ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মুহররম মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বর্ণিত ১৪টি সহিহ হাদিস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৪, ১২ জুলাই ২০২৪

হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহাররমুল হারাম। এখানে হারাম শব্দের অর্থ সম্মানিত। পবিত্র এ মাসের সম্মান, মর্যাদা ও শারাফাতের কারণেই মাসটিকে ‘মুহাররমুল হারাম’ আখ্যয়িত করা হয়। একই সঙ্গে কোরআনুল কারিমে যে চারটি মাসকে ‘হারাম’ তথা সম্মানিত আখ্যা দেওয়া হয়েছে, সর্বসম্মতিক্রমে তার প্রথম মাসটি এই পবিত্র মুহাররম। বাকি তিনটি হারাম মাস হলো-রজব, জিলকদ ও জিলহজ।

অন্য মাসগুলোর চেয়ে ইসলামে এই চারটি মাসের গুরুত্ব তুলনামূলক বেশি। হাদিস শরিফে পবিত্র মুহাররম মাসের মর্যাদা বর্ণনা করে আল্লাহর রাসুল (সা.) এটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস আখ্যা দিয়েছেন। মুহাররমের এই মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণেই রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সব মাসের রোজার চেয়ে মুহাররমুল হারামের রোজা বেশি ফজিলতপূর্ণ...।’ (সহি মুসলিম)

সম্মানিত এই মাসটির দশম অর্থাৎ আশুরার দিন অতিসম্মানিত। এ দিনটিকে ঘিরে পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটেছে নানা ঘটনা। হজরত আদম (আ.)-এর জন্ম থেকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত মানব ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সম্পৃক্ততা এই মাস ও আশুরার দিনের সঙ্গে।

নিম্নে মহররম মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত ১৪টি হাদিস পেশ করা হল:

▪︎১. প্রখ্যাত সাহাবী আবু বাকরা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা আসমান সমূহ এবং জমিন সৃষ্টির দিন যে আকৃতিতে সময়কে সৃষ্টি করেছিলেন সেটা আবার তার নিজস্ব কৃতিতে ফিরে এসেছে। এবং বারো মাসে এক বছর। তম্মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক। সেগুলো হল: যুল কা’দাহ [যিলকদ], যুল হিজ্জা [যিলহজ্জ] এবং মুহররম এবং আরেকটি হল মুযার সম্প্রদায়ের রজব মাস যা জুমাদাল ঊলা এবং শাবানের মধ্যখানে রয়েছে।  [বুখারি ও মুসলিম]

▪︎২. আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হল আল্লাহর মাস মুহররমের রোজা। আর ফরজ নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায।”  [মুসলিম]

▪︎৩. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “জাহেলি যুগে কুরাইশগণ আশুরার রোজা পালন করত। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে নিজে আশুরারা রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু‘ যখন রমজানের রোজা ফরজ হল তখন তা পরিত্যাগ করা হল। যার ইচ্ছা রাখত যার ইচ্ছা রাখত না।”  [বুখারি]

▪︎৪. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা আগমন করার পর দেখলেন, সেখানকার ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা কিসের রোজা রাখ? তারা বলল: এটি একটি কল্যাণময় দিন। এ দিন বনী ইসরাইলকে আল্লাহ তাআলা তাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই মুসা (আ.) এ দিন রোজা পালন করেছিলেন। (বিধায় আমরাও মুসা আ. এর অনুসরণে এ দিনটিতে রোজা পালন করি)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "আমি তোমাদের চেয়ে মুসাকে অনুসরণ করার বেশি হকদার।” অতঃপর তিনি এ দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।  [বুখারি-মুসলিম]

▪︎৫. আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহুদিরা আশুরার দিনকে ঈদ মনে করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,  "অতএব তোমরা এ দিন রোজা রাখ।”  [বুখারি-মুসলিম]

▪︎৬. হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া রা. কে হজ্জের বছর আশুরার দিন মিম্বারের উঠে বক্তব্য দিতে শুনেছি। তিনি বলছেন,  "হে মদিনা বাসী, তোমাদের আলেমগণ কোথায়?  আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আজ আশুরার দিন। আল্লাহ এ দিন রোজা রাখা ফরজ করেন নি। কিন্তু আমি রোজা রেখেছি। অতএব, তোমাদের কেউ চাইলে রোজা রাখতে পারে, নাও রাখতে পারে।"  [বুখারি ও মুসলিম]

▪︎৭. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এই আশুরার দিনের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে এত গুরুত্ব সহকারে অন্য কোন দিন রোজা পালন করতে দেখি নি। (অর্থাৎ রমজান মাস ছাড়া)  [বুখারি]

▪︎৮. রুবাই বিনতে মুআউওয়ায রা. বলেন,  "রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন সকাল বেলা আনসারদের মহল্লায় মহল্লায় এ ঘোষণা দেয়ার জন্য লোক পাঠালেন যে, যে ব্যক্তি রোজা রাখেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ রোজা অবস্থায় থাকে আর যে রোজা রেখেছে সে যেন রোজা পূর্ণ করে।” রুবাই রা. বলেন, আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকে রোজা রাখাতাম। আর তাদের জন্য রঙ্গিন পশম দ্বারা খেলনা বানিয়ে রাখতাম। কেউ কান্নাকাটি করলে সেটা তাকে দিতাম যেন ইফতারের সময় পর্যন্ত রোজা অবস্থায় থাকে।”  [বুখারি ও মুসলিম]

▪︎ ৯. সালামা বিন আকওয়া রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে এ ঘোষণা দেয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন যে,  "যে ব্যক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন দিনের বাকী অংশ রোজা থাকে আর যে খায়নি সেও যেন রোজা অবস্থায় থাকে। কারণ, আজ আশুরার দিন।"  [বুখারি-মুসলিম]

▪︎১০. আবু কাতাদা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন, "প্রতি মাসে তিন দিন এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান পর্যন্ত রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব অর্জিত হয়। আরাফার দিন রোজা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে তিনি এর বিনিময়ে আগের ও পরের এক বছরের গুনাহ মোচন করে দিবেন। আর আশুরার দিন রোজা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর বিনিময়ে পূর্বের এক বছরের গুনাহ মোচন করবেন।"  [সহিহ মুসলিম]

▪︎১১. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন,  জাহেলি জামানার লোকেরা আশুরার দিন রোজা পালন করত। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুসলিমগণও এ দিন রোজা পালন করতেন। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আশুরার দিন আল্লাহ তাআলার দিন সমূহের মধ্য থেকে একটি দিন। যার ইচ্ছা সে এ দিন রোজা রাখতে পারে আর যার ইচ্ছা রোজা বাদও দিতে পারে।"  [সহিহ মুসলিম]

▪︎১২. জাবির বিন সামুরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আশুরার দিন রোজা রাখতে আদেশ করতেন, উৎসাহিত করতেন-এমনকি রোজা রাখার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতেন। অতঃপর রমজানের রোজা ফরজ হলে তিনি এ রোজার ব্যাপারে আদেশ করতেন না, নিষেধও করতেন না এবং এ ব্যাপারে খোঁজ-খবরও নিতেন না।  [সহিহ মুসলিম]

▪︎১৩. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আশুরার দিন রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকে রাখার জন্য আদেশ করলেন তখন সাহাবিগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন,  হে আল্লাহর রসূল, এ দিনটিকে তো ইহুদিরা সম্মান করে?! তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ আমি আগামী বছর নয় তারিখে রোজা রাখব।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে, (তিনি বলেছেন), " আগামীতে বেঁচে থাকলে নয় তারিখে রোজা রাখব।”  [সহিহ মুসলিম]

১৪. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আশুরার দিন রোজা রাখ এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিরোধিতা করে এর আগের দিন বা পরের দিন রোজা রাখ।” [মুসনাদ আহমদ, সহীহ ইবনে খুযায়মা ইত্যাদি]
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন,  "মাসের শুরু চিনতে অসুবিধা হলে (নয়, দশ ও এগার এ) তিন দিন রোজা রাখবে। যেন নয় ও দশ তারিখে রোজা নিশ্চিতভাবে সম্পন্ন করা যায়।"  [মুগনী ৩/১৭৪]

সূত্র-সংকলন: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল। 
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি