সম্প্রীতি বাংলাদেশের আলোচনাসভায় বক্তারা
মুজিবনগর সরকারের পূর্বাপর ঘটনা নিয়ে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন
প্রকাশিত : ১৮:০৪, ২২ এপ্রিল ২০২৪
শুরু থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ভারতের ষড়যন্ত্র বলে অপপ্রচার চালিয়েছির পাকিস্তান। মুজিবনগর সরকার পাকিস্তানের সব ধরণের অপপ্রচার রুখে দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাই প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক ও সময়োপযোগী। ঘটনার পূর্বাপর নিয়ে বিশদ গবেষণা তাই একান্ত প্রয়োজন। কারণ মুজিবনগর সরকার গঠন না হলে বিজয় অর্জন ছিল যারপরনাই কঠিন। সম্প্রীতি বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় এমন মতামত উঠে আসে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বক্তাদের আলোচনায়।
আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় ক্ষোভের সঙ্গে বিশিষ্টজনেরা বলেন, ১৭ এপ্রিল এখনও অবহেলিত। অথচ মুজিবনগর সরকারই বিশ্বনেতাদের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে প্রকটভাবে তুলে ধরেছিল। সংগঠনের কেন্দ্রিয় সদস্য সচিব বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট নাট্যজন ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুক্তিযুদ্ধে দুর্বার দিনের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, ২৫ মার্চের ভয়াবহ, দুর্বিষহ গণহত্যার সময় আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমেদ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করেন। এসময়েই তিনি বাংলাদেশ সরকার গঠনের পরিকল্পনা শুরু করেন। প্রথমে আত্মরক্ষা, তারপর প্রস্তুতি এবং সর্বশেষে পাল্টা আক্রমণ এই নীতিকে সাংগঠনিকভাবে সুদৃঢ় করে বিকল্প সরকার গঠনের চিন্তা করতে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় ফরিদপুর থেকে কুষ্টিয়া হয়ে মেহেরপুরে যান তাজউদ্দীন আহমেদ। সেখানে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ মার্চ মেহেরপুরের সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সীমান্ত অতিক্রম করার পর বিএসএফ মহাপরিদর্শক গোলক মজুমদার তাদের যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। গোলক মজুমদারের কাছে সংবাদ পেয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক কেএফ রুস্তামজী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক পরিস্থিতি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যাপারে জানতে চান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনায় উঠে আসে ছয় দফা ও সমসাময়িক সংগ্রামের নানা আলেখ্য। ঐতিহাসিক বটতলা থেকে শুরু করে সেদিনের মিছিল মিটিং ও ধরপাকড়ের প্রসঙ্গ ঠাঁই পায় সোমবারের আলোচনায়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কথা বলতে গেলে মুজিবনগর সরকারের কথা আসবেই। তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে হবে। তরুণরা সঠিক ইতিহাস থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামনের দিকেএগিয়ে যাবে।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক বিমান চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার বা সম্প্রীতির বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে বঙ্গবন্ধুর নাম সবার সামনে আসে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দিকে তাকিয়েই আমরা পথচলার শক্তি খুঁজে পাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাই আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট ও প্রগতিশীল।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের উদ্যোগে এ আলোচনায় মুজিবনগর সরকারের বিশেষত্ব তুলে ধরেন ভারত থেকে আগত অতিথি আসাম রাজ্যের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. সৌমেন ভারতীয়া এবং প্রখ্যাত লেখিকা অধ্যাপক ড. রীতা চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির, ফার্মেসী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, সম্প্রীতি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সম্প্রীতি বাংলাদেশের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনসহ অন্যরা।
আরও পড়ুন