ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

যে কারণে বাংলাদেশেও বাড়ছে ক্যান্সার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৩৭, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ২০১২ সালের তুলনায় ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বিশ্বে বাড়ছে। দারিদ্র নয়, বরং জীবনযাপন মানের কারণে এটি ঘটছে বলে গবেষকরা মনে করেন।

২০১৮ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বে মোট ১ কোটি ৮১ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে, যাদের মধ্যে ৯৬ লাখ মানুষ মারা যাবে বলে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার(আইএআরসি) বলছে, প্রতি পাঁচজন পুরুষের মধ্যে একজন আর প্রতি ছয়জন নারীর মধ্যে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে।

ওই প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে, এ বছর বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর অর্ধেকই ঘটবে এশিয়ার দেশগুলোতে।

আইএআরসির হিসাবে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮১ জন।

আক্রান্ত তালিকায় মুখের ক্যান্সার, ফুসফুস, ব্রেস্ট, জরায়ু মুখের মতো ক্যান্সার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের সংখ্যা যেখানে ৮২ হাজার ৭১৫জন, নারীদের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৬৬জন।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ। তবে বাংলাদেশে নারীদের মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে স্তন ক্যান্সার। এরপরেই রয়েছে জরায়ু মুখ এবং গল ব্লাডারের ক্যান্সার।

বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাবিবুল্লাহ তালুকদার (রাসকিন) গণমাধ্যমকে বলেন, তুলনামূলকভাবে এখনও বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের হিসাবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের হার কিছুটা কম। কিন্তু নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে।

সর্বশেষ এই গবেষণা বলছে, বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুসের ক্যান্সার। এছাড়া নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সার আর অন্ত্রের ক্যান্সার রয়েছে। তবে মেয়েদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বাড়ার কারণে মেয়েদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। বিশেষ করে ইউএসএ, হাঙ্গেরি, ডেনমার্ক, চীন এবং নিউজিল্যান্ডসহ ২৮টি দেশে এই প্রবণতা দেখা গেছে।

ড. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলছেন, নারীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার হার বৃদ্ধির একটি বড় কারণ তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন। এখন মেয়েরা অনেক বেশি পথেঘাটে বের হচ্ছেন, কর্মজীবী হচ্ছেন অনেকেই সিগারেট বা মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন।

তারা এখন অনেক বেশি পথেঘাটে ধোয়াধুলার মধ্যে কাজ করছেন। বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অনিয়মিত খাবার বা ফ্যাটি খাবার খাওয়াও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারীরা সবাই ধূমপান না করলেও, নারীদের বড় একটি অংশ পানের সঙ্গে জর্দা, সাদাপাতা বা এ ধরণের তামাকজাত খেয়ে থাকেন। সেটাও কিন্তু ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

একসময় মেয়েদের জরায়ু মুখের ক্যান্সার বেশি হলেও এখন স্তন ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। মুখ গহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে।

আগের তুলনায় ক্যান্সারের মতো রোগে নারীদের সচেতনতা বাড়ায় এ ধরণের ঘটনা বেশি সনাক্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা বলছেন। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের মতো ক্ষেত্রে নারীরা এখন অনেকেই নিয়মিত পরীক্ষা করাচ্ছেন।

বাংলাদেশের চিকিৎসকরা বলছেন, ক্যান্সারের লক্ষণগুলো ধরতে না পারা বা সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে না যাওয়া বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বড় কারণ।

ড. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলছেন, অনেক সময় লক্ষণগুলো দেখা দিলেও সেটা অবহেলা করে চিকিৎসকের কাছে আমরা যাই না বা নিজেরাই কোন ওষুধ খেয়ে ফেলি। ফলে পরে যখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

ফলে ওজন কমে যাওয়া, দুই সপ্তাহের বেশি খুসখুসে কাশি, পায়খানা বা মাসিকের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া, হঠাৎ গলা ভেঙ্গে যাওয়া, মাঝে মাঝে জ্বর আসা ইত্যাদি হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এসব অন্য কারণেও হতে পারে। কিন্তু ক্যান্সার হলে প্রথমদিকেই ধরা পড়বে এবং চিকিৎসা পাওয়া যাবে।

তালুকদার বলেন, বাংলাদেশে এখন সব ধরণের ক্যান্সারের চিকিৎসা রয়েছে। হরমোন থেরাপি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি থেকে শুরু করে সব ধরণের ওষুধও পাওয়া যায়।

তবে এসব সেবার বেশিরভাগই ঢাকা কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে। ঢাকার বাইরে কয়েকটি মেডিকেল কলেজে সীমিত আকারে চিকিৎসা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসার জন্য রোগীদের ঢাকায় আসতে হচ্ছে। কয়েকটি সরকারি বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতালের বাইরেও বেসরকারিভাবে অনেক হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তবে অনেক রোগীর তুলনায় সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা কম হওয়ায় রোগীদের সেবা পেতে কিছুটা সময় লাগে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় খরচ অনেক কম বলে চিকিৎসকরা বলছেন। তবে আগের তুলনায় ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতা বাড়ছে বলে তিনি জানান।

সূত্র: বিবিসি

এমএইচ/একে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি