ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

রাগ-ক্ষোভ-অভিমান ঘৃণা শান্তি নষ্ট করে

প্রকাশিত : ১১:১৬, ৬ এপ্রিল ২০১৯ | আপডেট: ১১:৩১, ৬ এপ্রিল ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

রাগ-ক্ষোভ-অভিমান হলো আত্মবিনাশী আবেগ। তখন ব্রেন কাজ করে না, কাজ করে প্রবৃত্তি। মনে রাখতে হবে, দৈহিক শক্তির চেয়ে আসল শক্তিটা হচ্ছে বুদ্ধির শক্তি। রাগ-ক্ষোভ-অভিমান এই ব্রেনকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অন্তরায় তৈরি করে। এ নেতিবাচক আবেগের বশে যে কাজ করা হয় তা কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না।

নেতিবাচক আবেগগুলো একা থাকে না, গুচ্ছ গুচ্ছভাবে থাকে। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বলি। এক ভদ্রলোক কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছেন। একটা হোটেলে উঠেছেন। বিকেলে সি-বীচে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে তিনি হোটেলের রেস্টুরেন্টে বলে গেলেন  ফিরতে দেরি হতে পারে। তাই রাতের খাবারটা যেন তার রুমে দিয়ে আসা হয়।

সি-বীচে গিয়ে তার অনেক ভালো লাগছে। সমুদ্রকে ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করছিল না। তাই হোটেলে ফিরতে একটু রাত হলো। বেশ ক্ষুধা লেগেছে। হোটেলে ফিরে দেখলেন, রুমে খাবার দিয়ে যায় নি! রেস্টুরেন্ট ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে! হোটেলের ম্যনেজার জানালেন, রুম সার্ভিস বন্ধ! মুহূর্তে তার অনুভূতি পাল্টে গেল। মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে! দিলেন এক ধমক! “বিকেলে কেন বলেছিলেন, রুমে খাবার দেওয়া যাবে?”

বাইরে গিয়ে খেয়ে আসতে ইচ্ছা করছে না তার। রাতে তিনি শুধু বিস্কুট আর পানি খেয়ে শুয়ে পড়লেন। ঘুম আসতে দেরি হলো। পরদিন সকালে তিনি এই হোটেল ছেড়ে দিয়ে পাশে অন্য একটা হোটেলে গিয়ে উঠলেন। বিকেলে আবার তিনি যখন সী-বিচে যাচ্ছেন। যেতে হয় গতকালের হোটেলটার সামনের রাস্তা দিয়ে। হোটেলটার দিকে তিনি তাকালেনই না। এখন এই পুরো ঘটনায় লোকটির অনুভূতিগুলো একটু বিশ্লেষণ করুন। সী-বিচে বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করার সময় তার যে অনুভূতি হয়েছিল তা হলো,‘শান্তি’। 

হোটেলে ফিরে খাবার না পাওয়ার পর ম্যানেজারের কথায় ভদ্রলোকের যে অনুভূতি হয়েছিল তা হলো‘রাগ’। পরদিন যে অনুভূতি নিয়ে হোটেল পরিবর্তন করেছিলেন তা হলো, ‘ক্ষোভ’। আর পরদিন বিকেলে, সী-বিচে যাওয়ার যাওয়ার সময় যে কারণে আগের হোটেলের দিকে একটুও তাকাতেও ইচ্ছা করে নি তা হলো ‘অভিমান।’

এখানে পুরো ঘটনায় মোট চার ধরনের অনুভূতি হলো- শান্তি, রাগ, ক্ষোভ এবং অভিমান। এই চার ধরনের অনুভূতির মধ্যে শুধু ‘শান্তি’ হলো ইতিবাচক অনুভূতি আর বাকি তিনটি হলো নেতিবাচক। লক্ষ্য করুন সী-বিচের শান্তি নষ্ট করে দিয়েছিল এই নেতিবাচক অনুভূতিগুলো। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অনুভূতির পার্থক্যটা এমন যে তারা চরম শত্রুভাবাপন্ন। অর্থাৎ মনে যখন শান্তি অনুভূত হয় তখন মনে রাগ-ক্ষোভ থাকে না। আবার মনের এক দরজা দিয়ে রাগ-ক্ষোভ-অভিমান আসতে নিলেই পেছন রাস্তা দিয়ে শান্তি পালিয়ে যায়। এ যেন আলো-আঁধারির খেলা। যেখানে অন্ধকার সেখানে আলো থাকতেই পারে না।

