মেয়েদের বয়:সন্ধি, যে ৮টি বিষয় অভিভাবকদের জানা উচিত
প্রকাশিত : ১৬:১১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:২৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
নবজাতকের দেখভাল করা প্রতিটি অভিভাবকের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। তাই অনেকেই ভাবেন কবে যে সন্তান বড় হবে। কিন্তু সন্তান হড় হতে থাকলে দায়িত্ব এবং বিড়ম্বনা কমতে থাকে না। বরং বাড়তে থাকে। আর মেয়ে সন্তানের অভিভাবকদের দায়িত্ব বেড়ে যায় বহুগুণে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেয়েদের বয়:সন্ধির সময়ে তাদের মধ্যে যে শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন হয় সেসময় সন্তানদের সবথেকে কাছের বন্ধু হতে পারে তাদের অভিভাবকেরাই। তাই মেয়ের অভিভাবক হিসেবে আপনাকে এই ৮টি বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
১) শারীরিক পরিবর্তনঃ বয়:সন্ধির সময় মেয়েদের শরীরে আমূল পরিবর্তন ঘটে। দেহের বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তনের জন্যই এমনটা হয়। দেহের বিভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতিতে না আসা পর্যন্ত এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে শরীরে পরিলক্ষিত হয়। এসময় মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি মোটা হয়।
২) লোমঃ বয়:সন্ধির সময় মেয়েদের দেহে অল্প কিছু লোম হতে দেখা যায়। স্বাভাবিকের থেকে এ লোম হবার প্রবণতা বেশি। হাত, পা এমনকি ঠোটের উপরেও ছেলেদের মোছের মত লোম হতে দেখা যায়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়।
৩) গোপন লোমঃ বয়:সন্ধির সময় দেহের গোপন ও স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে লোম হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তবে কিশোর-কিশোরীদের এতে খুবই বিব্রত হতে দেখা যায়। তবে এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এ লোমগুলো সাধারণত কোকড়ানো হয়। সাধারণত ২-৩ বছর সময় লাগে এগুলো পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে।
৪) ব্রণঃ বয়:সন্ধির আরেকটি লক্ষণ ব্রণ হওয়া। সাধারণত টিনেজ মেয়েদেরকে ব্রণ নিয়ে সবথেকে বেশি বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। তবে ব্রণ হবার প্রধান কারণও হরমোনের পরিবর্তন। বয়:সন্ধির সময় ত্বকে ও চুলে এক ধরনের তেলের দরকার হয় যা বিভিন্ন হরমোন যোগান দিয়ে থাকে। তবে সেই তেলের মাত্রা যখন বেশি হয়ে যায় তখন তা ত্বকের মৃত কোষের সাথে ব্রণ আকারে বের হয়ে আসে। ব্রণ ছাড়াও এ সময় ত্বকের আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
৫) স্তনের বৃদ্ধিঃ বয়:সন্ধির সময় যে ব্যাপারটি সবথেকে পরিলক্ষিত হয় তা হল মেয়েদের স্তনের আকারের পরিবর্তন। সাধারণত এসময় মেয়েদের বক্ষপৃষ্ঠ আকারে বৃদ্ধি পায়। এসময় এস্ট্রোজেন হরমোন নির্গমনের হার বেড়ে যায় ফলে ম্যামারি গ্ল্যান্ড আকারে বেড়ে যায়। সেসাথে সেখানে ফ্যাট জমতে থাকে। এতে মেয়েদের বুকের আকার বৃদ্ধি পায়।
৬) জননাঙ্গের পরিবর্তনঃ নারীরাই কিন্তু সন্তানের জন্ম দেয়। তাই বয়:সন্ধির সময়ই নারীদের জননাঙ্গ সন্তান জন্মদানে সক্ষম হতে প্রয়োজনীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। এসময় যোনির বাইরের অংশে লোম উঠতে শুরু করে। যোনিমুখ এবং ইউটেরাস আকারে বেড়ে যায়।
৭) যোনি স্রাবঃ বয়:সন্ধির সময় যোনি স্রাব হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। মেয়েদের মাসিক শুরু হবার পূর্ব লক্ষণ এই যোনি স্রাব। তবে এসময় মেয়েদেরকে অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। কেননা অপরিষ্কার থাকলে তা থেকে ইনফেকশন হতে পারে।
৮) মাসিক বা ঋতুস্রাবঃ মেয়েদের যখন বয়:সন্ধি এবং স্তনের আকার পরিবর্তন হতে শুরু করে সাধারণত তখন থেকেই মাসিক বা ঋতুস্রাব শুরু হয়। ঋতুস্রাব মেয়েদেরকে পূর্ণ ‘নারী’তে পরিণত করে। বয়:সন্ধির সময় মেয়েরা এই মাসিক নিয়ে খুবই বিব্রত বোধ করে। বিষন্নতায় ভুগতে থাকে। কম শিক্ষিত পরিবারের মেয়েদের মধ্যে এসময় স্কুল থেকে ঝরে পরার প্রবণতা দেখা যায়। অনেক পরিবারে এসময় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। উপমহাদেশে আবহাওয়া অনুযায়ী ৯-১২ বছর বয়সেই মেয়েদের মাসিক শুরু হয়। মাসিকের সময় মেয়েদের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হয় যেমন শারীরিক ব্যাথা, মাথা ব্যথা কিংবা হাঁচি ওঠা।
বয়:সন্ধির সময় মেয়েরা খুবই বিষন্নতায় ভোগে। নিজেদের মধেকার এসব অপরিচিত পরিবর্তন নিয়ে তারা কারও সাথে কথা বলতে পারে না। তাই অভিভাবকই হতে পারে সবথেকে কাছের বন্ধু। তাই অভিভাবকদেরকেও এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
সূত্রঃ দ্য হেলথ সাইট
এসএইচ/ডব্লিউএন