ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

মৃত বন্ধুর মাংস খেয়ে টানা ৭১ দিন!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৫:০৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সালটা ১৯৭২। আন্দিজ পর্বতমালা তুমুল তুষার ঝড়ে ঢেকে গিয়েছিল। এর উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ৪০ সিটের ছোট্ট একটি বিমান। যার গন্তব্যস্থল ছিল চিলি। তবে উরুগুয়ে থেকে যখন বিমানটি আকাশ ছুঁয়েছিল তখনও আবহাওয়া খারাপ ছিল না। 

আন্দিজের উপরে গিয়ে আবহাওয়া এতোটাই খারাপ হয় যে প্রথমে বিমানটি তুমুল ঝাঁকুনি খায়। তারপর বাতাসের ধাক্কায় এদিক সেদিকের পাহাড়ে ধাক্কা মারতে মারতে সেটি যখন শান্ত হয়, তখন ৪০ জনের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুর দেশে চলে গিয়েছেন। আর বাকিরা তখনও নিশ্চিত মৃত্যুর সঙ্গে জীবনের শেষ দান খেলতে ব্যস্ত। এদের মধ্যেই একজন ছিলেন পেদ্রো অ্যালগোর্টা। তারই লোমহর্ষক গল্প শুনুন।

চারদিক শুধু থেতলে যাওয়া লাশের ভিড়। তারই মাঝে কাটা ধানের মতো পড়ে রয়েছে কতগুলি মানব শরীর। ওরা মরেনি তখনও। বেঁচে আছে। কিন্তু এত ঠাণ্ডায় কতক্ষণ বাঁচা সম্ভব হবে কেউ জানে না। পেদ্রোরও একই অবস্থা। পাশের যাত্রীরা ততক্ষণে মৃত। পেদ্রো কোনো মতে রক্ত ভেজা লাশগুলোকে সরিয়ে বিমানের ভাঙা দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। সঙ্গে আরও কয়েকজন। 

এখন কী হবে এমন প্রশ্নের মাঝে হঠাৎই একজন মশাল জানালেন। বললেন, “চিন্তা নেই বন্ধুরা। এতক্ষণে বিমান ভেঙে পড়ার খবর নিশ্চিত চিলি পৌঁছে গিয়েছে। সেখান থেকে উদ্ধারকারী আসছে। ”

এরপরে বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। তবু কারও দেখা নেই। এদিকে তুষার ঝড়ের দাপটে মারা গেছেন আরও কয়েকজন। তখনও বেঁচে গুটিকয়েক যুবক। পেদ্রো তখনও লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। কিন্তু এবার কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা যায় সেই নিয়ে চলতে থাকল যুক্তি-তর্ক।

এদিকে ঠান্ডা হাওয়ার তেজ যেন বেড়েই চলেছে। কাটা কাটা হাওয়া যেন করাতের মতো আঘাত করে চলেছে শরীরটাকে। তবু আশা ছাড়েনি কেউ। বাঁচতে হবেই। ঠাণ্ডাকে হার না মানালে যে মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু এদিকে বাঁচার উপায়ও মাথাতে আসছে না। এদিকে কমছে মজুত খাদ্য আর পানি। 

শেষ দানাটা দ্রুত মুখে পরে দিল লোকটা। খাবার শেষ। আর কেউ বাঁচতে পারবে না। খাবার ছাড়া এই ঠাণ্ডায় বাঁচা অসম্ভব, যদি না কোনো অলৌকিক কিছু ঘটে। এদিকে পেদ্রো এক ঝলক ঘড়ির দিকে তাকাল। 

১৩ দিন কেটে গিয়েছে। তবু কারো দেখা নেই। তাদের যেন বাকি বিশ্ব ভুলতে বসেছে। না হলে কেউ আসছে না বাঁচাতে।

তখনই সবাই সিদ্ধান্ত নিল বাঁচতে গেলে খেতে হবে। আর খাবার যখন নেই, তখন মৃত বন্ধুরাই একমাত্র ভরসা। প্রথমটায় বমি করে ফেলেছিলেন বেশিরভাগই। তারপর খিদের চোটে পাগলের মতো মানুষের মাংস খাওয়া শুরু করেছিলেন সবাই। পেদ্রোর ভাগ্যে জুটেছিল এক মৃত বন্ধুর কাটা হাত আর থাই। তাই কামড়ে কামড়ে খাচ্ছিলেন পেদ্রো। যা চলেছিল টানা ৭১ দিন। বাঁচার তাগিদে সেদিন যেন ওই মানুষগুলো এক একটা হিংস্র দানবে পরিণত হয়েছিল।

কেমন ছিল সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। ঘটনার প্রায় ২৫ বছর পর পেদ্রো একটি বই লিখেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন “ইন্টু দ্য মাউন্টেন”। তাতে সে সময়কার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “আজও যখন সেই দিনটার দিকে ফিরে তাকাই মনে হয়, যদি ওই কাজটা না করতাম সেদিন, তাহলে বোধহয় আজকের দিনটা দেখতে পেতাম না। ”

কী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা একবার ভাবুন। প্রাণ বাঁচাতে নিজের সহযাত্রীদের মাংস খাচ্ছে একদল সভ্য মানুষ। আসলে সেদিন বাঁচার তাগিদেই মানুষের মাংস খেতে বাধ্য হয়েছিল ওরা। যারা মারা গিয়েছে তারা তো আর নেই। কিন্তু দেখুন সেই মৃত মানুষগুলোর কারণেই আজও অনেকে বেঁচে আছে। পেদ্রো অ্যালগোর্টাও তাঁদের একজন।

পেদ্রো নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, সেদিন কেউ এটা ভাবেনি যে তারা মানুষের মাংস খাচ্ছে। সবার মনে হয়েছিল বন্ধুরা মরে গিয়েও তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এর থেকে বেশি সেই মুহূর্তে আর কিছুই মনে আসছিল না তাদের। মাথার উপরে‌ কালো মেঘ। অঝোরে হতে থাকা তুষারপাত আর মাইনাস সেন্টিগ্রেডের মাঝে বেঁচে থাকাটাই সে সময় শেষ কথা ছিল। তাই তো মৃতদের শরীরকে স্বয়ং যিশুর শরীর ভেবে তারা গ্রহণ করছিল সেদিন।

আরকে/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি