মৃত্যুর সঙ্গে সাক্ষাৎ অবশ্যম্ভাবী
প্রকাশিত : ১৯:৪১, ১৯ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৫৯, ১৯ মে ২০১৯
কুরআন বলছে, প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অনিবার্য বাস্তবতায় মানুষ তাকে ভুলে থাকে। ফাঁসির আসামি মুত্যু ভয়ে দিন গুনতে থাকে নির্জন প্রকোষ্ঠে। তাকে দেখে আমরা যারা অনুকম্পা করি, আমরা কি একবারও ভেবে দেখি এমনি একটা দণ্ডাদেশ আমাদের মাথায়ও ঝুলছে। তফাৎ হলো ফাঁসির আসামি জানে তার মৃত্যুর মুহূর্তটি কখন, আর আমরা জানি না। জানি না বলেই ভুলে থাকি জীবনের উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে স্বার্থপরতার পঙ্কে নিমজ্জিত হই।
কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছি-এই যে নিঃশ্বাস গ্রহণ করছি এ নিঃশ্বাস প্রশ্বাস হয়ে বের নাও হতে পারে। আমরা সবাই নিজেদের অজ্ঞাতে মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছি। উদ্দেশ্যহীন সে দৌড় আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে একবার তাও ভেবে দেখি না। অথচ কুরআন বলছে, ইন্নাল মাওতাল্লাজি তাফররুনা মিনহু ফাইন্নাহু মুলাক্বিকুম (সুরা জুমু’আ/৮) অর্থাৎ তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছ সে মৃত্যুর সঙ্গে দেখা তোমাদের হবেই।
মানুষ হয়ে কেউ জন্মায় না-মানুষকে সাধনার বলে মানুষ হতে হয়। একটু খেয়াল করলেই দেখতেস পাবো- জন্মের সময় শিশুর হাত মুষ্টিবদ্ধ থাকে, মৃত্যু মুহূর্তে মানুষের হাত থাকে খোলা। এর একটা অর্থ আছে। মানুষ আসার সময় খালি হাতে আসে না। কিছু একটা নিয়ে আসে। জীবনের এই বিপুল বিস্মরণের প্লাবনে সে জিনিস বেরিয়ে যায়। সে যখন ঘরে ফেরে তখন সর্বস্বান্ত; পথিকের হাতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। খালি হাতে ফেরার কথা ছিল না তার।
অনেকেই জীবনকে অস্বীকার করে, ফেরেশতা হতে চায়। কিন্তু স্রষ্টার ইচ্ছা নয় যে মানুষ ফেরেশতা হোক। তাই যদি হতো তাহলে তিনি মানুষকে ফেরেশতা হিসেবেই সৃষ্টি করতেন। জীবনের গন্ডীতে জীবনের মুখোমুখি হতেই হবে। স্ত্রী-পুত্র, স্নেহ-ভালোবাসা, বিরহ-বিচ্ছেদ, সুখ-দুঃখ এ সবের মাঝেই যাপিত হবে জীবন। এ জন্যই কুরআন বলছে, ওয়া’লামু আন্নামা আমওয়ালুকুম ওয়া আওয়াদুকুম ফিতনাতুন ওয়া আন্নাল্লাহা ইনদাহু আজরুন আজীম (সুরা আনফাল/২৮) অর্থাৎ তোমাদের সন্তান সন্ততি এবং তোমাদের ধন সম্পদ তোমাদের জন্য এক পরীক্ষার কথা সম্পূর্ণ ভুলে জীবনটাকেই এক মাত্র সত্য মনে করে। দুটোই মারাত্মক ভুল।
আল্লাহ সূরা আহযাবের ৩৫ নং আয়াতেও ওই আজরুন আজীমের কথা বলেছেন আসলে আজরুন আজীম যে কি তা বলা মুস্কিল। এখানে আল্লাহ বলেছেন, আত্মসমর্পনকারী, মুমিন, অনুগত, সত্যবাদী, ধর্মশীল, বিনীত, দানশীল, সওম পালনকারী, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী সমস্ত নারী পুরুষের জন্য রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’
একটু তলিয়ে দেখলেই তালিকার মর্মার্থ তোমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখানে অনেকগুলো গুণের কথা বলা হচ্ছে। গুণ আমল না করলে গুণের অধিকারী হওয়া যায় না। আল্লাহ এখানে গুণের জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেননি-করেছেন গুণের অধিকারীদের জন্য। সবগুলো গুণকে একত্র করলেই দেখবে এমন একটা গন্ডী রচিত হয়ে যাবে যা হবে সৎ জীবনের ঠিকানা।
আর সেটাই ইসলাম সম্মত জীবন। ধর্ম, বিনয়, আনুগত্য, আত্মসমর্পণ, দানশীলতা, উপবাস, প্রকৃতির সংযম, আল্লাহর স্মরণ-সব এক স্থানে মেলালে দেখবে এমন একটা জীবনের সীমানা এখানে বেঁধে দেওয়া হয়েছে যার পরিমন্ডলে উঠে আসতে পারলে জীবন হবে আলোকময়। তখন দেখবে মৃত্যুও হবে মোহনীয়। মৃত্যুর কাছ থেকে তখন আর পালিয়ে বেড়াতে হবে না। প্রেমিকা যেমন অভিসারের মুহূর্তটির জন্য ব্যাকুল হৃদয়ে অপেক্ষা করে তেমনি মানুষও মৃত্যুর পথ চেয়ে থাকবে।
সূত্র : হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি’র (রহ) সংলাপ সমগ্র বই থেকে সংগৃহীত।
এমএস/ এসএইচ/