ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

রাখাইনের ফুটবল মাঠে সেনাবাহিনীর গুলি; গণকবরে ৪০০ লাশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:০২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৪৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের গু দার পিন গ্রাম। ফুটবল খেলার জন্য দল বাছাই করছিল নূর কাদির ও তার ১৪ থেকে ১৫ জন বন্ধু। খেলা শুরুর আগেই হঠাৎ করে টিনের চালে বৃষ্টির ফোটা পড়ার মত শব্দ। যখন বুঝলেন যে তা বৃষ্টি না ততক্ষণে মাটিয়ে লুটিয়ে পরেছে নূরের বেশ ক’জন বন্ধু।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নূর বার্তা সংস্থা এপি’র কাছে নিজেদের ওপর হওয়া এমন নির্যাতনের বর্ণনা দেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এমন অতর্কিত গুলিবর্ষণে কোন রকমে প্রাণে বেঁচে যান তিনি আর তার এক বন্ধু। আর নিজেদের আরও কিছু বন্ধুদের লাশ দেখেছেন গণকবরে।

বিকৃত অবস্থায় গণকবরে সেসব লাশ দেখেছেন নূর। তবে লাশের শরীরে থাকা কাপড় দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে তার বন্ধুরাই লাশ হয়ে শুয়ে আছে এ গণকবরে। সেসব লাশের চেহারা ছিল এসিড ঝলসানো এবং গুলিবিদ্ধ। এপি’কে নূর বলেন, “লাশগুলোকে কবরে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল”।

এপি জানিয়েছে, মিয়ানমারে নতুন করে কিছু গণকবরের প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে।

তাদের দাবি, তারা যেসব তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে তাতে মনে হচ্ছে গত আগস্ট মাসে সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন রাজ্যের গু দার পিন গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী, স্যাটেলাইটে পাওয়া চিত্রের সাথে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বর্ণনার মিল পাওয়া যায়। বিবিসি জানায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) বলছে, তারা ঐ গ্রামের স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া কিছু ছবি সংগ্রহ করেছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার কিছু ভিডিও-ও তাদের হাতে এসেছে।

স্যাটেলাইটের চিত্র এবং রোহিঙ্গাদের ভাষ্য অনুযায়ী অন্তত পাঁচটি গণকবরের সন্ধান মিলেছে।

এসব গণকবরে ৪০০`র মতো মানুষকে চাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

তবে গু দার গ্রামটিতে কাউকে প্রবেশ করতে দেয় না মিয়ানমার। আর সে কারণে নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা অনুমানের থেকে অনেক বেশি।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গারা গ্রামটিতে ৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য একত্রিত করেছে।

অন্য গ্রামবাসীরা বলছে, মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪০০`র মতো হবে। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং সরাসরি মৃতদেহ দেখার ওপর ভিত্তি করে তারা এসব কথা বলছেন।

এপি বলছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত যেসব রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই বলেছেন যে গু দার পিন গ্রামের উত্তরদিকে যে প্রবেশপথ রয়েছে, সেখানে তারা তিনটি বড় গণকবর দেখেছেন।

ঐ জায়গায় অধিকাংশ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা।

অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন যে পাহাড়ের কাছে একটি কবরস্থানে তারা দুটি কবর দেখেছেন।

জায়গাটি গ্রামের একটি স্কুলের কাছাকাছি। গ্রামে হত্যাকাণ্ড চালানোর পর ১০০`র বেশি সৈন্য ঐ স্কুলে তাদের ঘাটি গেড়েছিল।

ঐ গ্রাম থেকে যেসব রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে জীবন বাঁচিয়েছেন, তাদের ধারণা অগাস্ট মাসের ২৭ তারিখের হত্যাকাণ্ড ছিল বেশ পরিকল্পিত। হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য সৈন্যরা শুধুই রাইফেল, ছুরি, গ্রেনেড এবং রকেট লঞ্চার আনেনি - সাথে অ্যাসিডও নিয়ে এসেছিল তারা।

নিহতদের পরিচয় নিশ্চিহ্ন করতে অ্যাসিড দিয়ে নিহতদের মুখমণ্ডল এবং শরীরের অংশ ঝলসে দেওয়া হয়। প্রায় ২০০ সৈন্য ঐ হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয় বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এ হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া ঐ গ্রামের বাসিন্দা ২৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ রইস বলেন, “মানুষজন তখন চিৎকার করছিল, সৈন্যদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছিল।"

এদিকে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেছেন, যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা গণহত্যার চিহ্ন।

তিনি বলেন, গণহত্যার খবর অবশ্যই গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা উচিত।

 

এসএইচএস/টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি