ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ করুন :গুতেরেস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৪, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:১৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারে অনতিবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি সেদেশের সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ করতে হবে। আর সেখান থেকে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব এ আহবান জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আট বছর পর উন্মুক্ত বৈঠক হয় জাতিসংঘে। সেখানে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান সঙ্কট দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। গত মাসে শুরু হওয়া এ সঙ্কটে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বাস্তু সমস্যার দিকে মোড় নিচ্ছে। যেখানে মানবিক বিপরর্যেয় দেখা দিয়েছে এবং মানবাধিকার দু:স্বপ্নে পরিণত হচ্ছে।  
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, মিয়ানমার সরকারকে তিনটি বিষয় মেনে নিতে হবে। প্রথমত, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মানবিক সহায়তার জন্য আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

গুতেরেস আরো বলেন, রাখাইনে সহিংসতায় দ্রুততম সময়ে শরণার্থী সংকটের সৃষ্টি করেছে। এর ফলে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের কাছ থেকে নির্যাতনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানা গেছে।     

রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর একটি বৈঠক হয়েছিল।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রোজ এই শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে ‘জাতিগত নির্মূলকরণ’ উল্লেখ করে একটি বিবৃতি দেয় জাতিসংঘ।


গুতেরেস বলেন, রাখাইনে সহিংসতা রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুতই বিশ্বের বড় উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে, যা মানবিকতা ও মানবাধিকারের জন্য ‘দুঃস্বপ্নের’ জন্ম দিয়েছে।


“পালিয়ে আসা, যাদের বেশিরভাগ নারী, শিশু ও বয়স্ক, তাদের কাছ থেকে আমরা রক্ত হিম করা বক্তব্য পেয়েছি।
“তাদের বর্ণনায় নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, বেসামরিকদের বিরুদ্ধে ভূমি মাইন ব্যবহার ও যৌন সহিংসতাসহ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকারের গুরুতর লংঘনের কথা বলে।


রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের সহিংসতার মুখে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।


রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া না মেলার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, মিশর, সেনেগাল ও কাজাখস্তানের অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদ এদিন বৈঠকে বসে।


রাখাইনে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে অবিলম্বে ত্রাণ সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গুতেরেস। জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থানে উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি।


এই সংকটের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ পুরো অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক অসন্তোষের ঝুঁকি দেখা দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহসাচিব।


হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, দশকের পর দশক শোষণ-বৈষম্যের শিকার হওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে চরমপন্থার উত্থান ঘটতে পারে।


রাখাইন পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিক্কি হেলি।


মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা মানবিক বিপর্যয়ের নিন্দা জানান তিনি। গুতেরেস রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সূত্র : আলজাজিরা।
//এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি