যমজদের গ্রাম
প্রকাশিত : ১৪:৪৪, ১৩ মে ২০১৮ | আপডেট: ১২:৩২, ২০ মে ২০১৮
গ্রামটিতে এলে যেকোনো আগন্তুক চমকে যাবেন ৷ গ্রামের রাস্তাঘাট, খেলার মাঠে, স্কুলে বা অফিসে সর্বত্র জোড়ায় জোড়ায় মুখ দেখতে পাবেন৷ গ্রামের একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক জানান, তাঁর স্কুলেই ১৭ জোড়া যমজ আসে রোজ৷ আবার খেলার মাঠে যমজ খেলোয়াড়দের নিয়েও দর্শকরা মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিতে পড়েন৷ ব্যাপারগুলো যেমন মজার তেমনই আশ্চর্যের৷
আশ্চর্য ওই গ্রামের নাম কোডিনহি। দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রাম এটি৷ কোচি বন্দর থেকে মাত্র ১৫০ কিমি দূরত্বে। এই গ্রামে ঢুকে এমন দৃশ্যই দেখবেন আপনি ৷
বর্তমানে এই গ্রাম বিশ্বজোড়া পরিচিতি পেয়েছে ‘যমজদের গ্রাম` হিসেবে৷ বিজ্ঞানীরাও স্তম্ভিত এখানকার যমজদের ক্রমবর্ধমান জন্মহার দেখে!
কোডিনহি গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে যমজ ভাই-বোন৷ গ্রামে ঢোকার আগেই সাইনবোর্ডে দেখতে পাবেন, ‘ঈশ্বরের একান্ত আপন যমজদের গ্রাম – কোডিনহি৷`
এখানে হাজারটি জন্মের মধ্যে ৪২টি জন্মই যমজদের৷ ২০০৮ এর পরিসংখ্যানে তাকালে দেখা যাবে, এই গ্রামে জন্ম নিয়েছিল ২৬৪ যমজ শিশু, সংখ্যাটা বেড়ে এখন ৪৫০ এ দাঁড়িয়েছে৷ সারা বিশ্বে যমজ সন্তান প্রসবের যে হার, কেরালার এই গ্রামে সে হার প্রায় ছয় গুণ বেশি৷ গ্রামের ৮৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম হলেও হিন্দুদের মধ্যেও যমজ সন্তান জন্মের হার একইরকম৷
যমজের জন্মের এই আশ্চর্য ঘটনা বিশ্বে কেবল কোডিনহিতে নয়, আরও দু`টি গ্রামেও ঘটে৷ নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা এবং ব্রাজিলের ক্যানডিডো গডোই নামের গ্রামে৷ এই দু`টি গ্রামের যমজ সন্তান জন্মের ব্যাখা অবশ্য পাওয়া গেছে৷ কিন্তু এই ইন্টারনেটের যুগে এসেও বিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে কোডিনহির ব্যাখা দিতে পারছেন না৷
জানা গেছে, গ্রামটিতে যমজ শিশু জন্মের এই ধারা শুরু হয়েছিল ৬০-৭০ বছর আগে৷ যমজের সংখ্যা এরপর ক্রমেই বেড়েছে৷ দেখা গেছে, বিয়ের পর কোনো নারী এই গ্রামে এলে তিনিও যমজ সন্তান প্রসব করছেন৷ স্থানীয় চিকিৎসক শ্রীবিজু জানালেন, পাশ্চাত্যের মতো এ গ্রামে সন্তান জন্মের জন্য কোনো কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না৷ সাধারণত কমবয়সি নারীরাই প্রথমবারের মাতৃত্বে এমন যমজ সন্তানের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন৷ আর গ্রামবাসীরা তো যমজ জন্মের এই ব্যাপারটিকে ঐশ্বরিক আশীর্বাদ বলে ধরে নিয়েছেন৷
গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক যমজরা এখনও বেঁচে৷ কুনহি পাথুটি এবং পাথুটি নামের সত্তর বছরের এই দুই বোনের দাবি, সবটাই ঈশ্বরের আশীর্বাদ৷ বিজ্ঞান কিছুই করে উঠতে পারবে না৷ তাঁরা তো যমজ পেরিয়ে এখন ট্রিপ্লেট (তিনটি বাচ্চার একসঙ্গে জন্ম) আর কোয়াড্রপ্লেট মানে চারটে বাচ্চাও জন্মাতে দেখছেন৷
তবে বিজ্ঞানীরা হাল ছেড়ে দেননি৷ যমজ জন্মের নেপথ্যে জেনেটিক, অর্থাৎ জিনগত নাকি আবহাওয়ার কারণ দায়ী, তার পরীক্ষা চলছে৷ বিভিন্ন দেশ থেকে বিজ্ঞানীরা যমজদের বিভিন্ন জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করে চলেছেন৷ ২০০৬ সালে এই যমজদের সুরক্ষার জন্য সমিতিও গড়ে উঠেছে৷ দুঃস্থ যমজদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য এই সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে৷ ভারতবর্ষে এমন সমিতি আর নেই৷ আপাতত সারা বিশ্বের গণমাধ্যমের চোখের মনি এই গ্রাম৷ দেখা যাক, আরও কত কী অভিনব হয় যমজদের গ্রামে!
সূত্র : ডয়েচে ভেলে।
/এআর /