মুসলিম ঐতিহ্য ও সভ্যতায় তুরস্ক
প্রকাশিত : ০৯:০১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বর্তমান বিশ্বে তুরস্ক এক উদীয়মান পরাশক্তির নাম। যা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় অন্যতম। দেশটির রাষ্ট্রপতি ও ওআইসির মহাসচিব রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান যেভাবে দেশ পরিচালনা করে আসছেন তা বর্তমান বিশ্বের কাছে খুবই প্রশংসনীয়। যদিও সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তার অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেছে।
তুরষ্কের সরকারি নাম হচ্ছে প্রজাতন্ত্রী তুরস্ক। এটি মূলত পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী একটি দেশ। তুরস্কের প্রায় পুরোটাই এশীয় অংশের। দেশটির রাজধানীর নাম আঙ্কারা এবং সবচেয়ে বড় শহর হচ্ছে ইস্তাম্বুল।
তুরস্কের ভূমি বিচিত্র ধরনের। দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমে আছে উর্বর সমভূমি। পশ্চিমে অনুর্বর মালভূমি আর পূর্বে সুউঁচু পর্বতমালা। তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিবর্তনের বিভিন্ন ধরনের প্রভাব রয়েছে। গোটা মানব সভ্যতার ইতিহাস জুড়ে তুরস্ক, এশিয়া ও ইউরোপের মানুষের চলাচলের সেতু হিসেবে পরিচিত।
তুরস্কের মোট আয়তন ৩,০২,৫৩৫ বর্গমাইল। দেশেটির মোট জনসংখ্যা ৭৯,৪৬৩,৬৬৩ জন। মাথাপিছু আয় হচ্ছে ৯,৫৬২ মার্কিন ডলার। তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা তুর্কি। সরকার ব্যবস্থা হচ্ছে দেশটির ঐক্য-মূলক সংসদীয় সাংবিধানিক গণতন্ত্র। আইনসভা হচ্ছে গ্র্যান্ড জাতীয় সমাবেশ। তুরস্ক মোট ৮১টি প্রদেশে বিভক্ত। সবগুলো বিভাগকে ৭টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। মোট জেলা হচ্ছে ৯২৩ টি। শিক্ষার হার পুরুষদের ৯৫.৩ শতাংশ এবং নারীদের ৭৯.৬ শতাংশ। তবে গড় শিক্ষর হার ৮৭.৪ শতাংশ।
১৯ শতকে তুরস্ক ছিল হিটাইটদের বসবাস। এরাই সেখানে নগরায়ণের ব্যবস্থা চালু করেন। এর পর গ্রিক, রোমান ও আরবদের আগমন ঘটে। ১৯২৩ সালে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কির নেতৃত্বে আধুনিক তুরস্ক প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা চালু হয়। তিনি ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তুরস্কের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার শাসন আমলে ধর্মীয় বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।
১৯৬০, ১৯৭১, ১৯৮০ এবং ১৯৯৭ সালে মোট চারবার সামরিক বাহিনী তুরস্কের রাজনীতিতে ধর্ম নিরপেক্ষতার স্বার্থে হস্তক্ষেপ করেছিল। সর্বশেষ ২০১৬ সালে তুরস্কে সেনা-অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়ে তা বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিচক্ষণতায় ব্যর্থ হয়।
তুরস্কের জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। এছাড়া বাসকেটবল, ভলিবলও খুব জনপ্রিয়। তবে তাদের জাতীয় খেলা হচ্ছে রেসলিং। তুরস্কের দর্শনীয় স্থান ইজতুজবীচ, সুলতান আহমেদ মসজিদ, জাদুঘর, টপকাপিপ্যালেস, পাতারাবীচ ইত্যাদি।
ইসলামের ইতিহাসে তুরস্ক ও ইস্তানবুল আলোচিত দুটি নাম। ইস্তানবুুলের প্রাচীন নাম কনস্টান্টিনোপল। একে আরবিতে বলে কুস্তনতিনিয়া। বেশ কয়েকজন নবী ও মুসলিম মনীষীদের পদচারণে মুখরিত শহর এটি। মহানবী (সা.)-এর হাদিসেও এই শহরের নাম এসেছে।
দেশটির কিছু ঐতিহাসিক স্থানের নাম-
আয়া সোফিয়ার মখমল গালিচা
ইস্তানবুলে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আয়া সোফিয়া। কারও মতে হায়া সুফিয়া। মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসে আলোকোজ্জ্বল অধ্যায়। মুসলিম চেতনার অনন্য মিনার আয়া সোফিয়া। আয়া সোফিয়ার সামনে বিশাল খোলা চত্বর। চারদিকে নানা ফুলের দৃষ্টিনন্দন বাগান। মাঝখানে চমৎকার ফুয়ারা। নানা জায়গায় পর্যটকদের বসার ছোট ছোট বেঞ্চ। চত্বর পেরিয়ে সামনে গেলেই আয়া সোফিয়ার প্রবেশপথ। কিবলার বিপরীত দিক থেকে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। গেটের সামনে সারি সারি পর্যটক। নানা ধর্মের, নানা বর্ণের। তবে এখন মুসলিম পর্যটকই বেশি মনে হলো।
আয়া সোফিয়া তৈরি হয়েছিল ৩৬০ খিস্টাব্দে। নির্মাতা রোমান সম্রাট কনস্টান্টিনোপল। তিনি ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খিস্টান সম্রাট। তবে কেউ বলেছেন, আয়া সোফিয়ার নির্মাতা সম্রাট জাস্টিনিয়ান। তবে মূল কথা হলো, সম্রাট কনস্টান্টিনোপল এটি তৈরি করেছিলেন খুব ছোট আকারে, কাঠের একটি গির্জা হিসেবে। পরবর্তী সময়ে ষষ্ঠ শতকে কোনো এক দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় এ গির্জা। তখন ৫৩২ খিস্টাব্দে সম্রাট জাস্টিনিয়ান বর্তমান অবকাঠামোটি নির্মাণ করেন। বিখ্যাত এই আয়া সোফিয়া মসজিদে রূপান্তরিত হয় কনস্টান্টিনোপল বিজয়ী মাত্র ২২ বছরের যুবক মোহাম্মদ আল ফাতেহের হাতে। তখন থেকে টানা পাঁচ শত বছর আয়া সোফিয়া বিমোহিত হয়েছে আজানের ধ্বনিতে। নামাজের কাতারে, কোরআনের তেলাওয়াতে, মোনাজাতের কান্নায়। কিন্তু মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক সরকার ১৯৩৫ সালে আয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তর করে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪ জুলাই তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ানের নির্দেশে ফের মসজিদে রূপান্তর হয় হাজার বছরের পুরনো এই আয়া সোফিয়া। এখন প্রায় ১০ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় জুমার নামাজ। আয়া সোফিয়ার মিনারে আবার উচ্চারিত হয় তাকবির ধ্বনি-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
ঐতিহাসিক সোলাইমানিয়া মসজিদ
ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান সোলাইমানিয়া মসজিদ। কেউ কেউ এটিকে সুলতান সোলাইমান মসজিদও বলে থাকেন। বসফরাস প্রণালির তীরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে পাহাড়ি রাস্তায় বেশ উঁচুতে এই মসজিদ। ‘সুলতান সোলাইমান’ আলোচিত নাম। মিডিয়ার কারণে বাংলাদেশেও পরিচিত এক চরিত্র। সুলতান সোলাইমানের পিতা হলেন সুলতান প্রথম সেলিম। ইতিহাস বলে, পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সুলতান সোলাইমান তার এক ছেলের নাম রেখেছিলেন মোহাম্মদ সেলিম। যাকে বলা হয় ২য় সেলিম। ইতিহাসখ্যাত এই সুলতান সোলাইমান ছিলেন উসমানী সালতানাতের ১০ম সুলতান। তিনি কানুনি সোলাইমান বলেও পরিচিত ছিলেন।
