ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ
যেন পাশ্চাত্যের সমৃদ্ধ পাঠশালা
প্রকাশিত : ১৩:০১, ২৪ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ২২:২৫, ২৫ জুলাই ২০১৭
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কাজের ক্ষেত্র, বাড়ছে পড়ালেখার বিষয়। আগের অনেক বিষয়ই এখন ক্যারিয়ার গড়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। সেখানে নতুন অনেক ডিসিপ্লিন তরুণদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এমন একটি তুলনামূলক নতুন বিষয় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা উন্নয়ন অধ্যয়ন।
সহপাঠীদের মুখে আগেই শুনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ব্যতিক্রম (অনেকটা পাশ্চাত্য ঢংয়ের) শিক্ষাক্রম সম্পর্কে। মনের ভেতরে আগ্রহ জন্মে এ সম্পর্কে জানার ও চোখে দেখার। মনে হল বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফকে ফোন করে সাক্ষাৎকারের সময় চেয়ে নিই।
ক্যামেরাপারসন রাফিকে সঙ্গে নিয়ে সময়মতো হাজির হলাম সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বহুতলা ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় উন্নয়ন অধ্যয়ন ডিপার্টমেন্টের বিভাগীর দফতরে। ড. ইউসুফ আসতে একটু দেরি। দেখা পেলাম বিভাগেরই শিক্ষক অধ্যাপক ড. তৈয়বুর রহমানের। তার কাছে জানতে চাই শিক্ষার্থীরা এত এত বিষয় থাকতে কেন উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়তে আগ্রহী হচ্ছে?
ড. তৈয়বুর জানালেন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ মাল্টিডিসিপ্লিনারি ও গতিশীল সাবজেক্ট। এখানে অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবেশ, সমাজবিজ্ঞান, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, প্রত্নতত্ত্ব, পরিবেশ সংক্রান্ত নীতি, নিরাপত্তা ও নীতি নির্ধারণসহ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে গভীরে গিয়ে (ইনডেপথ) জানার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা।
বিসিএস, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংগঠন, আইএনজিও, এনজিও, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, মানবাধিকার সংস্থা, পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাই ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এ যুগের শিক্ষার্থীদের বিষয় পছন্দক্রমের শীর্ষ স্থান দখল করতে যাচ্ছে।
গত কয়েকবছরে এটি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। বিভাগের অত্যাধুনিক শ্রেণীকক্ষ, সুসজ্জিত কনফারেন্স কক্ষ, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ঘুরে দেখান ড. তৈয়বুর রহমান। জানান, এই বিভাগের ল্যাবটি অন্য যে কোনো বিশ্বদ্যিালয়ের চেয়ে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ। রয়েছে পর্যাপ্ত কম্পিউটার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট ফ্যাসিলিটি, নেট ব্যবহার করে দুর্লভ আর্টিকেল ডাউনলোডের সুযোগ।
ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাসের আদলে পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয় এ বিভাগে। ক্লাস সাইজ ছোট হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ওয়ান টু ওয়ান টেককেয়ার করার সুযোগ পান শিক্ষকরা। এখানকার ফ্যাকাল্টিরাও বেশ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, আইইউসিএনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. নিয়াজ আহমেদ, ড. মাহবুব উল্লাহ, ড. রেজাউল হক, রওনক জাহানের মতো বরেণ্য শিক্ষাবিদরা এ বিভাগে পাঠদান করান। ড. তৈয়বুর জানান, শুধু পাঠদানই নয় এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানবিক ও নৈতিক দিকগুলোও যত্নসহকারে শেখানো হয়।
দেশের কয়টি বিশ্বদ্যিালয়ে বর্তমানে উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়ানো হচ্ছে জানতে চাইলে ড. তৈয়বুর জানান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়ানো হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স, ১ বছর মেয়াদি রেগুলার মাস্টার্স, প্রফেশনাল মাস্টার্স, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য মাস্টার্স ছাড়াও এমফিল, পিএইচডি, গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স করারও সুযোগ আছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসেও উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়ানো হচ্ছে। বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিষয়টি পড়ানো হচ্ছে।
সাক্ষাৎকার : অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ
আমাদের গ্রাজুয়েটদের চাকরির
জন্য অপেক্ষা করতে হয় না : ড. আবু ইউসুফ
প্রফেসর ড. মো. আবু ইউসুফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনোমিক্স বিভাগে আন্ডারগ্রাজুয়েট করেন। সেখানে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এবং মাস্টার্সেও ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। ডেপেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স করেছেন হ্যাগের ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল স্টাডিজ থেকে। পরবর্তীতে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি দারিদ্র, সামাজিক নিরাপত্তা, ওপেন বাজেট ও হেল্থ বাজেট অ্যানালাইসিসসহ বিভিন্ন ইস্যুতে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের শিক্ষার্থীদের জব প্রসপেক্টস সম্পর্কে সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় ইটিভি অনলাইনের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আতাউর রহমান। সদ্য এইচএসসি পাশ করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের সাবজেক্ট চয়েজের সুবিধার্থে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল-
ইটিভি অনলাইন : স্যার, আপনার কাছে প্রথমেই জানতে চাইব বাংলাদেশে উন্নয়ন অধ্যয়ন (ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ) বিষয়টি কখন থেকে পড়ানো শুরু?
ড. ইউসুফ : পড়ালেখার বিষয় হিসেবে উন্নয়ন অধ্যয়ন নতুন নয়। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়টি বহু আগে থেকে পড়ানো শুরু হয়েছে। বিদেশে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে উন্নয়ন অধ্যয়নে মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি করানো হয়। তবে স্নাতক বা আন্ডারগ্রাজ্যুয়েট পর্যায়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০০ সাল থেকে উন্নয়ন অধ্যয়নে মাস্টার্স পড়ানো শুরু হয়। আর ২০০৭-২০০৮ সেশন থেকে অনার্স পড়ানো শুরু হয়েছে।
আগে মনে করা হতো অর্থ-বিত্ত-বৈভবেই উন্নয়ন। কিন্তু বিশ শতকের শেষ সময়টাতে সারা বিশ্বের মানুষের উন্নয়নের জন্য বড় বড় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়। তখন মানুষ উপলব্ধি করে দারিদ্র্যকে পরাস্ত করা মানেই উন্নয়ন নয়, এর ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। সাংস্কৃতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমেই মানুষের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হয়। ’৯০ এর দশকে ইউএনডিপি খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে মানব উন্নয়ন সূচক প্রকাশ করে। বলা হয়, অর্থনেতিক উন্নয়ন মানেই উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়নের সঙ্গে সমাজ, অর্থনীতি, পরিবেশ, সুশাসন, মানবাধিকার, আয় ব্যয়ের বৈষম্য দূর- এসব বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সমাজ, রাষ্ট্রের একটি অংশের নয় বরং সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই প্রকৃত উন্নয়ন। তখন ব্যবহারিক পর্যায়ে উন্নয়নের সংজ্ঞা, সীমাবদ্ধতা, কাজের পরিধি খুঁজে বের করা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যার ব্যবহারিক সমাধান নিয়ে পড়াশোনার বিষয় হিসেবে উন্নয়ন অধ্যয়ন গুরুত্ব পাওয়া শুরু করে। বিশ্বায়নের যুগে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশও সেই প্রবাহের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছে।
২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়টি পড়ানো শুরু হয়।
ইটিভি অনলাইন: উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীরা প্রয়োগিক শিক্ষা কতটা পাচ্ছে?
ড. ইউসুফ : অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ফোকাস করে। কিন্তু উন্নয়ন অধ্যয়ন উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়গুলোকে ফোকাস করে। এখানে অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবেশ, সমাজবিজ্ঞান, সংস্কৃতি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, পাবলিক পলিসি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন. জেন্ডার, যোগাযোগ, উন্নয়নের কৌশল, গবেষণা পদ্ধতি ও প্রয়োগ, বাজেট ব্যবস্থাপনাসহ সব বিষয়ে ইন ডেপথ জানার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীদের তত্ত্ব ও তার প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব তা শেখানো হয়। শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক বিষয়গুলো শেখানোর পাশাপাশি সেগুলো উন্নয়ন কাজে কীভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে সফল হওয়া যায় তা শেখানো হয়। সুতরাং আমি বলব উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীরা কর্মমুখী ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাটাই পাচ্ছে।
ইটিভি অনলাইন: উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়ার প্রতি সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে এটা কেন?
ড. ইউসুফ : উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীদের পাস করে চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। বরং শিক্ষাজীবনের শেষ দিকেই ভালো ভালো চাকরির সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। তাই উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীরা আগ্রহী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে সম্মানে প্রতিবছর মাত্র ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকার প্রথম দিকে থাকা ২০০ থেকে ২৫০ সিরিয়ালে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যেই তা পূরণ হয়ে যায়। তাই দেখা যাচ্ছে মেধাবীরাই এ বিষয়ে পড়তে আসছে। তাছাড়া ক্লাস সাইজ ছোট থাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে টেক কেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে সবাই ভালো পড়ালেখা ও ফল করছে।
ইটিভি অনলাইন: অনেক পেশাজীবীও এখন উন্নয়ন অধ্যয়নে মাস্টার্স করছে...
ড. ইউসুফ : বহুমাত্রিক পেশার লোকজন এ বিষয় পড়তে আসছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনীর লোকজন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এনজিও, আইএনজিওসহ বহু লোকজন উন্নয়ন অধ্যয়নে মাস্টার্স বা পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স করতে আগ্রহী হচ্ছেন। আইবিএর শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে পড়তে আসছেন। প্রতিটি মানুষ উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর উন্নয়নের শিক্ষাটাই হচ্ছে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ। এখানকার শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে লব্ধ জ্ঞানের ব্যবহার করতে পারছে। তাছাড়া এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানবিক শিক্ষাটাও দেয়া হচ্ছে।
ইটিভি অনলাইন: অন্যান্য বিষয়ের মতো ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের আবেদনও ভবিষ্যতে কমে আসার সম্ভাবনা আছে কিনা?
ড. ইউসুফ : বাংলাদেশ এতদিন শতাব্দী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) নিয়ে কাজ করেছে। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিয়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এমডিজি ও এসডিজির সব বিষয়ই উন্নয়নকে কেন্দ্র করে। আর উন্নয়নের সব উপাদান নিয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গ্রাজ্যুয়েটদের কাজ। তাছাড়া বাংলাদেশ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ফ্লো তে আছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল বলেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, নিরাপত্তা, অর্থনীতি, মানবিকসহ সব উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে, থাকবে। আর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ যেহেতু উন্নয়নের বহুমাত্রিক বিষয়ে ইন ডেপথ শিক্ষা দেয়। তাই শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকবে উন্নয়ন অধ্যয়ন।
ইটিভি অনলাইন : উন্নয়ন অধ্যয়ন পড়ুয়াদের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে চাই?
ড. ইউসুফ : প্রতিবছর বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের হাজার হাজার গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে। চাকরি বাজারে তারা ফাইট দিচ্ছে। অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে উন্নয়ন অধ্যয়নের ছাত্ররা যেন এগিয়ে থাকে সেভাবেই তাদের শিক্ষা দেয়া। আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শিক্ষকতায় যুক্ত হচ্ছেন। ঢাবির সম্মান প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২০১৩ সালে স্নাতক শেষ করেছে। এ পর্যন্ত তিনটি ব্যাচ বের হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জন আমাদের বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। একজন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, একজন ঢাবির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটে, একজন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সারা বাংলাদেশে প্রথম হয়েছেন উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থী। পুলিশ, প্রশাসনসহ বিসিএসের অন্যান্য ক্যাডারও পাচ্ছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা। ইউএনডিপি আমাদের ছাত্রছাত্রীদের বায়োডাটা চেয়ে রাখে। ইউসেপের নির্বাহী পরিচালক উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থী। অক্সফাম, একশন এইড, বিশ্বব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কেয়ার, পিকেএসএফ, বিইআই, ইউনিসেফ ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও আইএনজিওতে উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাহিদা। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এখানকার শিক্ষার্থীদের বেশ চাহিদা। জাপানসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে ট্রেইনি হিসেবে আমাদের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন।
ইটিভি অনলাইন: এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ হচ্ছে কিনা?
ড. ইউসুফ : পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীরা চাইলে ভালো বেতনে খণ্ডকালীন চাকরিও করতে পারছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ কল সেন্টার, এনজিও ও আইএনজিওতে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ডাটা কালেকশন, ফিল্ড ভিজিটেরও সুযোগ পাচ্ছে তারা। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়নের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও দেয়া হচ্ছে।
ইটিভি অনলাইন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হচ্ছে কতটা?
ড. ইউসুফ : উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীদের ইউরোপের বহু দেশে প্রতিবছর সরকারি বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ হচ্ছে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত দু’তিন বছরে ৮-১০ জন বৃত্তি নিয়ে বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ জন লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
ইটিভি অনলাইন : উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া হয়?
ড. ইউসুফ : বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর উপস্থাপনা, ভাষাজ্ঞান, স্মার্টনেট, সৃজনশীলতা গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। উন্নয়ন অধ্যয়নের শিক্ষার্থীদের সেভাবেই গড়ে তোলা হয়। তাই এখানকার শিক্ষার্থীদের চাকরি খোঁজতে হয় না। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানই তাকে খুঁজে নিচ্ছে।
ইটিভি অনলাইন: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. ইউসুফ : আপনাকেও ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে ইটিভি অনলাইনের প্রতি রইল শুভ কামনা।
//এআর
আরও পড়ুন