যে কারণে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি
প্রকাশিত : ১০:১৮, ৮ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৩৮, ৮ মে ২০১৮
প্রতিটি মানুষ সন্তানের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে তার বংশের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। বিয়ে এই ধারা অব্যাহত রাখার একটি মাধ্যম। সাধারণত একই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিয়ে সীমাবদ্ধ থাকে। যদিও বিশ্বায়নের এই যুগে অনেকটাই আজ উন্মুক্ত। বিয়ে শুধু দুজন নারী পুরুষের জৈবিক সম্পর্কই নয়। বরং বিয়ে তার চেয়ে অনেক বড় কিছু। তাই বিয়ে সব সময় হওয়া উচিৎ সম-সামাজিক, সম-সাংস্কৃতিক ও সম-অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলের দুটি পরিবারের ছেলে-মেয়ের মধ্যে।
পৃথিবীর প্রথম দম্পতি হযরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়ার সন্তান হতো জোড়ায় জোড়ায়। যদিও তারা ছিল সহোদর ভাই-বোন। তারপরও বংশের ধারা অব্যাহত রাখতে এক জোড়ার ভাই বা বোনের সঙ্গে পরবর্তী জোড়ার বোন বা ভাইয়ের বিয়ে হতো। আর এভাবেই বংশ বিস্তারের মাধ্যমে আজ ৬৫০ কোটি মানুষের আগমন।
শুরুতে ভাই- বোনের মধ্যে বিয়ের সুযোগ থাকলেও পরবর্তীতে ধর্মীয় কারণে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সহোদর ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে বন্ধ হলেও রক্ত সম্পর্কীয় খালাতো, মামাতো, ফুফাতো, চাচাতো ভাই-বোনের মধ্যে প্রায় বিয়ে হতে দেখা যায়।
ধর্মীয় কোনও বাধা নিষেধ না থাকলেও রক্তের সম্পর্কের ভাই বোনের মধ্যে বিয়েতে কোনও অসুবিধা বা জটিলতা আছে কি-না? সামাজিক দিক দিয়ে কখনও কখনও এই ধরনের বিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে থাকে। দুই পরিবারের অনুমতি ছাড়া বিয়েতে অশান্তিও সৃষ্টি হয়।
সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টির বাইরে রক্তের সম্পর্কের বিয়েতে যে বিষয়টি বিবেচ্য হতে পারে সেটি জেনেটিক বা বংশগত রোগ। এমন অনেক রোগ রয়েছে, যা বংশানুক্রমিকভাবে বিস্তার ঘটে চলে। যেমন থ্যালাসেমিয়া। এটি জিন বাহিত রোগ। বিশেষজ্ঞদের হিসেব মতে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। অন্যদিকে থ্যালাসেমিয়ার জিন বাহক মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। তারা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা থ্যালাসেমিয়া বাহক হিসেবে চিহ্নিত। থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও তাদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার জিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এ সব ব্যক্তি সারাজীবন স্বাভাবিক সুস্থ জীবন যাপন করে থাকেন। কিন্তু দুজন থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা বাহকের মধ্যে বিয়ে হলে তাদের সন্তানদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। থ্যালাসেমিয়া অত্যন্ত কষ্টদায়ক একটি রোগ। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর শরীরে লোহিত কণিকা পূর্ণ আয়ুস্কালের পূর্বেই ভেঙ্গে যায়। ফলে শিশু তীব্র রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমায় ভূগতে থাকে। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশনের মাধ্যমে শিশুকে পরিপূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি চিকিৎসা। আমাদের দেশে এখনও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন শুরু করা সম্ভব হয়নি।
অথচ একটু সচেতন হলেই থ্যালাসেমিয়া শিশুর জন্ম দেওয়া থেকে আমরা বিরত রাখতে পারি। বিয়ের পূর্বে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বর ও কনের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার জিন রয়েছে কি-না তা দেখে নিলেই অনাকাঙ্খিত এ সমস্যা আমরা এড়াতে পারি। এক সময় গ্রীস ছিল সবচেয়ে বেশি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের দেশ। বিয়ের পূর্বে বর ও কনের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক সনাক্ত করণের মাধ্যমে তারা আজ পুরোপুরিভাবে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে।
বিয়ের পূর্বে বা পরে বর ও কনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি কনের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় ও বরের পজিটিভ হয় এবং গর্ভধারনের পর বাচ্চার রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হয় তবে সেক্ষেত্রে বাচ্চার শরীরে লোহিত কণিকা দ্রুত ভেঙ্গে ভয়াবহ রক্তস্বল্পতা ও জন্ডিস হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের পর এন্টি-ডি ভ্যাক্সিন নেওয়ার মাধ্যমে এই বিপর্যয় রোধ করা যেতে পারে।
একে// এসএইচ/