ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

যে কারণে ভেস্তে গেল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া

প্রকাশিত : ২০:১২, ১৩ অক্টোবর ২০১৮

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারাকে বাদ দিয়েই শেষ পর‌্যন্ত আত্মপ্রকাশ করল সরকার বিরোধী ঐক্যের। এই ঐক্যের নাম দেওয়া হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন ড. কামাল হোসেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ডাকঢোল পিটিয়ে আত্মপ্রকাশ করা সরকারবিরোধী এই রাজনৈতিক প্লাটফর্মে আছে বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জাসদ ও সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য।

নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যও ঘোষণা করা হয়েছে আজকের সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে লক্ষ্য ও দাবিগুলো পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহম, আ স ম আবদুর রব, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ।

এই ঐক্যফ্রন্টে বিকল্পধারা সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারার যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা টানাপোড়েনে ও দ্বন্দ্বে ভাঙনের মুখে পড়ে সরকার বিরোধী এই জোট। গতকাল রাতেও তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। আজ এই ঐক্যের সমন্বিত রূপরেখা ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি ভেস্তে যায়।   

এই ঐক্য ভেস্তে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে বি. চৌধুরী ও ড. কামালের বক্তব্য থেকে। এছাড়া এই প্রক্রিয়া ভেঙে যাওয়ার নেপথ্যেও বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে বলে জানা গেছে। আজ সন্ধ্যায় বারিধারায় নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন বি. চৌধুরী ও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ড. কামাল।  

*জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত দুই বুদ্ধিজীবী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম ও ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ একাধিক নেতা এই আন্দোলন প্রক্রিয়ায় বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীকে না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই দু’জন ভিন্ন কৌশলে হাঁটছেন বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে মাহি বি. চৌধুরীর ও মেজর মান্নানের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ রয়েছে বলে তাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছিল বহু দিন ধরেই।

*বিকল্পধারা নেতৃত্ব বৃহত্তর জোটে যাওয়া নিয়ে বেশ কিছু কঠিন শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতকে ঐক্যে না রাখা। মূলত এই শর্তেই এতদিন আটকা ছিল ঐক্য। বি. চৌধুরী ও মাহি বি চৌধুরী এই শর্ত থেকে দূরে সরে না আসায় দলের সিনিয়র সহসভাপতি শাহ আলম বাদলসহ কয়েকজন বিকল্প ধারা থেকে বেরিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি আচ করে আজ বিকালে বাদল ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জানে আলম হাওলাদারকে বহিস্কার করা হয়।

* বিকল্পধারার অভিযোগ ঐক্যের রূপরেখা ও দফার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লুকোচুরি করেছেন অন্যরা। সর্বশেষ গতরাতে আ স ম রবের বাসায় যে বৈঠক হয় তাতেও সেগুলো স্পষ্ট করা হয়নি।  

* বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটর শরীক এলডিপি-জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দল চায়নি জোটে বিকল্প ধারা আসুক। এ নিয়ে জোটেও টানাপোড়েন চলছিল।

ঐক্যফ্রন্টে না যাওয়া নিয়ে যা বললেন বি চৌধুরী

‘জাতীয় ঐক্যে’র রূপরেখায় ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাব না থাকায় আমরা ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেই নি। এই ঐক্যে একটি দলের প্রাধান্য রয়েছে। আমরা চেয়েছি ক্ষমতার ভারসাম্য।

আজ শনিবার রাজধানীর বারিধারায় বিকল্প ধারা সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এই সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি মূলত বিএনপি-গণফোরাম-নাগরিক ঐক্য ও জাসদ নিয়ে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।  

 বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয় বহু আগে। প্রায় দুই বছর আগে। নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথমে এই প্রস্তাব নিয়ে আসে আমার কাছে। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমিও সানন্দে ওই প্রস্তাব গ্রহণ করি। পরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিক ও জাসদের আ স ম রবও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন।

এরইমধ্যে ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ডাক দেন। আমরাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করি। তিনিও বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে একমত হন। আমিও রাজি হয়ে যাই। ড. কামাল ও আমি একই স্কুলের ছাত্র। তিনি আমার ৬ বছর জুনিয়র।

যাই হোক। এভাবে আমাদের আলাপ আলোচনা চলছিল। এর মধ্যে বিএনপিও আমাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করে। বিশেষ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমিও ওই দলের সঙ্গে ছিলাম, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলাম। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। আমি তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সবমিলিয়ে আমিও চেয়েছি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলতে। আমি এখনও চাই সেটি।

বি. চৌধুরী বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম যে, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্যের রূপরেখায় সেটির উল্লেখ থাকতে হবে। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে-জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য দিল তাঁর কোথায় ক্ষমতার ভারসাম্য খুঁজে পাবেন না। সেখানে একটি দলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা এই জোট থেকে সরে এসেছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরী বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য গতরাতের বৈঠকেও (আ স ম আবদুর রবের বাসায় শুক্রবার রাতের বৈঠক) উত্থাপন করা হয়নি। আমরা এ নিয়ে অন্ধকারে ছিলাম। সেই সঙ্গে আজ আমাদের আমন্ত্রণ করে ড. কামাল হোসেন দরজা বন্ধ করে রাখেন। এটি কেমন সংস্কৃতি, প্রশ্ন রাখেন মাহী।

 

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি