যুবলীগ নেতার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে স্কুল ছাড়ছে কোমলমতি শিশুরা
প্রকাশিত : ১৫:৪৩, ৭ জানুয়ারি ২০২৫
সিলেট মহানগর আওয়ামী যুবলীগের স্বশস্ত্র ক্যাডার, সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের সদস্য ও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচিত কুলঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ দিরাই উপজেলার হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।
গত ৫ আগস্টের পর দেশের দৃশ্যপটের পরিবর্তন হলেও এখানো বেপরোয়া স্বৈরাচার সরকারের দোসর একরার। সে সন্ত্রাসী বাহিনীর দ্বারা এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছেন। এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বন্ধ করে দেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফটক।
শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের মারধর করায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ভাড়াটে সন্ত্রাসী দ্বারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে অস্ত্রের মহড়া করায় ভয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের স্কুলে আসতে দেন না।
এতে করে লেখাপড়ায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
শুধু এতেই কান্ত হয়নি স্বৈরাচারের দোসর একরার হোসেন। তার সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় গভীর রাতে মানুষের বাড়ির পাশে গিয়ে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তার ভয়ে রাতে ঘর থেকে বের হন না গ্রামবাসী।
৫ই আগস্টের পর থেকে সন্ত্রাসী একরার পলাতক থাকলেও যখনই এলাকায় আসে আতঙ্ক বিরাজ করে গ্রামবাসীর মাঝে। চারপাশে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বেশ কয়েকবার এলাকায় আসে সে। যখনই এলাকায় আসে ভয়ে তটস্থ থাকেন গ্রামবাসী।
তার এসব অপকর্ম, অত্যাচার-নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একাধিকবার মামলাসহ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনো ধরাছোয়ার বাইরে একরার হোসেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউপি’র চেয়ারম্যান হিসাবে হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিংবডির দ্বায়িত্বে থাকা অবস্থায় নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শিশু মিয়া নামের এক শিক্ষার্থীর অবিভাবক।
পরে ওই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত ২০২৩ সালের ১৮ ই ডিসেম্বর তারিখে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে ওই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। পরে একরার হোসেন হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেন।
বিদ্যালয়ের ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় লিপ্ত হন তিনি। একাধিকবার ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিনকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রানে মারার উদ্দ্যেশে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজাদি ও নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে যায়। সেই সাথে ওই শিক্ষককে প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদান করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাতিয়া স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসলেই একরার চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীকে বিদ্যালয়ের পাশে অস্ত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। ভয়ে আমরা বিদ্যালয়ে আসতে পারি না। আমাদের বাবা-মা এসব ঘটনা শুনলে আমাদের বিদ্যালয়ে আসতে দেন না। আমরা এই চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি চাই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই।
এ বিষয়ে হাতিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, একরার চেয়ারম্যান ও তার ভাই বদরুল আজাদ রানার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে আমরা গ্রামে জিম্মি দশায় দিনাতিপাত করছি। অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তারা গ্রামে নিরব চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে। সন্ত্রাসীরা এলাকায় অস্ত্রের মহড়া করে ঘুরে বেড়ায়। ফাঁকা গুলি ছুড়ে মানুষকে আতঙ্কে রাখে। আমরা গ্রামবাসী একরার বাহিনীর অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
হাতিয়া স্কুল ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান, কুলঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান হাতিয়া স্কুল ও কলেজের গভর্নিবডির সভাপতি থাকাবস্থায় নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে একজন অবিভাবক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে তার সত্যতা পাওয়ায় ওই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওই চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে একাধিকবার আমাকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা মারধর ও হত্যার হুমকি প্রদান করেন। এমনকি কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও তিনি মারধর করেন। ভয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসে না। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।
এ বিষয়ে হাতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জানান, স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তার দোসর একরার চেয়ারম্যানের অত্যাচারে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। নানা সময় মিথ্যা হামলা মামলায় আমাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। ভোট কারচুপির মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠে সে। তার ভয়ে এলাকার মানুষ রাতে ঘর থেকে বের হতে পারে না। তাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই। আতঙ্ক ছাড়া সুন্দর পরিবেশে আমরা গ্রামের মানুষ বাঁচতে চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান একরার হোসেনের মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও বন্ধ পাওয়ায়। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আ.ফ.ম আনোয়ার হোসেন খান জানান, কুলঞ্জ ইউপি’র কুখ্যাত চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সরকারের দোসর একরার চেয়ারম্যানকে ধরতে আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করি। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। তার হেফাজত থেকে বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
এএইচ
আরও পড়ুন