ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পর্ব-৫

মৃত ব্যক্তির হাড় নিয়েও বাণিজ্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৯:১৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাড়ে তিন হাত মাটির ঘর। যাকে এক শব্দে বলা হয় কবর। রাজধানীতে মানুষের এই শেষ আশ্রয়স্থল ঘিরেও বেপরোয়া দুর্নীতি, অনিয়ম ও বাণিজ্য চালাচ্ছেন কবরস্থানগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এর সাথে জড়িত আছে দুই সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারাও।

কবরস্থানে জায়গা সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ রাখেছে। তবে অস্থায়ীভাবে দুই বছরের জন্য কবরের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বরাদ্দকৃত স্থানে নতুন কবর দেওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কবরের বয়স তিন-চার মাস পার না হতেই ওই কবর ভেঙে নতুন কবর দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। অভিযোগ আছে, পুরনো কবর থেকে কঙ্কাল বা হাড়গোড় বিক্রি করে দেওয়ারও। আর এই কাজগুলো করছে কবরকেন্দ্রিক গড়ে উঠা সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কিছু কিছু হাড় পুরনো কবরে রাখা হলেও বেশিরভাগ হাড় চলে যায় কবরস্থানের বাইরে। কবরস্থানের স্টাফ পরিচয় দেওয়া সিন্ডিকেট সদস্যরা এসব হাড় একটি, দু’টি করে কবরস্থান থেকে বের করে। এভাবে ধীরে ধীরে মৃত ব্যক্তির পুরো হাড় নিয়ে তা জোড়া লাগিয়ে কঙ্কাল তৈরি করা হয়। নানা হাত ঘুরে এসব হাড় বা কঙ্কাল আকারে উচ্চমূল্যে চলে যায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে।

এমনকি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অদৃশ্য কঙ্কলের  হাট বসে। মেডিকেল কলেজগুলোতে এনাটমি বিভাগে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরপরই এ লাশের হাটের সূচনা হয়। ক্রেতার চাহিদা অনুসারে বিক্রেতারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লাশের হাটের স্থান ও ক্ষণ নির্ধারণ করা হয়।

রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের অধীনে মোট ৮টি কবরস্থান ছাড়াও হিন্দুদের জন্য দু’টি শ্মশানঘাট রয়েছে। সরেজমিনে আজিজুপর কবরস্থানে গিয়ে কথা হয় বাবার কবর জিয়ারত করতে আসা ঝিগাতলার বাসিন্দা আয়েশার সঙ্গে। তিনি একুশে টিভি অনলাইনকে  জানান, দুই দিন আগে তিনি একটি কবরের পাশে কিছু মৃতব্যক্তির হাড় পড়ে থাকতে দেখেন। দুই দিন পরে এসে সেই হাড় আর চোখে পড়ে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখানে মৃতব্যক্তির হাড়শুলো সংগ্রহ করে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী কাছে বিক্রি করা হয়। অনেকেই পরিচ্ছন্নকর্মী নাম দিয়ে, পরিষ্কারের নাম করে হাড়গোড় চুরি করে বিক্রি করে। কবরস্থানগুলোতে চলে মাদক সেবনও।  

এব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থীর বাবা  একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, শিক্ষার্থীর চাহিদার তুলনাই প্রয়োজনীয় কঙ্কালের অভাব রয়েছে। ফলে একটি চক্রের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে এগুলো কিনতে হচ্ছে। তার মেয়ের জন্য ৩৫ হাজার টাকায় একটি কঙ্কল কিনতে হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর সারাদেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। আর এসব শিক্ষার্থীর জন্য সাড়ে ৩ হাজার কঙ্কাল প্রয়োজন হয়। এ কঙ্কাল সংগ্রহ করা হচ্ছে রাজধানীর ৮টি করবস্থানসহ বিভিন্ন মেডিক্যালের বেওয়ারিশ লাশ থেকে।

এবিষয় জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজ কল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তা লুৎফর রহমান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, করবস্থানের জায়গা সংকটের কারণে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। অস্থায়ীভাবে দুই বছরের জন্য কবর বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের সময় শেষ হলে দুই বছর পর আবার নতুন কবর দেওয়া হয়। কিন্তু মৃতব্যক্তির হাড় বিক্রির মতো তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নি। যদি তেমন কোনো অভিযোগ আসে তাহলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি