ক্যারিয়ার
মেধাবী তারুণ্যের পছন্দ ফার্মাসি
প্রকাশিত : ১২:৫৮, ২২ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৩:২০, ২৪ জুলাই ২০১৭
বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের দ্রুত প্রসার ঘটছে। দেশ এখন ওষুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন। দেশের ওষুধের চাহিদার ৯৮ ভাগই স্থানীয় ওষুধ কোম্পানীগুলো পূরণ করে থাকে। পাশাপাশি বিশ্বের ১০২ টি দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করছে। দেশে দুই শতাধিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী রয়েছে। সেই সঙ্গে একটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে যে, ওষুধ কোম্পানীগুলো এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এতে এ সেক্টরে ব্যাপক কর্মসংস্থান হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ২০ বছর দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকবে। বিদেশে বাংলাদেশের ওষুধের যে সুনাম রয়েছে, সংশ্লিষ্টরা সুদৃষ্টি দিলে এবং সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ওষুধ শিল্পের আয় আগামী দিনে টেক্সটাইল শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে। তাই মেধাবী তরুণদের সাবজেক্ট চয়েজের শীর্ষে চলে এসেছে ফার্মাসি।
দেশের ফার্মা প্রোডাক্টের মান ঠিক রাখতে দক্ষ ফার্মাসিস্টের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেইসঙ্গে বিস্তার ঘটছে ফার্মাসি শিক্ষারও। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৪০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে ফার্মাসি পড়ানো হচ্ছে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাছে ফার্মাসি বিষয়টি দিন দিন পছন্দ তালিকার শীর্ষে উঠে আসছে। ফার্মাসিস্টদের চাকরির অবারিত সুযোগ থাকায় স্বভাবতই বর্তমানের তরুণ তরুণীরা ফার্মাসিতে পড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
ফার্মাসিস্টদের যে কেবল ওষুধশিল্পেই কাজের সুযোগ আছে, তা নয়; স্বাস্থ্য খাতেও তাদের কাজের সুযোগ হচ্ছে। বাংলাদেশে দুই শতাধিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে একজন ফার্মাসিস্ট অনায়াসে কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যান রিসোর্স বিভাগ, মার্কেটিং, মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে কাজ করতে পারেন। ফার্মাসিস্টদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি ছাড়াও সুযোগ আছে সরকারি চাকরির। এছাড়া শিক্ষকতা, গবেষণা এবং দেশের বাইরে কাজ করার সুযোগ তো আছেই। ফার্মাসি গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল (পিবিসি)-এ রেজিস্টার্ড ২৩০০ ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে মাত্র ১,০০০ জন আমাদের দেশের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। আর বাকিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওষুধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
ফার্মাসিস্ট হতে হলে সরকার অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছর মেয়াদি ফার্মাসি (বি ফার্ম) ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে। এরপর এক বছর মেয়াদি মার্স্টাস (এম ফার্ম) কোর্স করার সুযোগও রয়েছে। বাংলাদেশে ফার্মাসি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগ খোলার মধ্য দিয়ে এ দেশে এই শিক্ষার যাত্রা। সরকারি ছাড়াও বর্তমানে ২৪ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-ফার্ম কোর্সটি চালু রয়েছে।
ফার্মাসিস্টদের কাজের মধ্যে রয়েছে ওষুধ গবেষণা, প্রস্তুত, মান নিয়ন্ত্রণ, সংরক্ষণ, সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বিপনণসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ওষুধের ফর্মুলেশন, উৎপাদন, ওষুধের মান উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীলতা, গবেষণা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা চাকরি করেন। এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিংয়ে তাদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর বাইরে সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা, আর্মড ফোর্সেস, সরকারি হাসপাতাল, ওষুধ প্রশাসনসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন উচ্চ পদে ফার্মাসিস্টরা চাকরি পেতে পারেন। বেসরকারি হাসপাতালে ও ক্লিনিকে ফার্মাসিস্ট পদে, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ম্যানাজার ছাড়াও প্রশাসনিক ও তথ্য বিভাগে এদের কাজের সুযোগ রয়েছে।
