ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

রমজানে ডায়াবেটিস রোগী কী খাবেন, কী খাবেন না?

প্রকাশিত : ১৬:২৮, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৪২, ২ মে ২০১৯

বর্তমান বিশ্বে প্রায় কোটি কোটি মুসলিম রমজান মাসে রোজা পালন করেন। রমজানে খাদ্য ও পানীয়ের পরিমাণ এবং সময় সূচির পরিবর্তনের কারণে একজন ডায়াবেটিস রোগী বেশ কিছু ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন: হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তের শর্করা অতিরিক্ত কমে যাওয়া, হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা রক্তের শর্করা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, রক্তের অম্লত্ব বেড়ে যাওয়া, পাণিশুন্যতা

♦রমজানে রোজা পালনে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ডায়াবেটিস রোগী কারা?

রমজান শুরু হওয়ার পূর্বের তিন মাসের মধ্যে রক্তের শর্করা অতিরিক্ত কমে গেলে, প্রায়ই রক্তের শর্করা কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে, রক্তের শর্করা অতিরিক্ত কমে যাওয়ার বিষয়টা রোগী নিজে বুঝতে না পারলে, রক্তের শর্করা অনেক বেশী থাকলে এবং রমজান শুরু হওয়ার পূর্বের তিন মাসের মধ্যে রক্তের অম্লত্ব বেড়ে যাওয়ার অতীত ঘটনা থাকলে রোজা পালন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া রমজান শুরু হওয়ার পূর্বের তিন মাসের মধ্যে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে গেলে কিংবা গর্ভাবস্থা হলে রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত কায়িক শ্রম যারা করেন যেমন শ্রমিক, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, কিডনী রোগী- যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ রোগীর ডায়াবেটিস জটিলতা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে, শারীরিক অসুস্থতা- জ্বর, ডায়রিয়া ইত্যাদি থাকলেও রোজা পালন ঝুঁকিপূর্ণ।

ঝুঁকিপূর্ণ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রমজানে রোজা পালন না করাই উত্তম। কেউ যদি রোজা রাখতে চায় তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের অনুমতি নিতে হবে।

♦রমজান শুরু হওয়ার পূর্বে করণীয়:

চিকিৎসক কর্তৃক রক্তের শর্করা, রক্তচাপ ও রক্তের চর্বির পরিমাণ পরিমাপ করে তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হবে। রমজানের খাবারের পরিমাণ ও সময়সূচী এবং ওষুধ ও ইনসুলিনের পরিমাণ চিকিৎসকের কাছ থেকে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।

♦ রমজানে করণীয়:
ডায়াবেটিস রোগীর রমজানে খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। রমজানে সাধারণত তিনবার খাওয়া হয়। তা হলো ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী।

ইফতার: পাণিশুন্যতা রোধ এবং শরীরে বিভিন্ন ক্রিয়ার জন্য শরবত একটি অপরিহার্য পানীয়। বিকল্প চিনি দিয়ে ইসুবগুল, তোকমা, লিচু, কাঁচা আম কদবেল তেঁতুলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। অথবা একটি কচি ডাব খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের খাবারের পরিমাণ পরিমাণ হবে সকালের নাস্তার সমপরিমাণ। ইফতারে ডায়াবেটিস রোগীরা সাধারণত যেভাবে ইফতার নিতে পারে তা হলো:
ক. ছোলা ভাজা - ১/২ কাপ,
খ. পেঁয়াজু -২ টা,
গ. বেগুনি - ২ টা,
ঘ. মুড়ি দেড় কাপ,
ঙ. খেজুর ১টা,
চ. শসা, গাজর ইত্যাদি ইচ্ছামতো,
ছ. পানি পরিমাণ পর্যাপ্ত।

সন্ধ্যারাতে যা খাওয়া যেতে পারে:
ক. ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সন্ধ্যার খাবার একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত নয়।
খ.অন্যান্য সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমাণ হবে এ খাবার।
গ.সন্ধ্যারাতে ভাত খাওয়া যাবে। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বরাদ্দ অনুযায়ী খাবাারের পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঘ. সন্ধ্যারাতে হালকা মসলায় রান্না করা যে কোনো ছোট-বড় মাছ এবং সবজি থাকলে ভালো হয়।

সেহেরী খাওয়ার নিয়ম: ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সেহরীর কিছু পূর্বে খাওয়া সেহেরী খাওয়ার উপযুক্ত সময়। এতে করে দিন শেষে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি কমবে।
ক.সেহরীতে রুটি অথবা ভাত পছন্দ অনুযায়ী গ্রহণ করা যাবে।
খ. সেহেরীতে খেতে হবে অন্যান্য দিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ খাবার।
গ.মাংসের পরিবর্তে ডিমও খাওয়া যেতে পারে।
ঘ.সেহরীতে এক কাপ দুধ খাওয়া যাবে।

লেখক: ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি