ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

মুজিবনগর দিবসের স্মৃতিকথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের স্মৃতিকথা লিখতে বসে কত কথা আমার মানসপটে ভেসে উঠছে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্বপরিকল্পিত `অপারেশন সার্চলাইট` নামে গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ইয়াহিয়া খানের ভাষণ শুনি। ভাষণে তিনি জাতির জনককে `বিশ্বাসঘাতক` আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, `শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আরও আগেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল, আমি ভুল করেছি। দিস টাইম হি উইল নট গো আনপানিস্‌ড।` ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হলে আমরা কেরানীগঞ্জ চলে যাই। কেরানীগঞ্জ পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই রেডিওতে শুনতে পেলাম চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ হান্নানের ভাষণ। বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত `স্বাধীনতার ঘোষণা`র কথা উল্লেখ করে তিনি বলছেন, "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান `স্বাধীনতার ঘোষণা` প্রদান করে বলেছেন, `এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে সেনাবাহিনীর দখলদারির মোকাবেলা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আপনাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে`।"

কেরানীগঞ্জে বোরহানউদ্দিন গগনের বাড়িতে আমরা আশ্রয় গ্রহণ করি। জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানসহ শেখ ফজলুল হক মনি ভাই, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ভাই, আমি ও স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত হলো, মনি ভাই, আমি, মনসুর আলী সাহেব এবং কামরুজ্জামান সাহেবকে নিয়ে ভারতের দিকে যাব। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য আগেই বাসস্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন। মনে পড়ে, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে ভুট্টো যখন টালবাহানা শুরু করে তখন সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছিল যে, পাকিস্তানিরা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। বঙ্গবন্ধু এটা উপলব্ধি করেছিলেন আরও আগেই। ১৯৭১-এর ৩ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ১০ লক্ষাধিক সংগ্রামী মানুষের মহাসমাবেশে নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ করিয়েছিলেন এবং ৬ দফার ভিত্তিতেই শাসনতন্ত্র রচিত হবে সেই ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ৬ দফা প্রশ্নে তিনি কোনো আপস করবেন না। `৭১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক জাতীয় চার নেতার সামনে আমাদের এই ঠিকানা মুখস্থ করিয়েছিলেন, `সানি ভিলা, ২১ নম্বর রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা।` ২৯ মার্চ কেরানীগঞ্জ থেকে দোহার-নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া হয়ে এপ্রিলের ৪ তারিখ আমরা ভারতের মাটি স্পর্শ করি এবং সানি ভিলায় আশ্রয় নিই।

এপ্রিলের ১০ তারিখ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নবনির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে `বাংলাদেশ গণপরিষদ` গঠন করে, মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলাকে `মুজিবনগর` নামকরণ করে রাজধানী ঘোষণা করা হয় এবং জারি করা হয় `স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র` তথা `চৎড়পষধসধঃরড়হ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব`। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাকে অনুমোদন করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ৬ নম্বর প্যারায় লেখা আছে, `বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন` এবং ১০ নম্বর প্যারায় লেখা আছে, `আমরা বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী ঘোষণা করিতেছি এবং উহা দ্বারা পূর্বাহেপ্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করিতেছি।` স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে `গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ` রাষ্ট্র গঠিত হয় এবং `বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার` রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ঘোষিত হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আরও যা ঘোষিত হয় তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে `সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন এবং রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন।` যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি, সেহেতু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে এই মর্মে বিধান রাখা হয় যে, `কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করিতে না পারেন অথবা তাহার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল ক্ষমতা ও দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করিবেন।` `স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র` মোতাবেক উপ-রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এবং জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী, জাতীয় নেতা এএইচএম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও খোন্দকার মোশতাক আহমদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের সভায় কর্নেল ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করা হয়। `স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র`- এই সাংবিধানিক দলিলটির মহত্তর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমরা `বাংলাদেশ গণপরিষদ` সদস্যগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম, `আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে কার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে।` অর্থাৎ যেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেছিলেন সেই দিন থেকে কার্যকর হয়। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা অনুসারে বলতে হয়, `স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র` আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন সংবিধান। এই সংবিধান মোতাবেক স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগরে।

তাজউদ্দীন ভাইয়ের সঙ্গে আমি সীমান্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেছি। একটি বিশেষ প্লেনে তাজউদ্দীন ভাই, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, মনি ভাই এবং আমি যখন শিলিগুড়ি পৌঁছাই, তখন ওখানে পূর্বাহেপ্ত ধারণকৃত তাজউদ্দীন ভাইয়ের বেতার ভাষণ শুনলাম। বাংলার মানুষ তখন মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপসহীন, এককাতারে দণ্ডায়মান। পরবর্তী সময়ে ১৭ এপ্রিল যেদিন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়, তার আগে ১৬ এপ্রিল গভীর রাতে মনি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাই এবং আমি- আমরা মুজিব বাহিনীর চার প্রধান, একটা গাড়িতে করে রাত ৩টায় নবগঠিত সরকারের সফরসঙ্গী হিসেবে কলকাতা থেকে রওনা করি সীমান্ত সন্নিহিত মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা তথা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী মুজিবনগরের উদ্দেশে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশ করি প্রিয় মাতৃভূমির মুক্তাঞ্চল মেহেরপুরের আম্রকাননে। আমাদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি অনেক সাংবাদিক ছিলেন। কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল। আশঙ্কা ছিল পাকিস্তান বাহিনী সেখানে বোমা হামলা চালাতে পারে। মেহেরপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে প্রচুর লোকসমাগম হয়েছিল। মুহুর্মুহু `জয় বাংলা` রণধ্বনিতে আকাশ-বাতাস তখন মুখরিত। আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিস্ময়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছিল নবীন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উদ্ভব।

সেদিনটি ছিল শনিবার। সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দৃপ্ত পদক্ষেপে মঞ্চের দিকে এলেন। দেশ স্বাধীন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সমবেত সংগ্রামী জনতা গগনবিদারী স্বরে `জয়বাংলা` জয়ধ্বনি দিল। শপথ অনুষ্ঠানস্থলে একটি ছোট্ট মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথমে মঞ্চে আরোহণ করেন। ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সশস্ত্র দল রাষ্ট্রপ্রধানকে `গার্ড অব অনার` প্রদান করেন। এরপর মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ এবং প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী। উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবকরা পুষ্পবৃষ্টি নিক্ষেপ করে নেতৃবৃন্দকে প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। সরকারের মুখপত্র `জয় বাংলা` পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি আবদুল মান্নান, এমসিএ`র (গবসনবৎ ড়ভ ঈড়হংঃরঃঁবহঃ অংংবসনষু) উপস্থাপনায় শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমেই নতুন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দলিল `স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র` পাঠ করেন চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলী। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা মায়ের চারজন বীরসন্তান প্রাণ ঢেলে গাইলেন জাতীয় সঙ্গীত `আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি`। উপস্থিত সবাই তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলালাম। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইংরেজিতে প্রদত্ত ভাষণের শুরুতে বলেন, `ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেছি এবং তার পরামর্শক্রমে আরও তিনজনকে মন্ত্রীরূপে নিয়োগ করেছি।` এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দকে পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর ঘোষণা করেন প্রধান সেনাপতি পদে কর্নেল ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল আবদুর রবের নাম। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার আবেগময় ভাষণের শেষে দৃপ্তকণ্ঠে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, `আমাদের রাষ্ট্রপতি জনগণনন্দিত ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ নির্যাতিত মানুষের মূর্ত প্রতীক শেখ মুজিব বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আজ বন্দি। তার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম জয়ী হবেই।` প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর তাজউদ্দীন আহমদ অভূতপূর্ব ও অবিস্মরণীয় বক্তৃতায় বলেন, `পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদম সন্তানের লাশের তলায় তার কবর রচিত হয়েছে। পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যায় মত্ত হয়ে ওঠার আগে ইয়াহিয়ার ভাবা উচিত ছিল তিনি নিজেই পাকিস্তানের কবর রচনা করছেন।` মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বক্তৃতার শেষে তিনি বলেন, `আমাদের এই অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে আমরা কামনা করি বিশ্বের প্রতিটি ছোট-বড় জাতির বন্ধুত্ব।` ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই তৎকালীন বাস্তবতায় যা বলার প্রয়োজন ছিল তা-ই তারা বলেছেন। আমাদের শীর্ষ দুই নেতার এই দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ ছিল ঐতিহাসিক এবং অনন্য। পাবনার জেলা প্রশাসক নুরুল কাদের খান, মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিকসহ আরও অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রতিনিধিদের ইচ্ছার শতভাগ প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখে, রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন করে সেদিন রাষ্ট্র ও সরকার গঠিত হয়েছিল। আর এসব কিছুর বৈধ ভিত্তি ছিল `স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র`। পরে ৩০ লক্ষাধিক মানুষের রক্তস্নাত আত্মদান ও চার লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগের সিঁড়ি বেয়ে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সার্বিক সাফল্য নিশ্চিত হয়েছিল এ দিনটিতেই। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে তথা `৭১-এর এপ্রিলের ১০ ও ১৭ তারিখে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য ছিল সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক বৈধতা নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধ তথা জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করে সুমহান বিজয় ছিনিয়ে আনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিনের গুরুত্ব অপরিসীম।

লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী।


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি