মুখের দুর্গন্ধ দূর করবেন যেভাবে
প্রকাশিত : ১১:০১, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:০৫, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রিয়জন বা বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময়, ইন্টারভিউ বোর্ডে বা অপরিচিত কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মুহূর্তে মুখের দুর্গন্ধ আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে। এজন্য কমে যেতে পারে সমাজে আপনার গ্রহণযোগ্যতা। এমনটা হলে পরিচিত জনও আপনার সামনে এসে কথা বলতে চাইবে না। প্রিয়জনও আপনাকে অবহেলা করতে পারে। আপনি আক্রান্ত হতে পারেন হীনম্মন্যতা বা বিষন্নতায়।
আমরা অনেকেই মুখের দুর্গন্ধে ভোগী। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন কেন মুখ থেকে এমন বাজে গন্ধ হয়? আসলে মুখ গহ্বরে বাসা বেঁধে থাকা হাজারো জীবাণু এই সমস্যার জন্য দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রধানত মুখের খাদ্যকণা থেকে বিপাকীয় পদ্ধতিতে নির্গত জীবাণুসমূহ থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি হয়, যা এই দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ ও এর প্রতিকার নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছেন স্যার সলিমুল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. বিল্লাল আলম।
দুর্গন্ধের কয়েকটি কারণ : প্রতিবার খাবার গ্রহণে মুখের ভেতরে খাদ্য আবরণ দাঁতের ফাঁকে, মাড়ির ভেতর জমে থেকে দন্তমূল সৃষ্টি করে ও তা থেকে মাড়ির প্রদাহ হয়
• মুখের যেকোনো ধরনের ঘা বা ক্ষত
• আঁকাবাঁকা দাঁত থাকার কারণে খাদ্যকণা ও জীবাণুর অবস্থান
• মুখের ভেতরে ছত্রাকের সংক্রমণ
• মুখের ক্যানসার
• ডেন্টাল সিস্ট বা টিউমার
• দুর্ঘটনার কারণে ফ্রেকচার ও ক্ষত
• অপরিষ্কার জিহ্বা
এছাড়া দেহের অন্যান্য রোগের কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, যেমন পেপটিক আলসার বা পরিপাকতন্ত্রের রোগ, লিভারের রোগ, গর্ভাবস্থা, কিডনি রোগ, রিউমেটিক বা বাতজনিত রোগ, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র, হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, গলা বা পাকস্থলীর ক্যানসার, এইডস রোগ, হৃদ্রোগ, মানসিক রোগ, নাক, কান ও গলার রোগ ইত্যাদি।
মুখের ও দাঁতের সমস্যাগুলো দূর করার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায়, তবে দেহের অন্যান্য সাধারণ রোগের উপস্থিতির পরীক্ষাগুলো করিয়ে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া জীবনযাপনের পদ্ধতিতে আনতে হবে কিছু পরিবর্তন।
দুর্গন্ধ দূর করার উপায় : মুখে দুর্গন্ধ হলে ঘরে বসে আপনি যা করবেন-
• একটি পরিষ্কার দাঁতের ব্রাশ ও পেস্ট দিয়ে দাঁতের সব অংশ ভেতরে-বাইরে পরিষ্কার করুন (তিন বেলা খাবারের পর)।
• জিহ্বা পরিষ্কারের জন্য বাজারে স্টেইনলেস স্টিল অথবা প্লাস্টিকের সরঞ্জাম পাওয়া যায়।
• যেকোনো ধরনের মাউথওয়াশ (ক্লোরোহেক্সিডিন-জাতীয়) দুই চামচ মুখের ভেতরে ৩০ সেকেন্ড রেখে ফেলে দিয়ে আবার অল্প গরম লবণ পানিতে কুলকুচি করুন রোজ দুবার সকালে ও রাতে খাবারের পর।
• মুখের ভেতরে একটি লং বা এলাচির দানা রাখুন।
• মূল খাবারের আগে বা পরে প্রতিবার সম্ভব হলে দাঁত ব্রাশ করুন অথবা ভালোভাবে কুলকুচি করে ফেলুন।
• ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য জর্দা, পান ইত্যাদি ত্যাগ করুন।
আরও যা করবেন
১, খাওয়ার পর ব্রাশ করুন :
খাবার খাওয়ার পর আমাদের দাঁতের ফাঁকায় খাবার আটকে থাকে, ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। তাই যাদের মুখে দুর্গন্ধ বেশি হয় তারা খাবারে পরে ব্রাশ করতে পারে।ব্রাশ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
২. বেকিং সোডা :
একটি স্ট্রবেরীর পেস্ট এবং আধা চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এবার এটি দাঁতে পাঁচ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর দাঁত ব্রাশ করে ফেলুন। এটি সপ্তাহে এক থেকে দুইবার করুন।মুখের ভেতরে তৈরি হওয়া অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দুর্গন্ধ দূর তো করেই, সেই সঙ্গে মুখ গহ্বর পরিষ্কার হবে। দাঁত হবে ঝকঝকে সাদা।
৩. খাবার সোডা :
হাফ চামচ খাবার সোডা, পরিমাণমতো পানিতে মেশান। তারপর সেই মিশ্রণটি দিয়ে ভালো করে কুলকুচি করুন। এমনটা করলে দেখবেন বদ গন্ধ একেবারে চলে গেছে।
৪. গ্রিন টি:
মুখের খাবার জমে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। গ্রিন টি খাবার পরে পান করতে পারেন। যা মুখের ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দেয়।
৫. তাজা ফল:
ফাইবারসমৃদ্ধ ফল আপেল, পেয়ারা, গাজর ও আনারস। এই ফলগুলো দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যকণা বের করে আনে। তাই এই ফল বেশি খেলে মুখের দুর্গন্ধ কম হয়।
৬. দুধ:
খাবার গ্রহণের আগে দুধ খেলে মুখের দুর্গন্ধ ভাব কম হয়। বিশেষ করে তেল-মসলা জাতীয় খাবার খাওয়ার আগে দুধ বেশি কার্যকরী।
৭. ধনিয়া ও পুদিনা পাতা:
দ্রুত মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ধনিয়া পাতা, পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে সাময়িক দুর্গন্ধ দূর হয়।
//এআর