ওষুধ শিল্পের আয় টেক্সটাইল খাতকেও
ছাড়িয়ে যাবে- ড. হাসান মাহমুদ রেজা
বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ও ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের জব প্রসপেক্ট নিয়ে ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসান মাহমুদ রেজার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে পড়ালেখা করেছেন। বি-ফার্মে ফার্স্ট ক্লাস সিক্সথ ও এম ফার্মে ফার্স্ট ক্লাস থার্ড হন। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি স্তরে তিনি মেধার সাক্ষর রেখেছেন। এসএসসিতে সম্মিলিত মেধাতালিকায় ৭ম স্থান অধিকার করেন। এইচএসসিতে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৫ম স্থান অধিকার করেন। তিনি জাপানের নারা ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজি থেকে পিইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল্সে প্রোডাক্ট অফিসার হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। তার শিক্ষকতা শুরু ১৯৯৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে। ২০০৬ সালে জাপানের নারা ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে জয়েন করেন। দেশ বিদেশের বহু ফার্মা ম্যাগাজিন ও জার্নালে তার লেখা ছাপা হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে এখন যারা বিশ্বাবিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল -
ইটিভি অলনাইন: ফার্মাসীর শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার প্রসপেক্ট সম্পর্কে জানতে চাই?
ড. হাসান মাহমুদ: বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের দ্রুত প্রসার ঘটছে। দেশের ওষুধের চাহিদার ৯৮ ভাগই স্থানীয় ওষুধ কোম্পানীগুলো পূরণ করে থাকে। বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বিশ্বের ১০২ দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিদেশে আমাদের ফার্মা প্রোডাক্টের বড় একটি বাজার রয়েছে। আগামী কয়েক বছরে এটি কয়েক গুন বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদেশের বাজার ধরে রাখতে ও বাড়াতে ওষুধের মান ঠিক রাখতে হবে। সেজন্য দরকার হবে এই সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি। আর সেই চাহিদা পূরণ করতে পারে ফার্মাসীর ছাত্ররা। তাছাড়া দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কলেবর বৃদ্ধি করছে, শাখা বাড়াচ্ছে। সেগুলোতেও জনশক্তির প্রয়োজন হচ্ছে। শুধু তৈরি ওষুধ পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যই নয় ওষুধ উৎপাদন, মাননির্ণয়, বাজারজাতকরণ, বিপনন এসবের জন্য ভবিষ্যতে আরও দক্ষ ফার্মাসিস্টের প্রয়োজন। এসব বিভাগে নিশ্চিতভাবেই সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসীর শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেয়া হবে। তাছাড়া আমি মনে করি আগামী ২০ বছর দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকবে। বিদেশে বাংলাদেশের তৈরি ওষুধের যে সুনাম রয়েছে তাতে সংশ্লিষ্টরা একটু সুদৃষ্টি দিলে ওষুধ শিল্পের আয় টেক্সটাইল শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে।
ইটিভি অনলাইন : ফার্মাসীর শিক্ষার্থীদের কাজের মূল ক্ষেত্র কোনটি?
ড. হাসান মাহমুদ: বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টরা মূলত ওষুধ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে। তবে বিদেশে ফার্মাসিস্টদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হাসপাতাল কিংবা ড্রাগ স্টোরে কাজ করে। ফার্মাসিস্টরা হাসপাতাল ও ড্রাগ স্টোরে কাজ করতে পারলে পাবলিক হেল্থে সরাসরি অবদান রাখার সুযোগ পাবেন। যা আমাদের দেশে এখনও চালু হয়নি। তবে এই বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর মেয়াদী আন্তর্জাতিক মানের ফার্মাসি শিক্ষা কারিকুলাম সংযোজন করা হচ্ছে। এটি সর্বত্র কার্যকর হলে ফার্মাসিস্টরা হাসপাতাল ও ড্রাগ স্টোরেও কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাটা পাবে। শিক্ষার্থীরা ফার্মাসী রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষায় ভালো করে ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবে সহজেই।
ইটিভি অনলাইন: ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিভাগে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে?
ড. হাসান মাহমুদ: ফার্মাসি একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট। এখানকার শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র অবারিত। শুধু ওষুধ শিল্পে নির্দিষ্ট পদেই নয়; তারা এখন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা সহকারীদের সঙ্গে সমন্বিত ভাবে কাজ করছে। ওষুধ শিল্পে ওষুধ উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রন, মান নিশ্চিতকরণ, পন্যের মানবৃদ্ধি, সিজিএমপি ট্রেইনিং, ওয়েরহাউস, ওষুধ নিয়ে গবেষণা, নতুন ওষুধ আবিস্কার, প্রযুক্তিগত সার্ভিস বিভাগে নিয়োগে ফার্মাসির গ্রাজুয়েটদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ওষুধ বাজারজাতকরনেও তাদের কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ওষুধ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বিভাগ, মেডিক্যাল সার্ভিস বিভাগ, সেলস/ মেডিকেল প্রমোশন, ক্লিনিক্যাল সার্ভিস, ট্রেইনিং, আন্তর্জাতিক বিপনন বিভাগেও ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের দেশের ফার্মাসিস্টদের বেশ চাহিদা রয়েছে।
ইটিভি অনলাইন: সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ কতটা তৈরি হয়েছে?
ড. হাসান মাহমুদ: ফার্মাসিস্টরা ড্রাগ রেগুলেটরি বডির অংশ। ফার্মাসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ, ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য রয়েছে। তাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতেও চাকরি হচ্ছে। সীমিত সংখ্যক ফার্মাসিস্টের হাসপাতাল ও ড্রাগ স্টোরেও চাকরি হচ্ছে। এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগও পাচ্ছেন ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশে কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক চালু হওয়ায় এবং কমিউনিটি ফার্মাসীর সূচনা হলে ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের কাজের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে।
ইটিভি অনলাইন : ফার্মাসীর ফ্রেশ গ্রাজ্যুয়েটদের চাকরিতে প্রথম অবস্থায় বেতন কেমন হয়ে থাকে?
ড. হাসান মাহমুদ: ফ্র্যাশ গ্রাজ্যুয়েটরা নিয়োগ পেলে কোম্পানীভেদে শুরুতেই ১৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। কাজে ভালো দখল দেখাতে পারলে দ্রুতই প্রমোশন হয়। সেক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেতন হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে রয়েছে বোনাস, ভাতা, ইনসেনটিভ ও ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা। এ পেশায় পারফর্মমেন্সের ভিত্তিতে ক্যারিয়ার সামনের দিকে বহুদূর টেনে নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইটিভি অনলাইন : ফার্মাসির শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা অবস্থায় খন্ডকালীন কাজের সুযোগ পান কিনা?
ড. হাসান মাহমুদ: ফার্মাসি শিক্ষাটা প্রায়োগিক শিক্ষা। এখানে শিক্ষার্থীদের ল্যাবে অনেক সময় দিতে হয়। তাই খন্ডকালীন চাকরির সুযোগ কম। তবে কেউ কেউ পারিবারিক অস্বচ্ছলতার দরুন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর পন্য বিপননে কাজ করে থাকেন।
ইটিভি অনলাইন: ওষুধ শিল্পের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন আবেদনকারীর কোন যোগ্যতাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে?
ড. হাসান মাহমুদ: ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিষয়গত জ্ঞান কতটা আছে তা যাচাই করে দেখে থাকে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। তার প্রেজেনটেশন স্কিল, অ্যানালাইটিক্যাল অ্যাবিলিটিও গুরুত্ব দেয়া হয়। আবেদনকারীর যোগাযোগ দক্ষতা, স্মার্টনেস, উদ্যম, ইতিবাচক মনোভাব, দূরদর্শিতা এসব বিষয়ও দেখা হয়। এছাড়া একজন ফার্মাসিস্টের সৎ ও নীতিবান থাকাটা জরুরি।
ইটিভি অনলাইন: বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ কেমন আছে?
ড. হাসান মাহমুদ: ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইফ সায়েন্সের যেকোনো বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা ও ডিগ্রি নেয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। বিদেশে পড়ার জন্য কমিউনিকেশন স্কিল থাকাটা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে হলে ফার্মাসী রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষায় ভালো করতে হয়। আমাদের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী প্রতি বছর বিদেশে পড়তে যাচ্ছেন। উদাহরণ সরুপ বলা যেতে পারে, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসির ২০ থেকে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী প্রতিবছর বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন।
ইটিভি অনলাইন : দেশে ওষুধ উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমান দক্ষ জনবল দরকার ফার্মাসির শিক্ষার্থীরা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছে কিনা?
ড. হাসান মাহমুদ: দেশে দুই শতাধিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ টি প্রতিষ্ঠান মানসম্মত ওষুধ তৈরি করছে। যেগুলোতে ফার্মাসিস্টদের অবদান অনস্বীকার্য। দক্ষ ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেয়া হলে এবং কোম্পানী লজিস্টিক সাপোর্ট দিলে বাকী দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানেও ওষুধের মান বৃদ্ধি সম্ভব। বছরে কম করে হলেও আমাদের ২ হাজার ৫ শ’ ফার্মাসী গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে। এদের বেশিরভাগেরই দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলোতে ভালো চাকরি হচ্ছে। তদুপরি দেশে দক্ষ ফার্মাসিস্টের চাহিদা রয়েছে। আরও ১০ থেকে ১৫ বছর এই চাহিদা থাকবে। তাই এ পেশায় সোনালী ক্যারিয়ার গড়ার যথেষ্ট সুযোগ বিদ্যমান।
ইটিভি অনলাইন : ফার্মাসি শিক্ষার প্রতি তরুণরা বেশ ঝুঁকছে, এর কারণ কি?
ড. হাসান মাহমুদ: বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বায়ো সায়েন্সে পড়তে আগ্রহী তাদের বেশিরভাগরই প্রথম পছন্দ ফার্মাসী। প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এই ঝোঁকটা কতদিন থাকবে? দেশে ৪০ টিরও বেশি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসী পড়ানো হচ্ছে। ফার্মাসীর শিক্ষার্থীদের তাত্তি¡ক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজন। সেজন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ল্যাব প্রয়োজন। এজন্য প্রচুর ফান্ড দরকার। সেই ফান্ডের অভাবে দেশে ৮৪ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ফার্মাসি বিভাগ খোলেছে মাত্র ২৪ টি। সেগুলোর বেশিরভাগেই পর্যাপ্ত ল্যাব ফ্যাসিলিটি নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসির শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে অনেকটা বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষাটা না দিতে পারলে একসময় ফার্মাসির প্রতি শিক্ষার্থীদের ঝোঁকটা থাকবে না। এ বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি নর্থসাউথ (দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের তাত্তি¡ক ও ব্যবহারিক শিক্ষাটা নিশ্চিত করে বিজ্ঞান শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে অগ্রনী ভূমিকা রাখছে।
ইটিভি অনলাইন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসির শিক্ষার্থীরা কি পর্যাপ্ত ল্যাব ফ্যাসিলিটি পাচ্ছে?
ড. হাসান মাহমুদ: আমি আগেই বলেছি ফার্মাসি একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট। এখানে ভালো মানের শিক্ষক ও পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি দরকার; যা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। কিন্তু আমি বলতে পারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ফার্ম ও এম ফার্মের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য ১১টি অত্যাধুনিক ল্যাব ও একটি অ্যানিম্যাল হাউস রয়েছে। দেশে প্রথম মিনি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ল্যাব স্থাপন করেছে নর্থসাউথ। এসব কারণে এখানকার শিক্ষার্থীরা শুধু ওষুধ শিল্পই নয় দেশ বিদেশের হাসপাতাল ও ড্রাগ স্টোরেও কাজের যোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে।
ইটিভি অনলাইন : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. হাসান মাহমুদ: আপনাকেও ধন্যবাদ। ইটিভি অনলাইনের প্রতি রইল শুভ কামনা।
//এআর
আরও পড়ুন