মেদ-ভুরি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে মেডিটেশন
প্রকাশিত : ১৭:৪৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৩:১৪, ১ অক্টোবর ২০১৭
বাড়তি মেদ কি আপনার জন্যে সমস্যা? আপনার ওজন কি বেশি? আপনি কি দেখতে স্থুলকায়? বাড়তি ওজনের ফলে আপনার চলাফেরা ও কাজকর্মে অসুবিধা হচ্ছে? আপনি কি খুব ভোজনবিলসী? উচিত নয় জেনেও কি আপনি মজাদার খাবারের লোভ সংবরণ করতে না পারায় দিন দিন মোটাই হয়ে চলছেন? আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ কি অতিরিক্ত পানাহার, না ঠিক মতো ব্যায়াম না করা? অথবা ব্যায়াম করার পরও কি আপনার ওজন কমছে না? ডায়েটিং ও ব্যায়াম করার পর দুই থেকে তিন কেজি ওজন কমার পরই কি করেকদিনে আপনার ওজন তিন থেকে চার কেজি ওজন বেড়ে যায়?
অবশ্য আপনার ওজন বাড়ার কারণ অতিভোজন না হয়ে ক্ষতিকর খাবার গ্রহণ করার প্রবণতাও হতে পারে। এ জন্যে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তান চমৎকার ফল নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু খাবার কমানো বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন নি:সন্দেহে একটি কঠিন কাজ। শুধু ইচ্ছে শক্তি প্রয়োগ করে এক্ষেত্রে সাফল্য লাভের সম্ভাবনা খুব কম। তবে মনছবি প্রয়োগ করে আপনি এক্ষত্রেও অসাধ্য সাধান করে পারেবন।
খাবারের ব্যাপারে আমাদের সাধারণ ধারণা একেবারে অবৈজ্ঞানিক। আমরা যাকে স্ট্যান্ডার্ড খাবার তালিকা বলি তেমন স্ট্যান্ডার্ড খাবার বলে কিছু নেই। প্রত্যেক মানুষের খাবারের স্ট্যান্ডার্ড নিধার্রিত হয় তার দেহ মনের কোয়ান্টাম লেভেল থেকে। যে কারণে একজন প্রচুর খেয়েও শরীরের মেদ জমাতে পারে না, আর একজন পানি খেয়েও মেদ বাড়িয়ে ফেলে। অবচেতনে তথ্যের পুনর্বিন্যাস দ্বারা একজন মানুষ খুব কম খেয়েও সুন্দর স্বাথ্যের অধিকারী হতে পারেন। আমাদের দেহ মন প্রক্রিয়া আসলে পরিবেশ ও প্রয়োজনের সাথে চমৎকার খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
ডায়েট বিশেষজ্ঞ ডা. পল রোয়েন খাবার নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। দীর্ষ ৩০ বছর গবেষণার পর তিনি বলেছেন, রাতে ভুরিভোজ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হঠাৎ মৃত্যুর জন্যে এক আদর্শ ব্যবস্থা। তিনি সকালে ও রাতে খাবারের ফলাফলের বর্ণনায় একটি সমীক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন। এতে ৭ জন স্বেচ্ছাসেবক সকালে নাস্তায় দুই হাজার ক্যালোরি খাবার গ্রহণ করার পার দেখা যায় যে, তাদের ওজন কমে গেছে। আবার এই সাত জনই রাতে দুই হাজার ক্যালোরি খবার গ্রহণ করার পর দেখা যায় যে, তাদের ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে গেছে।
গ্রাম বাংলায় এ ব্যাপারে একটা চমৎকার প্রবাদ প্রচলিত আছে-নাস্তা করো রাজার মতো, দুপুরে খাও রাজপুত্রের মতো আর রাতে খাও ভিখারীর মতো। ডা. পল রোয়েন তাই পরামর্শ ছিলো এরকম।
১. সকালে ভরপেটে নাস্তা করুন।
২. দুপুরে তৃপ্তির সাথে খান।
৩. রাতে হালকা খাবার গ্রহণ করুন।
এটাই হচ্ছে খাবার গ্রহণের স্বাস্থ্যসম্মত পন্থা। আর কী পরিমাণ খাবার খাবেন, তা নির্ধারণ করবে আপনার পাকস্থলীর আয়তন। আর পাকস্থলী কতটুকু খাবারে পূর্ণ করবেন, সে ব্যাপারে ইসলাম ধর্মের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর একটি বাণী প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, তুমি তোমার পাকস্থালীর এক তৃতীয়াংশ খাবার এবং এক তৃতীয়াংশ পানিতে পূর্ণ করো। আর বাকি এক তৃতীয়াংশ ফাঁকা রাখে। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে এই নিয়ম পালন করে মনের তথ্যভাণ্ডার পুনর্বিন্যাস করলে আপনি যেমন দেহ চান ঠিক তেমন দেহেরই অধিকারী হতে পারবেন।
খাবার নিয়ন্ত্রণে মেডিটেশন
অতিভোজন বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্যে আপনি প্রথমে প্রত্যয়ন রচনা করুন। প্রথমে বর্তমান অবস্থায় বিবরণ লিখুন। ওজন কত? কী কী খান? কী কী খাওয়া পছন্দ করেন তার তালিকা তৈরি করুন। কেন আপনি ওজন কমাতে চান বা কেন খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে চান তার কারণগুলো এক এক করে বিস্তারিত লিখুন। কত ওজন কমাতে চান তা লিখুন। মেদ আপনার স্বাস্থ্য হানির কতটা কারণ তা লিখুন। অথবা আপনি কি শুধু আকর্ষনীয় হওয়ার জন্যে স্লিম হতে চাচ্ছেন? কী কারণে আপনি খাবর নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করুন। তাহলেই অবচেনের তথ্যভাণ্ডারকে আপনি পুনর্বিন্যাস্ত করতে পারবেন।
মেডিটেশনে বসে আপনার মন ছবি মনিটরে দেখুন। আপনার ওজন কমিয়ে দেহকে যে অবস্থায় নিয়ে যেত চান তার ছবি দেখুন। ওজন কমলে আপনাকে কেমন লাগবে তা ভিজুয়ালিইজ করুন, অনুভব করুন। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে নতুন যে খাবার খেতে চাচ্ছেন, সেগুলো খুব ভালোভাবে ভিজুয়ালাইজ করুন এবং নিজেকে বুলন এইকুটু খেলেই আমার চলে যাবে। মনকে বলনু ও অনুভব করুন, নির্ধারিত খাবার খেলে আর আপনার ক্ষুধা লাগবে না। যে খাবারগুলো আপনি বর্জন করতে চান, এক এক করে স্কিনে এন ক্রস চিহ্ন দিয়ে বাতিল করে দিন অথবা তা এমন আজেবাজে জিনিস হিসেবে কল্পনা করুন, যেন তা খেতে নিলেই আপনার বমি ভাব চলে আসে। আপনার ওজন কমে গিয়ে নির্ধারিত ওজন এসে দাঁড়িয়েছে তা অবলোকন করুন। বাস্তবে এরকম সুন্দর ও অর্কণীয় হয়ে উঠলে আপনার মনে যে আনন্দানুভূতি হতো, তা সবগুলো ইন্দ্রিয় ও পূর্ণ আবেগ দিয়ে অনুভব করুন। পূর্ণ আবেদন দিয়ে আপনার সাফল্যের অনুভূতির সাথে সবকিছুকে সম্পৃক্ত করুন।
শরীরের ওজন কমানো ক্ষেত্রে সবসময়ই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং ধাপে ধাপে লক্ষ্য পানে অগ্রসর হোন। এক নাগাড়ে ৪০ দিন অনুশীলন অব্যাহত রাখুন। প্রয়োজনে সময় বাড়িয়ে দিন। আপনার ওজন সুনিশ্চিতভাবে হ্রাস পাবে। খাদ্যাভাস পরিবর্তনে আপনি অবশ্যই সফল হবে। আর ওজন বাড়াতে চাইলে ঠিক এর উল্টোটা করুন।
টিকে