলেন টিউলিপ!
প্রকাশিত : ২০:৪৪, ২১ এপ্রিল ২০২৫

‘আমি বাংলাদেশি নই, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি’—২০১৭ সালে এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এভাবেই সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। অথচ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নথি বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক। তাঁর নামে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)। শুধু তাই নয়, তিনি ভোটার হিসেবেও তালিকাভুক্ত এবং দেশে আয়কর রিটার্নও জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ শেখ পরিবারের ১০ সদস্যের এনআইডি ‘লক’ করে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নথিতে দেখা গেছে, টিউলিপের এনআইডি নম্বর ৫০৬৬…৮ এবং এটি ইস্যু করা হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি। এনআইডি অনুযায়ী, তাঁর জন্ম তারিখ ১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এবং ঠিকানা ছিল ধানমণ্ডি ৫৪ নম্বর হোল্ডিং—যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সুধা সদনের ঠিকানা হিসেবেই পরিচিত।
এছাড়া, বাংলাদেশে টিউলিপের দুটি পাসপোর্ট ইস্যুর তথ্যও মিলেছে। প্রথম পাসপোর্টটি (নম্বর: Q…99) ২০০১ সালে লন্ডনে ইস্যু হয়েছিল, যেখানে পেশা হিসেবে লেখা ছিল “শিক্ষার্থী” এবং জন্মস্থান যুক্তরাজ্যের লন্ডন। এরপর ২০১১ সালে বাংলাদেশে বসেই তিনি দ্বিতীয় পাসপোর্ট (নম্বর: AA…4) গ্রহণ করেন, যার ইস্যুর স্থান ছিল আগারগাঁও, ঢাকা। সেই পাসপোর্টে ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছিল তারেক আহমেদ সিদ্দিকের—যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন।
এতসব নথিপত্র সত্ত্বেও নিজেকে শুধুমাত্র “ব্রিটিশ এমপি” দাবি করে তিনি মূলত বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে পরিবারটির বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত শুরু হয়। দুদক জানায়, ঢাকার অভিজাত এলাকায় প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই মামলায় তাঁকে প্রধান আসামি করে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক আলোচনা ও চাপের মুখে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘সিটি মিনিস্টার’ পদ থেকেও পদত্যাগ করেন টিউলিপ। এর পরপরই তিনি দাবি করেন, “বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুরো বিষয়টিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে আমাকে হেয় করার চেষ্টা চলছে।”
তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও করের নথির ভিত্তিতে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক বাংলাদেশি নাগরিক—এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকার সুযোগ নেই।
এসএস//
আরও পড়ুন