রমজানে ডায়াবেটিক রোগী কী খাবেন কী খাবেন না
প্রকাশিত : ১৫:৩৮, ৮ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৬:৫১, ৮ মে ২০১৯
মাহে রমজান, সিয়াম সাধনার মাস। মাসটি আমাদের সবার কাছেই ধর্মীয় দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসটিতে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের অনেক ভিন্নতা চলে আসে। যারা ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত তাদেরও ভিন্নতা আসে মেডিকেশন ও ডায়েটে। ডায়াবেটিকে আক্রান্ত অনেক রোগীই চিন্তায় পরে যান যে সুস্থভাবে তারা রোজা পালন করতে পারবেন কি না। তাই রমজানের শুরুতেই ডায়াবেটিক রোগীদের ডায়েট নিয়েই আজকের আলোচনা।
যারা অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত তারা রোজার আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের ওরাল মেডিসিন অথবা ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করে নেবেন এবং সেইসঙ্গে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গেও ডায়েট বিষয়ক পরামর্শ করে নিতে হবে। কেননা যারা ওরাল মেডিসিন নিবেন ও যারা ইনসুলিন নিবেন তাদের ডায়েটে ক্যালরির ভিন্নতা থাকবে।
প্রথমেই আসি ইফতারে। রমজান মাসের প্রথম খাবার হল ইফতার। তরল পানীয় বা শরবত হিসেবে ডায়াবেটিক রোগীরা ইফতারটি শুরু করতে পারেন ডাবের পানি বা লেবুর শরবত অথবা মৌসুমি ফলের মধ্যে যেগুলো কম মিষ্টিযুক্ত সেগুলো দিয়ে। তবে সে ক্ষেত্রে চিনি ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া টক দইয়ের লাচ্ছি বা লাবাং হতে পারে ইফতারের স্বাস্থ্যকর পানীয়। সেইসঙ্গে ছোট দুটি খেজুর। খেজুরে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার রয়েছে, তাই খুব ধ্রুত ব্লাড সুগার বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। ইফতারটি হতে হবে সুষম ও পুষ্টিকর এবং সেইসঙ্গে এটাও খেয়াল রাখতে হবে ইফতারের দুই ঘণ্টা পর ব্লাড সুগার কেমন থাকছে। কার্বোহাইড্রেট এর উৎস হিসেবে মুড়ি, চিড়া অথবা ওটস এগুলোর মধ্যে যে কোনও একটিকে ইফতারে বেছে নিতে পারেন ডায়াবেটিক রোগীরা। ছোলা সেদ্ধ, টক দই, ডিম হতে পারে প্রোটিন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভাল উৎস। সেই সঙ্গে পরিমিত পরিমাণে টক জাতীয় ফল। তবে যে দিন ফলের শরবত খাবেন সে দিন আর কোন ফল খাবেন না। ইফতারটিকে লো গ্লাইসেমিক করার জন্য রাখা যেতে পারে সবুজ সালাদ।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পরামর্শ থাকবে তারা যেন কখনই রাতের খাবার বা ডিনার বাদ না দিয়ে থাকেন। কেননা ছয়টি খাবারের সময়ের পরিবর্তে রমজানে মাত্র তিনটি খাবারের সময়ের মধ্যে ডায়াবেটিক ডায়েটটিকে সঠিকভাবে ভাগ করা হয়। রাতের খাবারে হালকা কিছু কিন্তু পুষ্টিকর খাবার থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে লাল আটার রুটি, সবজি, মাছ বা মাংস। সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি যেন পানি শূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য না দেখা দেয়।
সেহরির খাবার না মেন্যুটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেহরিতে ওরাল মেডিসিন বা ইনসুলিনের মাত্রাও পরবর্তী দিনের জন্য বিবেচনার বিষয়। তাই সেহরির মেন্যুতে এমন খাবার নির্ধারণ করতে হবে যা সারা দিন ডায়াবেটিক রোগীদের এনার্জি দিবে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হবে। সে ক্ষেত্রে সেহেরিতে ভাত হতে পারে কার্বোহাইড্রেট এর ভাল উৎস যা সারা দিন শরীরে গ্লুকোজের সরবারহ করে থাকবে। নরম করে রান্না করা আঁশযুক্ত সবজি ফাইবারসহ গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পুরন করবে। মাছ হতে পারে প্রোটিনের উৎস। তবে কেও যদি মাছ সেহরিতে খেতে না চান সে ক্ষেত্রে মাংস, ডিম বা টক দইকে প্রোটিন হিসেবে নিতে পারেন।
লেখক: সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান, আজগর আলী হাসপাতাল।
আআ//