ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ম্যালেরিয়া যেভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠলো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:১০, ২৫ মে ২০১৮ | আপডেট: ১০:১৬, ২৬ মে ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর ২০ কোটির বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। ২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এই রোগের কারণে প্রাণ হারিয়েছে এবং তাদের একটি বড় অংশই ছিল পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুরা।

মশার দ্বারা সংক্রমিত ম্যালেরিয়া রোগটি কিভাবে এতটা প্রাণঘাতী রোগ হয়ে উঠলো তার অজানা তথ্য উঠে এসেছে রোগটির ওপর জেনেটিক গবেষণায়।  

ক্যামব্রিজের ওয়েলকাম স্যাংগার ইন্সটিটিউটের গবেষকদের নেতৃত্বে এক গবেষণায় এই পরজীবীটির বংশতালিকা অনুযায়ী সাত ধরনের ম্যালেরিয়ার বিষয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

সেখানে তারা দেখতে পেয়েছেন যে, প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে এই জীবাণুটি রূপান্তরিত হয়ে রোগের নতুন একটি ‘শাখায়’ রূপান্তরিত হয় যা মানব জাতির জন্য মারাত্মক সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নেচার মাইক্রোবায়োলজি নামে জার্নালে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এই রূপান্তরে তখন এমন একটি জিনগত পরিবর্তন ঘটে যার ফলে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মানব শরীরের লোহিত কণিকায় আক্রমণ করতে পারে।

এই গবেষকদের একজন ডক্টর ম্যাট বেরিম্যান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় প্রতিটি পদক্ষেপের ফলাফল একত্রিত করে বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছি যে, ম্যালেরিয়ার সেসব জীবাণু শুধু মানব শরীরে প্রবেশই করছে তা নয়, সেখানে থেকে যাচ্ছে এবং মশার মাধ্যমে পরিবাহিত হচ্ছে।’

ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী যে ভয়াবহ পরজীবী বা প্যারাসাইট বিশ্বজুড়ে এই স্বাস্থ্য সংকটের জন্য দায়ী, সেটি হল ‘প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম।’ 

স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে মানুষের দেহে এটি ছড়ায় এবং বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে। এছাড়া এর এমন প্রজাতিও আছে যেগুলো মনুষ্য সদৃশ শিম্পাঞ্জি এবং গরিলাকে কামড়ায়। 

গবেষণার জন্য গবেষক দল গ্যালনের একটি স্যাংচুয়ারিতে এ ধরনের প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা চালান। এসব প্রাণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পশুচিকিৎসক দল এগুলোর শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংরক্ষণ করেন।

ডাঃ বারিমান বলেন, ‘দেখা যায়, সুস্থ প্রাণীগুলোর রক্তে উচ্চ মাত্রার প্যারাসাইট বা ম্যালেরিয়ার পরজীবী বহনের ইতিহাস রয়েছে।’

এই রক্তের নমুনা থেকে পাওয়া ম্যালেরিয়ার জিনগত কোডের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এর বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। 

গবেষকরা সাত ধরনের ম্যালেরিয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান করেন।

বিবর্তনের ইতিহাস অনুসারে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ৫০ হাজার বছর আগে আবির্ভূত হয়েছিল। কিন্তু মানব শরীরে সংক্রমণ-কারী প্রজাতি হিসেবে আবির্ভাব তিন থেকে চার হাজার বছর আগে।

লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিনের পরিচালক অধ্যাপক জ্যানেট হেমিংওয়ে বলেন,‘এই গবেষণা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ কিভাবে এবং কখন একটি রোগ প্রজাতির মধ্যে বাধা অতিক্রম করে একটি মারণঘাতি রোগে পরিণত হয় তার সম্পর্কে এর মাধ্যমে একটি চিত্র পাওয়া যায়।’   

কিভাবে এটি সংঘটিত হয় তা জানার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা একইরকম পরিস্থিতি এড়াতে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।  

অধ্যাপক হেমিংওয়ে বলেন, ‘এখনকার দিনে অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, ম্যালেরিয়া একটি মানব-সৃষ্ট রোগ এবং ভুলে যায় যে এটি জেনোটিক রোগ যা ৫০ হাজার বছর আগে সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রজাতিগত বাধা অতিক্রম করেছে। এরপর মানব শরীরকে সে তার নতুন আশ্রয় হিসেবে গ্রহণ করে মানবজাতির জন্য মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।’

‘বিশেষ করে বলা যেতে পারে, যে পদ্ধতিতে এই পরজীবী ও ভাইরাস প্রাণী এবং মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে সেটা জানার মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে এটা স্থায়ীভাবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে না পারে।’

(সূত্রঃ বিবিসি বাংলা)

কেআই/এসি 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি