ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে : মার্কিন মন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪২, ৪ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:৪৪, ৪ নভেম্বর ২০১৭

‘মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং এটাই সংকটের সর্বোত্তম সমাধান।’

বাংলাদেশ সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী সাইমন হেনশ এ কথা বলেছেন।

শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নিরাপদে তাদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে নিতে হবে। এ ব্যাপারে দেশটির উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমার এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

রাখাইনে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে বিলম্ব করার জন্য মিয়ানমার বাংলাদেশকে দায়ী করার মধ্যে শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন হেনশ।

বাংলাদেশ সফররত এক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি।  

রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে।

সাইমন হেনশ বলেন, `রোহিঙ্গা সমস্যা একটি জটিল ও মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দুই মাসে ছয় লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশ এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে আমরা এখানে এসেছি। সামগ্রিকভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।`

তিনি আরো বলেন, ‘একসঙ্গেবিপুল সংখ্যক মানুষের পালিয়ে আসা নিঃসন্দেহে একটি গুরুতর বিষয়। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে। ঢাকায় আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি। শরণার্থী শিবিরগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি বেদনাদায়ক। মিয়ানমারকে অবশ্যই নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; যাতে রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারে।’

এর আগে শুক্রবার দুপুরে তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি দেখেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি স্কট বাসবি, দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি টম ভাজদা, পূর্ব-এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ডিরেক্টর প্যাট্রিসিয়া মাহোনি।

শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নোয়ার্ট এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সফর শেষে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি একইভাবে মিয়ানমার সফর করবে। দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে তারা রাখাইনে শর্তহীনভাবে ত্রাণ সংস্থা ও সংবাদকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি চাইবে। এছাড়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সসম্মানে ও নিরাপদে রাখাইনে প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা।

গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে ৭২তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে ২৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা (৩২ মিলিয়ন ডলার) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। শনিবারের সংবাদ সম্মেলনেও এর পুনরাবৃত্তি করেন সাইমন হেনশ। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সংকট উত্তরণে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

 

আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমার ১৯৯২ সালের প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে যুক্ত করাসহ কয়েকটি প্রস্তাব রাখা হয়।

বাংলাদেশের প্রস্তাবের কোনো জবাব না দিয়েই গত ৩১ অক্টোরব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেরির জন্য উল্টো বাংলাদেশকে দোষারোপ করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চির দপ্তরের মহা পরিচালক জ তাই।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি