ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

রমজান অর্থ ত্যাগ

প্রকাশিত : ২২:২৫, ১৭ মে ২০১৯

রমজানের আসল কথাটা হচ্ছে ত্যাগ। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা সব রকমের ক্ষুধাকে পরিত্যাগ করছি। ভোগের জিনিস আমাদের সামনে রয়েছে অথচ আল্লাহর ভয়ে তা ছুঁয়েও দেখছি না। এরই নাম ত্যাগ। প্রথম প্রথম এই ত্যাগ একটা অভ্যাস যা রপ্ত করার চেষ্টা করি।

এরপর এক পর্যায়ে অভ্যাসটাই হয়ে দাঁড়ায় ইনসটিঙ্কট। রোজার উদ্দেশ্যও তাই-ত্যাগটা কোন লোক দেখানো ব্যাপার হবে না। ত্যাগ হয়ে যাবে চরিত্রের অঙ্গ।

বেঁচে তো থাকে জঙ্গলের পশুপাক্ষীও। মানুষের বেঁচে থাকাটা ভিন্ন। খাবারের নন্দনতত্ত্ব জানে, খাবারের সমঝদার যে, সে কখনোই বেশি খায় না। সে কখনই পেটুক হতে পারে না। আর পেটুক যে, সে কিন্তু খাবারের সমঝদার হতে পারে না। পেটুক কোন জিনিসের স্বাদ গ্রহণ করে না। সে খায় উদরপূর্তি করার জন্যে।

সুতরাং ইচ্ছাকে ত্যাগ না করতে পারলে ভোগী হওয়া যায় না। কোন কিছু ত্যাগের মাধ্যেই রয়েছে প্রকৃত ভোগ। ত্যাগ ছাড়া ভোগ হয় না। আর ভোগ মানে আকন্ঠ ভোজন নয়। ভোগ মানে খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ, খাদ্যের সৌন্দর্য এবং মহিমাকে উপলব্ধি করা।

ত্যাগ তিন প্রকার: চিন্তার ত্যাগ, ইচ্ছার ত্যাগ এবং স্বার্থের ত্যাগ। মানুষ স্বার্থের ত্যাগ হয়ত করতে পারে। কিন্তু চিন্তা এবং ইচ্ছার ত্যাগ যখন সম্ভব হয় তখনই সাধক প্রকৃত ভোগী হতে পারে। একটা গল্প দেওয়া যাক, ইব্রাহীম বলখীর বিপুল শান শওকত।

ভোগবিলাস, দাসদাসী, মণিমাণিক্য। মানুষ এক জীবনে যা চাইতে পারে তার কিছুই কম ছিল না তার। একদিন বাদশাহ দেখলেন তারই ক্রীতদাসী ঘুমিয়ে পড়েছে তার মখমলের নরম বিছানায়। বাদশাহ ক্রুদ্ধ হয়ে চাবুক মারলেন তাকে। আঘাতে জরর্জরিত দাসী শুধু একবার বললো, আমি ভুল করে এক বার এ বিছানায় ঘুমিয়েছি বলে আমার এত শাস্তি। আর যিনি এ বিছানায় প্রতিদিন ঘুমান, তার জন্য না জানি কি শাস্তি নির্ধারিত আছে। বাদশাহ’র হাত থেকে চাবুকটা পড়ে গেল। এক অদৃশ্য চাবুকের ঘায়ে জর্জরিত ইব্রাহীম ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর সেই ইব্রাহীম পেলেন আল্লাহ নৈকট্য। সে ইব্রাহীম একজন নতুন মানুষ। ফকির ইব্রাহীম। কর্পদকহীন ইব্রাহীম। কিন্তু সে ইব্রাহীমের চেয়ে ধনী অন্য আর কেউ নেই। কারণ আল্লাহর তামাম খাজনা তখন তার হয়ে গেছে। ফকির ইব্রাহীমের আদেশে নদীর স্রোত স্তব্ধ হয়ে যায়। গাছপালা, পশুপাখী ইব্রাহীমকে সম্মান করে, সসম্মানে কুর্নিশ করে।

ত্যাগের ইব্রাহীম পেলো ভোগের মহিমা। রমজানের অন্তরে লুকিয়ে আছে এই মন্ত্রটি এ মন্ত্রের সন্ধান না পেলে রোজা হবে অভুক্ত থাকার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ত্যাগের পথে এলে তবেই ভোগের মহিমায় অভিষিক্ত হওয়া যাবে। আর সে অভিষেকে স্রষ্টা নিজ হাতে মুকুট পরাবেন রোজাদারের মাথায়। নিজের মুকুট ভুলেও নিজে বানাতে হবে না। অন্যে বানিয়ে দিলে তা মাথায় ভালো দেখায়। নিজের বা অন্যের দেওয়া উষ্ণীষ মাথায় দিয়ে সম্রাট হওয়ার প্রচেষ্টা করা যাবে না। তাহলে তোমার চেয়ে দরিদ্র আর কেউ হবে না।

সূত্র: হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি’র (রহ) সংলাপ সমগ্র বই থেকে সংগৃহীত।

 

এমএস/ এসএইচ/

  


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি