রমজানের সুস্থতা, রমজানে শুদ্ধতা
প্রকাশিত : ১৭:৩৮, ১৯ মার্চ ২০২৩ | আপডেট: ১৮:১২, ১৯ মার্চ ২০২৩
সার্বিক সুস্থতা লাভের অনন্য সুযোগ পবিত্র রমজান। নবী করিম (সা.) বলেন রোজা রাখো যাতে তোমরা সুস্থ থাকতে পারো।‘ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আবু হুরায়রা (রা.) তাবারানী। সকল ধর্মে রোজা, সিয়াম, ফাস্টিং, উপবাস বা অটোফেজিকে সম্পূর্ণ সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি বলা হয়। অর্থাৎ নিজেকে সংশোধন করা সকল দিক থেকে।
শারীরিক সুস্থতার জন্য রমজানে সঠিক খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত ঘুম, রুটিন অনুসারে দৈনন্দিন কাজের অভ্যাস করুন। মনসিক সুস্থতার জন্য ইতবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, কৃতজ্ঞচিত্ত ও সমমর্মিতার চর্চা করুন। সামাজিক সুস্থতা বাড়াতে সবাইকে আগে সালাম দিন বাস্তব সামাজিক যোগাযোগ বাড়ান। আত্মিক সুস্থতার জন্য রমজানের সংযমকে অভ্যাসে রূপান্তরিত করুন।
অর্থাৎ রোজা রমজান মাস থেকে উপকৃত হতে চাইলে এর শুদ্ধতাও মেনে চলতে হবে।
রোজা মানে সংযম, নিয়ম মেনে চলা। সেহেরী বা ইফতারে নানা বাহারি খাওয়ার উৎসব রমজানের শুদ্ধাচার নষ্ট করবে। অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
রোজার উপকারীতা এখন গবেষণায় প্রমাণিত। রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমে। স্মৃতিভ্রম জাতীয় মস্তিষ্কের বয়সজনিত রোগগুলোর ঝুঁকি কমায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইনসুলিন দেহে ছড়িয়ে পড়ে ভারসাম্যপূর্ণ মাত্রায়। উচ্চ রক্তচাপ হার্ট এটাকের ঝুকি ও আলসারেরসমস্যা কমে।
দেহ মনের বিষাণূ দূর করে:
রোজায় সাময়িক খাদ্য সংকটকালে দেহকোষের অভ্যন্তরে সৃষ্ট টক্সিনগুলোর বিনাশ ঘটে। এই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম অটোফেজি। জাপানের চিকিৎসাবিজ্ঞনী ইউশিনোরি ওসুমির গবেষণা অনুসারে অটোফেজি চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকে যখন টানা ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকছেন।
সেহরিতে খাবার তালিকা:
স্বল্প পরিমাণে ভাত সবজি , কলা খেজুর, দই চিড়া খান। মাছ মাংস ডিম এবং তেলে ভাজা খাবার বর্জন করুন। চিকিৎসকদের মতে, প্রোটিন জাতীয় খাবার পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং যেকোনো ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে এক কোষ রসুন ও ২০ থেকে ২৫ দানা কালোজিরা চিবিয়ে খান। রমজানে সীমিত প্রাকৃতিক খাবারবাড়তি ওজন কমিয়ে দেয়।
ইফতারে খাবার তালিকা:
ইফতারে খেজুর খেয়ে পানি পান করুন। এতে পাবেন তাৎক্ষণিক প্রাণশক্তি। চিনিযুক্ত বা বাজারের রং দেওয়া শরবত বর্জন করুন।
মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার (ভাত শাক সবজি, মাছ মংস ডিম ডাল সহ অন্য সুষম খাবার সালাদ লেবু ছোলা টক দই খান। মৌসুমি ফল চিবিয়ে খান। ভোজনরসিক হবেন না।
খাদ্য উৎসব থেকে দূরে থাকুন:
বিলাসবহুল হোটেল / রেস্তোরায় খাদ্য মেলায় ইফতার পার্টিতে অংশ না নেওয়াই ভালো। দাওয়াতে গেলেও ভাজাপোড়া তৈলাক্ত খাবার কৌশলে এড়িয়ে যান। মোগলাই ও চাইনিজ ফুড, গরু খাশি এ মাসে যত কম খাবেন তত ভালো।
হাদীসে বলা হয়েছে সৃষ্টির সেবায় কাজ এতেকাফের চেয়েও বেশি সোয়াবের ।
সেহরি শুরু করুন দান করে এতিম ও অনাথের কল্যাণে। রমজানে দান ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের। রোজা রেখেও রক্ত দেয়া যায়, রক্ত দিন। যাকাত দিন সংঘবদ্ধভাবে।
আল্লাহ সচেতন হোন
আল্লাহ আপনাকে দেখছেন-রোজা রেখে এই অনুভূতি নিয়ে নামাজ আদায় করুন। কোরআন ও হাদীস চর্চায় সময় নির্দিষ্ট করুন।
রোজা নিয়ে নবী করিম সা. এর কয়েকটি হাসিদ এখানে দেওয়া হলো-
রমজান মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে। আর কোরআন হচ্ছে মানুষের জন্যে সঠিক জীবনদৃষ্টি ও সত্যপথের দিশারি এবং ন্যায়-অন্যায়, সত্য ও মিথ্যা নিরূপণের নিরঙ্কুশ মানদণ্ড। অতএব এখন থেকে যারাই এ মাস পাবে, তাদের জন্যে পুরো মাস রোজা রাখা অবশ্য কর্তব্য। তবে যদি কেউ অসুস্থ বা সফরে থাকে, তবে সে অন্য সময়ে সমসংখ্যক দিন রোজা রাখবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে বিষয়টি সহজ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোনো কঠোরতা আরোপ করেন নি। কারণ তিনি চান, তোমরা রোজার নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করো, সত্যপথ প্রদর্শনের জন্যে স্রষ্টার মহিমা বর্ণনা করো, যেন তোমরা শোকরগোজার হতে পারো।
---সূরা বাকারা
হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহ-সচেতন থাকতে পারো।
--সূরা বাকারা
আল্লাহ বলেন, মানুষের প্রতিটি আমল বা কাজ হচ্ছে তার নিজের জন্য। আর রোজা হচ্ছে কেবর আমার জন্য। (আমার জন্যই সে খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকে এবং যৌন কামনা বাসনাকে সংযত করে।) তাই রোজার পুরস্কার আমিই তাকে দেও। রোজা হচ্ছে (পাপাচার ও জাহান্নামের আগুনের বিরুদ্ধে)বর্ম।
অতএব তোমরা যখনই রোজা রাখো তখন ফালতু আজেবাজে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না, চেঁচামেচি করবে না। কেউ গালি দিলে বা ঝগড়া করতে এলে বলবে আমি রোজাদার। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও পছন্দনীয়। রোজাদার দুটি আনন্দ লাভ করে। প্রথমত ইফতারের সময় । দ্বিতীয় আনন্দ লাভ করবে যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে।
---আবু হুরায়রা (রা.); বোখারী, মুসলিম
মানুষের প্রতিটি সৎকর্মের নেকি আল্লাহ গুণিতক করেন। ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি দান করেন। আর রোজার নেকি আল্লাহ নিজে দিবেন। কোনো সীমা ছাড়া , তার ইচ্ছা অনুসরে।
--আবু হুরায়রা (রা.); মুসলিম
রোজাদার যদি মিথ্যাচার ও অশোভন কাজ পরিহার না করে তবে তার পানাহার বর্জন আল্লাহর কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না।
--আবু হুরায়রা (রা.) বোখারী
নবীজী (সা.) বলেন এ মাসে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম । রমজানের শেষ ১০ দিন বিজোড় রাত্রি গুলোতে ইবাদতে নিমগ্ন হোন।
রমজানের শুদ্ধাচার
রমজান মাসে রোজা রাখা সুস্থ ও সক্ষম মুসলমানের জন্য ফরজ। রোজা ও আনুষঙ্গিক ইবাদতকেই প্রাধান্য দিন। রমজানকে কেনাকাটা সর্বস্ব করে ফেলবেন না। জরুরি ও আবশ্যক ছাড়া বাইরের অন্য কাজ রমজানের আগেই সেরে ফেলুন। সেহরি শেষে দাঁত ব্রাশ ও ওজু করে কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসুন। আযান হয়ে গেলে ফজরের নামাজ পড়ে নিনমেডিটেশন করে দিনের কাজ শুরু করুন। মাগরিবের আযানের আগে আল কোরআন ও হাদীস পাঠের আসরে নিমগ্ন হোন।
অপ্রয়োজনীয় কথা বিতর্ক ঝগড়া উত্তেজনা চেচামেচি ও দুর্ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যরা করলেও আপনি প্রশান্ত থাকুন। পরচর্চা ও গীবত নিজে করবেন না। অন্যরা করলে অংশ নিবেন না এবং নিষেধ করবেন। প্রতিদিন ইফতারের আগে নিজের ও অন্যের জন্য একটি করে প্রার্থনায় নিমগ্ন হোন।
রমজানে স্কিোন থেকে নিজেকে যথাসম্ভব দূরে রাখুন। ইফতারের এক ঘণ্টা আগ থেকে তারাবীহ নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সমার্টফোন পুরোপুরি বন্ধ রাখুন। স্মার্টফোন থেকে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম টিকটক সহ সোশ্যাল মিডিয়া ও গেম অ্যাপ ডিলিট করুন।
এসবি/