ইতিহাসে যেমনটি পাওয়া যায়, তিনি ছিলেন উসমানি সালতানাতের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সুলতান। ১৫২০ সাল থেকে ১৫৬৬ সাল। সুলতানের ছিল অনন্য প্রভাব ও প্রতিপত্তি। যার কারণে ইতিহাস তাকে অভিষিক্ত করেছে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের রাজপুরুষ হিসেবে। বসফরাসের তীরঘেঁষা ইউরোপীয় অংশে অবস্থিত মসজিদটি উসমানিয়া সালতানাতের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক।
এ মসজিদের সুউচ্চ চারটি মিনার ও বিশালাকার গম্বুজগুলো আজও উসমানি সালতানাতের ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে আছে। মসজিদের পাশে রয়েছে সুলতান সুলায়মানের কবর। কবরের চারপাশ সবুজে ঘেরা। এর মাঝে বিশালকার গম্বুজের নিচে সুলতান সোলাইমানের সমাধি। সুলতান সোলাইমান ইতিহাস আলোচিত সেই সুলতান, যার হাতে রুমান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল। উসমানি সালতানাতের সুবিখ্যাত এই মহান মানুষটিকে পৃথিবী আজও স্মরণ করে। তাই তার সমাধি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করে নানা দেশের, নানা ভাষার, নানা বর্ণের অসংখ্য মানুষ।
যুলকিফল ও ইয়াসাআ (আ.)-এর কবর
তুরস্কের দিয়ারবাকার থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরের নদীতীরের পাহাড়ি অঞ্চলের নাম এগেইল। স্থানীয় উচ্চারণে আলঈন। পাশেই রয়েছে ইতিহাসখ্যাত দজলা নদীর প্রবাহ। এই দজলার তীরবর্তী বাঁধ ভেঙে গেলে পয়গম্বর হজরত ইয়াসাআ (আ.) ও হজরত যুলকিফল (আ.)-এর কবর ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে চার কিলোমিটার দূরে নতুন করে তাদের দাফন করা হয়। সে ঘটনার পর থেকে সারা পৃথিবীর ইতিহাসপ্রিয় মুসলমানরা হাজির হচ্ছেন তুরস্কের এগেইল নামক এলাকায় হজরত যুলকিফল (আ.)-এর কবরের পাশে। যুলকিফল (আ.) ছিলেন বনি ইসরাইলের বিখ্যাত নবী। পবিত্র কোরআনে যেসব নবীর আলোচনা এসেছে হজরত যুলকিফল (আ.) তাদের মধ্যে অন্যতম। হজরত সুলায়মান (আ.) পরবর্তী নবী হিসেবে তিনি শাম অঞ্চলে প্রেরিত হন বলে মুফাসসিরদের অভিমত।
বনি ইসরাইলের অপর নবী হজরতে ইয়াসাআ (আ.) সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ছিলেন বিখ্যাত নবী হজরত ইউসুফ (আ.)-এর পোপৌত্র। তার পিতা ছিলেন ইফরাঈম; যিনি ছিলেন হজরত ইউসুফ (আ.)-এর ছেলে। আরেকটি অভিমত হচ্ছে, হজরত ইয়াসাআ (আ.) ছিলেন হজরত ইলিয়াস (আ.)-এর চাচাতো ভাই এবং তার নায়েব বা প্রতিনিধি। বনি ইসরাইলের বিখ্যাত এই দুই নবীর মাকবারা হাজার বছর ধরে ইতিহাসের আলো ছড়াচ্ছে তুরস্কের প্রাচীন অঞ্চল এগেইলে।
উল্লেখ্য, তুরস্কের দু’পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দুটি বিখ্যাত নদী- দজলা ও ফুরাত। যে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ইতিহাসের নানা নগর-সভ্যতা। তবে নদী দুটির প্রায় সবটাই ইরাকে হলেও উভয়ের উৎপত্তিস্থল হলো তুরস্কের এই এগেইল এলাকায়।
মাওলানা রুমির প্রেমবাগান
মাওলানা রুমি। মূল নাম জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখি রুমি (১২০৭-১২৭৩ খ্রিস্টাব্দ)। আধ্যাত্মিক জগতের অনন্য মনীষা, দার্শনিক, কবি, আইনজ্ঞ, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফি। প্রেম ও আধ্যাত্মিক কাব্যে তিনি অমর হয়ে আছেন বিশ্বদরবারে। ফার্সি, তাজাকিস্তানি, তুর্কি, গ্রিক, পশতুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম-অমুসলিম সমাজে বিগত সাত শতক ধরে সমাদৃত হয়ে আসছেন। তিনি কাব্য রচনা করেছেন আরবি, তুর্কি ও ফারসি ভাষায়। ফারসি ভাষায় রচিত ‘মসনবি’ তার অমর কাব্যের নিদর্শন।
হাজারো হৃদয়ে রাজত্বকারী এই মহান সাধক মনীষী শুয়ে আছেন তুরস্কের কুনিয়ায়। প্রেমের বাগানে। যেকোনো আধ্যাত্মিকতা-প্রেমী তুরস্ক এলে রুমির বাগানে আসবেই। আমরাও এলাম কবি রুমির শহরে। জুমার আগে প্রবেশ করলাম রুমি কাননে। বিশাল এলাকাজুড়ে সমাধি কমপ্লেক্স। প্রবেশপথে নিরাপত্তা চেকিং। পাশে ইনফরমেশন বুথ। হাতের বাঁ পাশে সুন্দর আর্টসওয়াল। কিছুটা সামনে গিয়ে ঢুকতে হয় সমাধির মূল অংশে। মাওলানা রুমির কবরের ওপরে একটি বিশালাকার গম্বুজ। আরেকটি গম্বুজ বা দিকের শেষ মাথায়। এক পাশে সুউচ্চ মিনার। সমাধিতে প্রবেশপথে অমুসলিম নারী পর্যটকদের জন্য যৎসামান্য পর্দার ব্যবস্থা করা আছে। গায়ে বা পায়ে তারা সেই পর্দা ঝুলিয়ে নিচ্ছেন। আছে পুরুষদের জন্য রুমি আবায়ার ব্যবস্থা। শখ করে কেউ চাইলে পরতে পারে।
সমাধির মূল গেট দিয়ে ঢুকতেই হাতের দুই পাশে সারি সারি কবর। সব কবরের মাথায় সাদা বা সবুজ রঙের পাগড়ি বাঁধা। এটা এখানকার ট্র্যাডিশন। আলেম বা ইসলামী স্কলারদের কবরে এমন পাগড়ি বাঁধা থাকে। এটা সম্মানের প্রতীক। সারি সারি কবরের সামনে দিয়ে এগিয়ে গেলে কাঙ্ক্ষিত সেই কবর। বিশাল আয়তনে রুমির মাজার। তার কবরের এক পাশে তার পিতার কবর। অন্য পাশে মায়ের কবর। আর চারদিকে তার শিষ্য ও বরেণ্য বুজুর্গদের কবর। প্রতিদিন রুমির প্রেমে মানুষ আসছেন এখানে দলবেঁধে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে।
শামসুদ্দিন তাবরেজ কমপ্লেক্স
মাওলানা রুমির আধ্যত্মিক গুরু ও উস্তাদ শামসুদ্দিন তাবরেজি (১১৮৫-১২৪৮ খ্রিস্টাব্দ)। তুরস্কের কুনিয়ায় মাওলানা রুমির সমাধি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তার সমাধি কমপ্লেক্স ও পার্ক। আছে উলু জামে বা শামসুদ্দিন জামে মসজিদ। তুরস্কের ঐতিহাসিক সিটি, আধ্যাত্মিক রাজধানী ও প্রেমের শহরে তার কবর জিয়ারতে গেলাম আমরা। কবরের ওপরে রাখা আছে শায়েখ তাবরেজের ব্যবহৃত সেই বিখ্যাত মাথার পাগড়ি। এই আধ্যাত্মিক মহান সাধকের হৃদয় আলোতেই জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে যায় মাওলানা রুমির। জনতার মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়ে নির্জনতার জীবনে প্রবেশ করেন মারেফাতের কবি জালালুদ্দিন মোহাম্মদ রুমি। ইতিহাস বলে, মাওলানা রুমি ও শামসুদ্দিন তাবরেজের মধ্যে ভাব হতে বেশ সময় লাগে। সেসব সময়ের অনেক শিক্ষণীয় গল্প ও চিন্তাজাগানিয়া কাহিনি আজও মুখে মুখে ফেরে কুনিয়ার লোকমুখে। চায়ের আসরে কিংবা ভাবুকদের মজলিসে।
সুলতান আলাউদ্দিন সমাধি
সুলতান আলাউদ্দিন। মূল নাম আলাউদ্দিন মোহাম্মদ কায়কোবাদ। আনাতোলিয়া সেলজুক সাম্রাজ্যের অন্যতম সুলতান। এই সাম্রাজ্যের প্রথম সুলতান ছিলেন সুলতান মাসুদ। ২য় সুলতান হলেন আরসালান। কেউ কেউ বলেন, সুলতান আলাউদ্দিন হলেন এ ধারায় ৫ম সুলতান। সেলজুক সাম্রাজ্যের আমল দুটি। একটি হলো শুধু সেলজুক। অন্যটি আনাতোলিয়া সেলজুক সাম্রাজ্য। সুলতান আলাউদ্দিন হলেন, আনাতোলিয়া সেলজুক সাম্রাজ্যের অন্যতম ধার্মিক সুলতান। যে কারণে তুরস্কের অন্যতম প্রাচীন মসজিদটি তিনি তৈরি করেন। কুনিয়াকে বলা হয় প্রেমের নগরী। মারেফাতের শহর। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, কুনিয়া ছিল তুরস্কের প্রাচীন রাজধানী। সেলজুক আমলে তুরস্কের রাজধানী ছিল এই কুনিয়া। সে সময়কার অনেক স্মৃতি ছড়িয়ে আছে এই মসজিদের নানা প্রান্তে। সুলতান আলাউদ্দিনের সমাধির পাশের বিশাল মসজিদটির বয়স প্রায় সাড়ে নয় শত বছর।
এটি নির্মাণ শুরু করেছিলেন সুলতান মাসুদ। আর সমাপ্ত করেন সুলতান আলাউদ্দিন। মসজিদের মিম্বারের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আরবি ও রোমান শৈলীতে নির্মিত এ মিম্বারে রয়েছে নানা কারুকার্য। আরবি ক্যালিগ্রাফি। হরফগুলো কুফিধারায় অঙ্কিত। সেখানে কোথাও আছে আয়াতুল কুরসি। কোথাও কোরআনের সুরা। কোথাও আয়াত। কালো রঙের প্রাচীন দামি কাঠে নির্মিত এ মিম্বারটি মসজিদের সৌন্দর্য ও আভিজাত্য প্রকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
দানিয়াল (আ.)-এর কবর
সানুরফা থেকে কুনিয়ার পথে পড়বে তুরস্কের প্রাচীন সভ্যতার আরেক শহর তারতুস। এখানে আছে বনি ইসরাইলের বিখ্যাত নবী হজরত দানিয়াল (আ.)-এর কবর। ইতিহাস আলোচিত বুখতে নসরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। তবে বহুকালব্যাপী কেউ জানত না কোথায় তার কবর। এমনকি এখানকার অনেক অধিবাসীও নয়।
ইসলামের ২য় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর জমানায় তারতুসের পুরনো একটি কবর ভেঙে গেলে প্রাচীন সূত্র থেকে আবিষ্কৃত হয়, এখানেই শুয়ে আছেন পয়গম্বর দানিয়াল (আ.)। কবর ভেঙে গেলে নতুন করে দাফনের প্রয়োজন দেখা দেয়। হাজার বছর পরে যখন হজরত দানিয়াল (আ.)-কে এই তারতুসে নতুন করে দাফন করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.)-এর পক্ষ থেকে এ মহান কাজে অংশ নেন বিখ্যাত সাহাবি আবু মুসা আসআরী (রা.)। আর এভাবেই বনী ইসরাইলের একজন নবীর দাফন হয় নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর একজন সাহাবির হাতে।
মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার সমাধি
মানুষটিকে কেউ বলেন মোল্লা। কেউ ডাকেন হোজ্জা। স্থানীয় পরিভাষায় বলা হয় হোজা। কেউ লিখেছেন খাজা। কারও কলমে নাসরুদ্দিন আফেন্দি। সাধারণত সবাই তাকে বলেন, মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা। পৃথিবীখ্যাত এই মানুষটির পুরো নাম নাসির উদ্দিন মাহমুদ আল-খায়ি। এখানের আঞ্চলিক ইতিহাস বলে, তার জন্ম ১২০৮ খ্রিস্টাব্দে, তুরস্কের হরতু গ্রামে। যেটি সিবরিহিসার শহরের পাশে। আফিয়ন প্রদেশে অবস্থিত। পরবর্তীতে তিনি আকসেহির শহরে লেখাপড়ার জন্য চলে আসেন। দুপুর পেরিয়ে বিকালের হালকা রোদ গায়ে মেখে আমরা হাজির হলাম হোজ্জার শহরে। অসাধারণ ও সুন্দর ছিমছাম শহর। চারপাশে ফুলের বাগান। শহরের এক পাশে প্রাচীন কবরস্থানে হোজ্জার সমাধি। একটি বড় গম্বুজের নিচে। চারদিকে বহু কবর।
হোজ্জার কবরের দু’পাশে সবুজ কাপড়ে সোনালি সুতায় লেখা দুটি আয়াত। ওপরে কাচের আবরণ। মাথার পাশে তার ব্যবহৃত পাগড়ির রেপ্লিকা। তার শহরে যেভাবে তাকে তুলে ধরা হয়েছে, এতে করে বোঝা যায়, হোজ্জা মানুষটা ছিলেন ছোটখাটো, কিছুটা বেঁটে। মাথায় পরতেন পাগড়ি আর গায়ে চড়াতেন জোব্বা। সফরের বাহন হিসেবে থাকত একটা গাধা। হোজ্জাকে নিয়ে হাজারেরও বেশি গল্প চালু আছে। কোনো গল্পে তাকে মনে হয় খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ। আবার কোনো গল্পে তার আচরণ সাধারণ চোখে একেবারেই বোকার মতো মনে হয়। কিন্তু এর পেছনে থাকত কোনো প্রজ্ঞা বা শিক্ষা। তার সূক্ষ্ম রসবোধে সবসময়ই থাকত কোনো-না-কোনো সবক। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন কাজি বা বিচারক। রসবোধের অনন্য ছোঁয়ায় তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরতেন। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষায় তার গল্পের চর্চা রয়েছে। নাসিরুদ্দিন হোজ্জার প্রতি সম্মান জানিয়ে ইউনেসকো ১৯৯৬ সালকে হোজ্জাবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে।
আসহাবে কাহাফের বিখ্যাত গুহা
ইতিহাসের বিস্ময়কর স্থান ও ঘটনাবহুল আসহাবে কাহাফের স্মৃতিবিজড়িত জায়গা। আসহাবে কাহাফের সেই ঐতিহাসিক গুহা কোথায় অবস্থিত এটি নিয়ে মতবিরোধ আছে বহু প্রাচীনকাল থেকে। তবে বেশিরভাগ তাফসিরবিদ ‘আফসুস’ নগরীকে আসহাবে কাহাফের স্থান সাব্যস্ত করেছেন। এটি এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত রোমকদের সর্ববৃহৎ নগরী ছিল। এর ধ্বংসাবশেষ তুরস্কের ইজমির (স্মার্না) শহর থেকে ২০-২৫ মাইল দক্ষিণে পাওয়া যায়। আল্লামা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বয়ানুল কোরআনে আসহাবে কাহাফের স্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ধৃত করে লিখেছেন, যে অত্যাচারী শাসকের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আসহাবে কাহাফ গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তার সময়কাল ছিল ২৫০ খ্রিস্টাব্দ। এর পর ৩০০ বছর পর্যন্ত তারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন।
৫৫০ খ্রিস্টাব্দে তাদের জাগ্রত হওয়ার ঘটনা ঘটে। রাসুল (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এভাবে রাসুল (সা.)-এর জন্মের ২০ বছর আগ পর্যন্ত আসহাবে কাহাফ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন। তাফসিরে হক্কানিতেও তাদের স্থান ‘আফসুস’ অথবা ‘তারতুস’ শহর সাব্যস্ত করা হয়েছে। তুরস্কের এই তারতুসে অবস্থিত গুহাটিই আসহাবে কাহাফের সঠিক গুহা। এমনটাই দাবি স্থানীয় গবেষকদের। বর্তমানে এর ধ্বংসাবশেষের নানা স্মৃতিচিহ্ন বিদ্যমান আছে তুরস্কের এই তারতুসে। তৎকালীন অত্যাচারী রোমান সম্রাট থেকে পালিয়ে ঈমান রক্ষায় এই গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সাত যুবক। তাদের সঙ্গে ছিল কিতমির নামের এক কুকুর। পবিত্র কোরআনে ‘সুরা কাহাফ’ নামে আলাদা একটি সুরা রয়েছে।
হুররম সুলতানের কবর
সুলতান সোলাইমান আল কানুনীর স্ত্রী হুররম সুলতান। সুলতান সোলাইমান সম্পর্কে বর্তমান মুভি বা মিডিয়া যা বলছে, যা দেখাচ্ছে, সুলতানের সমাধি ও তার জীবনাচারের যেসব স্মৃতি দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে এসব প্রচারণা সত্যের বিপরীত। তুরস্ক সফরে আমার মনে হয়েছে, উসমানি সালতানাতের তাকওয়াপূর্ণ সুলতানদের মাঝে সুলতান সোলাইমান আল কানুনী অন্যতম। পাশাপাশি হুররম সুলতানের বিষয়ে ইতিহাসের পাতায় যা পাওয়া যায়, তাতে করে তাকে একজন নেককার, মানবদরদি ও মহীয়সী নারী হিসেবে প্রমাণ করে। দুর্ভাগ্য আমাদের, মুসলিম শাসকদের জীবন ও কর্ম আমরা বিশ্বাস করছি অমুসলিম লেখকদের কথায়। এটি জাতি হিসেবে আমাদের পরিতাপের বিষয় ছাড়া অন্য কিছু নয়। হুররম সুলতান ছিলেন উসমানীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে অন্যতম।
হুররম সুলতানের হাত ধরেই উসমানীয় সাম্রাজ্যে সর্বপ্রথম নারীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সুলতান সোলাইমানের বেশ কয়েকজন স্ত্রী থাকলেও হুররমই ছিলেন সুলতানের প্রধান স্ত্রী বা মালিকা। তিনি তার স্বামীর মাধ্যমে বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করে উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এবং সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বলে কোনো কোনো ইতিহাসবিদের অভিমত পাওয়া যায়। হুররম সুলতানের জন্ম ১৫০২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল। হুররম নানা জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মসজিদ, মাদ্রাসা, নাগরিকদের জন্য পানির ফোয়ারা, মহিলা হাসপাতালসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সবসময় গরিব-দুঃখীদের নানাবিধ সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। তিনি ১৫৫৮ সালে ১৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
সুলতান সেলিম মসজিদ
তুরস্কের কুনিয়ায় জালালুদ্দিন রুমির সমাধিসংলগ্ন সুবিশাল এ মসজিদটির নাম সুলতান সেলিম মসজিদ। এখানকার স্থানীয় ভাষায় সুলতান সেলিম উলু জামে। বিশাল মসজিদ। তুরস্কের প্রায় সব মসজিদই অনেকটা একরকম। ভেতর-বাইরে একই প্যাটার্নের। হুট করে দেখলে বুঝতে পারা কঠিন আপনি কোন মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।
এই মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা সুলতান সেলিম। ইতিহাস তাকে বলে সুলতান ২য় সেলিম। এ সুবিশাল মসজিদটি তিনি নির্মাণ শুরু করেন ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে আর এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত করা হয় ১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে। সুলতান সেলিম বিখ্যাত সুলতান সোলাইমানের সন্তান। তবে পিতার কতটা যোগ্য উত্তরসূরি আর কতটা অযোগ্য, সেটা বলার অধিকার নেই আমার। এটা ইতিহাস বলবে। ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যাবে সে সনদ। তবে এ মসজিদটি তার অনন্য কীর্তি-এটা বলা যায় অকপটে।
সুলতান ২য় সেলিম মসনদে আসীন হন ৯৭৪ হিজরির ৯ রবিউল আউয়াল। তার দুর্ভাগ্য যে, তিনি তার পিতা সুলতান সোলাইমান আল কানুনীর মতো সাহসী ও প্রজ্ঞাবান হতে পারেননি। ৯৮২ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। যে বছর সুলতান মৃত্যুবরণ করেন সে বছরেই জন্ম হয় সুলতান ৩য় মুরাদের। তাকওয়াপূর্ণ এক সুলতান হিসেবে তার সমাদৃতি ছিল ইতিহাসে।
সুলতান সেলিম মসজিদের সামনে রয়েছে নান্দনিক মার্বেল পাথরের তৈরি প্রাচীন অজুখানা। চারপাশে গোল হয়ে মুসল্লিরা অজু করেন।
প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় জামিয়া হাররানা
হাররানায় ছিল পৃথিবীর প্রাচীন এক বিশ্ববিদ্যালয়। যার নাম ‘জামিয়া হাররানা’। এখানকার অধিবাসীদের দাবি, এটি পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ধারণা করা যায়, পুরো পৃথিবীর প্রথম না হলেও এটি তুরস্কের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এর পাশেই রয়েছে জামে মসজিদ। যাকে এখানকার ভাষায় বলা হয়, ‘উলু জামে’। বিশাল আকৃতির মসজিদ। সামনে বিস্তৃত পার্ক। মাঝখানে সুবিশাল ফোয়ারা। মসজিদ কমপ্লেক্সের এক পাশে প্রায় ষাট ফুট উচ্চতার চারকোনা মিনারা। লাল ইটের বিধায় কেউ কেউ এটিকে লাল মিনারাও বলে থাকেন। এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় আব্বাসীয় আমলে। প্রায় সাতশ বছর আগে।
সেই আমলে সারা পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্ময়কর জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল বাগদাদের আব্বাসি খলিফাদের তত্ত্বাবধানে। সে সময়ে তুরস্কের এই হাররানে গড়ে তোলা হয় প্রাচীন এই জ্ঞানশহর। প্রতিষ্ঠা করা হয় জামিয়া হাররান ও শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদ। কালের বিবর্তনে যা আজ হারানো সভ্যতার শেষ সাক্ষী হয়ে আছে। মসজিদের প্রধান দরজার সামনের তোরণটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে কালের স্মৃতি ধারণ করে। সভ্যতার এই অনন্য কীর্তি চাপা পড়ে ছিল মাটির নিচে। মাটির নিচ থেকে তুলে এই সভ্যতার সঙ্গে পৃথিবীকে যিনি নতুন করে পরিচয় করে দিয়েছেন তিনি হাররান আধুনিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ উনাল।
আসেফ ইবনে বরখিয়াহ
পয়গম্বর হজরত সোলাইমান (আ.)-এর অন্যতম সাহাবি ও আলেম। সাবার রানি বিলকিসের রাজসিংহাসন চোখের পলকে ফিলিস্তিনে নিয়ে এসেছিলেন যিনি। পবিত্র কোরআনের ‘সুরা নামলে’ তার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। সাবার সম্রাজ্ঞী বিলকিস আসবেন পয়গম্বর হজরত সোলাইমান (আ.)-এর দরবারে। রানী বিলকিস দরবারে উপস্থিত হওয়ার আগেই চাই রানীর বিখ্যাত সেই রাজকীয় সিংহাসন। কিন্তু কে আনতে পারবে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে? জিনদের মধ্যে থেকে দাঁড়াল একজন ‘ইফরিত’। সে প্রতিশ্রুতি দিল, সুলাইমান (আ.)-এর দরবার শেষ হওয়ার আগেই সেটাকে সে উপস্থিত করবে। সুলাইমান (আ.) দরবারে আরও তলব করলেন। তখন ‘একজন কিতাবের ইলম ধারণকারী’ বললেন, চোখের পলকেই সেটাকে উপস্থিত করবেন। সোলাইমান (আ.)-এর সেই আলেম সাহাবির নাম ‘আসেফ ইবনে বরখিয়াহ’।
তুরস্কের ঐতিহাসিক সিটি দিয়ারবাকার থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে এলজিন নামক এলাকায় তার সমাধি। তার ছেলে হারুন ইবনে আসেফ (আ.) শুয়ে আছেন তার পাশেই।
এসএ/