মেনোপোজের চিকিৎসা: ডা. কাজী ফয়েজা
প্রকাশিত : ১৮:১১, ১৭ অক্টোবর ২০১৮
একটা মেয়ের বয়স যখন ১২- ১৩ তখন তাঁর মাসিক হয় শুরু হয়। বয়স ৫২ বা তার কাছাকাছি বয়সে গিয়ে মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যদি পুরো এক বছর মাসিকটা বন্ধ থাকে, তখনই আমরা বলি ওই নারী মেনোপোজে গেছে।
মেনোপোজ হলে কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে তখন তারা স্বামী কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে শারীরীক মিলন করতে পারে না। করলেও প্রচুর ব্যথা অনুভব করে।
একজন নারীর মাসিক চলাবস্থায় তার শরীরে হরমোনের একটা সাপোর্ট থাকে। কিন্তু মেনোপোজ হওয়ার পর তার শরীরে হরমোনের সেই সাপোর্ট যেহেতু থাকে না, তখন তারা খুব ঘন ঘন প্রসাবের ইনফেকশনে ভোগেন।
মেনোপোজের আগের সময়টাতে নারীর কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো তার একটা হট ফ্ল্যাশ হয়।
হট ফ্ল্যাশ হচ্ছে শরীরের এমন একটা অবস্থা, যখন ওই নারী খেয়াল করে দিনে বা রাতে তার কান দিয়ে হঠাৎ প্রচুর তাপ বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে, পুরো মাথা ভেপে আছে। এর পরপরই পুরো শরীর প্রচুর ঘাম দিয়ে ভিজে যাচ্ছে। এটাকে বলা হয় `হট ফ্ল্যাশ`।
হট ফ্ল্যাশ খুব ভোগায়, কষ্ট দেয়। এসময় নারীরা রাতে ঘুমাতে পারেন না। তার প্রেসার বেড়ে যায়। বিভিন্ন রকম শারীরিক ঝামেলায় তারা পড়ে।
মেনোপোজের আরেকটা ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এর ফলে তার হাড়ের ক্ষয় বাড়তে থাকে। তখন ওই নারী যদি হাঁটাচলায় পড়ে যায়, তাহলে খুব সহজে তার ফ্যাকচার বা হাড় ভেঙ্গে যায়। এ লক্ষণগুলো মেনোপোজের আগে থেকে শুরু হয়, যখন তার হরমোন কমতে থাকে। কিন্তু মেনোপোজের পরপর বেড়ে যায়।
চিকিৎসা
এমন অবস্থায় নারীরা আমাদের (ডাক্তার) কাছে আসে। আমরা তাদের কিছু ট্রিটমেন্ট দিই। ট্রিটমেন্টের মধ্যে কিছু নন হরমোনাল ট্রিটমেন্ট আছে। আবার কিছু আছে হরমোনাল ট্রিটমেন্ট। হরমোনাল ট্রিটমেন্টে খুব তাড়াতাড়ি তাদের সমস্যাগুলো সমাধান হয়।
কিন্তু হরমোনাল ট্রিটমেন্ট খুব বেশি দিন কন্টিনিউ করা যায় না। কারণ, এই ট্রিটমেন্টে স্ট্রোক হওয়ার, হাইপার টেনশান বাড়ানোর, ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এজন্য আমরা ছ`মাস বা এক বছরের জন্য খুব কম ডোজে এই ওষুধ দিয়ে থাকি। এরপর যখন রোগী তার সমস্যাগুলো নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন আমরা তাকে নন হরমোনাল ওষুধ ব্যবহার করতে বলি।
লাইফস্টাইলে পরিবর্তন
এসময় খাবার দাবারে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। শাকসব্জি ও পানি বেশি খেতে হবে। রিচ ফুড ( পোলাও, মাংস জাতীয় খাবার) খাওয়া যাবে না। রোজ ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামের মধ্যে ইয়োগা, ভারোত্তোলন- এগুলো করা ভালো। তবে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন ব্যায়াম ভুলেও করা যাবেনা।
এ সময় সূর্যস্নান করা ভালো। এর ফলে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম ধারণ করতে পারে। ফলে হাড় শক্ত হবে। আর আমরা তাদেরকে সাপ্লিমেন্টারী ক্যালসিয়াম মুখে দিয়ে থাকি। অন্তত ১৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম মুখে খাবে। সঙ্গে যদি ক্যালসিয়াম রিচ খাবার খায় সেটা আনো ভাল। এগুলোর ফলে হাড় ভাল থাকে।
আর যোনিপথের পিচ্ছিলতার জন্য আমরা তাদেরকে কিছু জেলী ব্যবহার করতে বলি। এর ফলে যোনিপথ পিচ্ছিল হয়। ফলে দাম্পত্য জীবন সুখী হয়। আর ইউরিন ইনফেকশানের জন্য আমরা তাদেরকে এন্টিবায়োটিক দিয়ে রাখি। এভাবেই মেনোপোজাল নারীদের আমরা চিকিৎসা দিই।
শরীর- স্বাস্থ্যের সব নিয়ম মেনে চলুন। জীবনকে উপভোগ করুন।
লেখক: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার, এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমসিপিএস। কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল ও সহকারী অধ্যাপক, গাইনী, প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন।
শ্রুতি লেখক: অালী অাদনান।
অা অা/ এআর