রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল
প্রকাশিত : ১৯:২৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৯
ক্রমবর্ধমান ধারায় দেশের রপ্তানি আয়। টানা চার মাস ধরে বাড়ছে রপ্তানি আয়। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ দুই হাজার ৫০ কোটি (২০.৫০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই অংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।
আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে এসেছে। বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ-গ্যাস সমস্যার সমাধান করেছি। রাস্তাঘাটেরও অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। এ সবের ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশেও হয়েছে; তবে এ দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম। রপ্তানি আয় বাড়াতে মার্কিন ডলার-টাকার বিনিময় হার ৮৫ টাকা করার পরামর্শ দেন তিনি।
ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে ২ হাজার ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ (১৭.০৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪২শতাংশ বেশি।এই ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৭৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত বছরের এই ছয় মাসে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৭৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
ডিসেম্বরে ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই মাসে লক্ষ্য ধরা ছিল ৩৫৫ কোটি ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার।
এ হিসাবে ডিসেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) আয় বেড়েছে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ দশমিক ৩৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৭ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারই এসেছে এখাত থেকে।
এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৮৬৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৮৪৩ কোটি ২৩ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। নিটে লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েগছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর উভেনে প্রায় ৬ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ শতাংশের মতো। কিন্তু দ্বিতীয় মাস অগাস্টেই তা হোঁচট খায়। ওই মাসে গত বছরের অগাস্টের চেয়ে আয় কমে ১২ শতাংশ।এর পরের মাস থেকে তৈরি পোশাকসহ সামগ্রিক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ শতাংশের মতো।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রপ্তানি আয় ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ কমেছে। এ খাতে আয় দাঁড়িয়েছে ৫৩ কোটি ২৩ লাখ ডলার।
একইভাবে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি আয়ও কমেছে। এ খাতে আয় হয়েছে ৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। এরমধ্যে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশই এসেছিল এই খাত থেকেই।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের সার্বিক রপ্তানি ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বাড়লেও তা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ কম। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৩৯ বিলিয়ন (তিন হাজার ৯০০ কোটি) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।
আরকে//
আরও পড়ুন