যশোরের শতবর্ষী গাছগুলো কি বাঁচানো যাবে?
প্রকাশিত : ১৮:৩৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ০০:২৫, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা যশোর। এই জেলার শহর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার। এই রাস্তার দুই পাশে সড়ক ও জনপথের হিসাব অনুযায়ী গাছ রয়েছে ২৩ শত ১২টি।
এই গাছগুলোর মধ্যে ১৭০ বছর বয়সী রয়েছে দুই শতাধিক গাছ। গাছগুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা এবং স্থানীয় মানুষের আবেগ বিজড়িত স্মৃতি।
অন্যদিকে যশোর রোডের এ গাছগুলোর নিচ দিয়েই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লাখ-লাখ শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। শরণার্থীদের সেই ঢল নিয়ে বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ `সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড` নামে একটি কবিতাও লেখেন। পরবর্তীতে গায়ক বব ডিলান এবং অন্যদের সহায়তায় সেই কবিতাকে তিনি গানেও রূপ দিয়েছিলেন।
তাই এ গাছগুলো একেবারে কেটে নিশ্চিহ্ন করে রাস্তা সম্প্রসারণের বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। এই রাস্তাটি সম্প্রসারণের প্রকল্পটি পাশ হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে।
যশোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেভাবে প্রকল্পটি পাশ হয়েছে ঠিক সেভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলে গাছ কাটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
তিনি আরও বলেন, “রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য টেন্ডার (দরপত্র) অনুমোদনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মাসে (জানুয়ারি) দরপত্র আহ্বান করা গেলে ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করা হবে পারে। তবে গাছগুলো রেখে বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে রাস্তা সম্প্রসারণের নকশা বা প্রকল্প করা যেত কিনা এমন প্রশ্নে আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজী হন নি।
গত ৬ জানুয়ারি শনিবার যশোর জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে এক মত বিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয় এই গাছ কাটার বিষয়ে। এরপর থেকেই যশোর রোডের গাছ যাতে না কাটা হয় সে বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েক দিন ধরেই সমালোচনা হচ্ছে।
গাছ রক্ষায় স্থানীয় একজন আন্দোলনকারী জিল্লুর রহমান বলেন, এই রাস্তার দুই পাশেই ৫০ ফুটের মত খালি জায়গা রয়েছে। যেটা তারা সহজে ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া মূল রাস্তার দুই পাশের গাছ রেখে তার পাশে লেন তৈরি করতে পারে সওজ। "যশোর রোডের গাছ রেখেই রাস্তা সম্প্রসারণ সম্ভব" বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলেই গাছগুলো রক্ষা করতে পারেন। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন রাস্তা সম্প্রসারণের চেয়ে একটা মহলের বেশি আগ্রহ রয়েছে গাছ কেটে লুটপাট করার। জেলার সব রাস্তা জেলা পরিষদের অন্তর্ভুক্ত। তাই এই গাছ কাটা বা রাখার সিদ্ধান্ত জেলা পরিষদের উপর বর্তায়।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে গাছ কাটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গাছগুলো অনেক পুরনো হয়েছে এবং গাছের ডালপালা ভেঙ্গে সম্প্রতি কিছু দুর্ঘটনা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
তিনি আরো জানান, গাছগুলো অনেক পুরনো হয়ে যাওয়াতে ডালপালা শুকিয়ে যাচ্ছে সেটা একটা কারণ। আরেকটা কারণ ফোর লেন করার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন রাস্তা নির্মাণের পর ঐ সব স্থানে নতুন গাছ লাগানো হবে।
এই মহাসড়কটি ঐতিহাসিকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে যশোর পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্রিটিশ শাসন আমলে যশোর শহরে একটি বিমানঘাঁটি ছিল। ফলে সেই সময় এই বিমানঘাঁটির সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করার জন্য যশোর রোডের আধুনিকভাবে নির্মাণ করা হয়।
সেসময় অনেক গাছ লাগানো হয় রাস্তার দুপাশে। বর্তমানে যশোর রোড বলতে দমদম থেকে বনগাঁ এর পেট্রোপোল সীমান্ত পর্যন্ত মহাসড়ককে বোঝায়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এম/টিকে
আরও পড়ুন