রাগ-ক্ষোভ অভিমান আসে যখন আমরা মনে করি, কেউ আমাকে অপমানিত করেছে বা অবজ্ঞা করছে। বলা প্রয়োজন আপনাকে কারো পক্ষে অপমানিত করা সম্ভব নয় যদি আপনি নিজে অপমানিতবোধ না করেন। সবসময় মনে রাখতে হবে, সম্মানটা নিজের। কারো সম্মান কেউ কখনো কেড়ে নিতে পারে না।

নেতিবাচক আবেগের একটি বড় রূপ হচ্ছে রাগ। অনেকে বলি, রেগে গেলে আমার হুশ থাকে না, বাস্তব সত্য হলো রাগলে কারোরই হুশ থাকে না। মানুষ (মান + হুশ) অর্থাৎ মানুষ মানেই যার বোধ-বুদ্ধি সজাগ ও সচেতন থাকবে, থাকবে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ।

একটা গল্প বলি। একটি ছোট্ট মেয়ে তার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বাবার কাজ দেখছে। বাবা তার গাড়ির ময়লা সাফ করছিলেন। ধুলোয় একেবারে একাকার। মেয়েটা হঠাৎ করেই গাড়িটার ওপর একটি চক দিয়ে আকিঁবুকি করতে লাগল। বাবা যখন দেখলেন তখন তার মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। এত কষ্ট করে পরিষ্কার করছি আর তুই সেটা নষ্ট করছিস-বলেই রেগে গিয়ে কষে এক চড়। তাল সামলাতে না পেরে মেয়েটি পড়ে গেল। ব্যথায় কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেল। বাবা মেয়ের আঁকিবুকির জায়গাটা আবার পরিষ্কার করতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন সে কিছু একটা লিখেছে। ভালোমতো পড়ে দেখলেন তার মেয়ে ছোট্ট হাতে লিখেছিল-আমার বাবা অনেক ভালো। অনুশোচনায় দগ্ধ হলেন ঐ বাবা, কিন্তু ততক্ষণে ছোট্ট মেয়েটির মনে কষ্টের ছাপ বসে গেছে। আসলে উত্তেজনাকে দমন করতে না পেরে বাবা যে আচরণটি করলেন তা আর কখনোই তাকে স্বস্তি দেবে না।

রাগের উত্পত্তি মূলত অহম থেকে। আর অহম বা অহংকার থেকেই পতনের শুরু। আমরা বলি‘ রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। জার্মান দার্শনিক নীটশে বলেছিলেন, সত্যিকারের যোদ্ধা সে-ই যে জানে কখন অস্ত্র সংবরণ করতে হয়। অর্থাৎ অস্ত্র থাকলেই অস্ত্র ব্যবহার করা যায়। অস্ত্র কখন সামলে রাখতে হবে সেটা যে জানে, সে-ই হচ্ছে সত্যিকারের যোদ্ধা। অতএব আমার শক্তি রয়েছে। সেই শক্তিকে সংহত করা, নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই হচ্ছে আমার মহত্ত্ব।

আশেপাশের মানুষের জীবনে ছোট-বড় বিভিন্ন ঘটনা আছে যার মূলে রয়েছে রাগ-ক্ষোভ-অভিমান। সম্পর্ক নষ্ট হওয়া, চাকরি ছেড়ে দেয়া কিংবা সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে রাগ-ক্ষোভ-অভিমানের কারণে। আবার যৌক্তিক কোনো কারণেই রাগান্বিত হয়ে পরে আবিষ্কার করলেন চারপাশের মানুষ আপনাকে জানে বদরাগী-বদমেজাজী মানুষ হিসেবে। আগের মতো শ্রদ্ধা সম্মানের জায়গাটি হারিয়েছেন।

আবার যারা রাগ প্রকাশ করতে পারেন না, তাদের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। তখন আমরা বিরক্তি বা ঘৃণা পোষণ করি, এড়িয়ে চলি, সহযোগিতা করি না। যেমন : আমি খাব না, ঐ শিক্ষকের ক্লাস করব না, ওখানে যাবো না এরকম অসংখ্য অভিমান আমাদের সম্পর্ক ও সুযোগগুলোকে নষ্ট করে। সত্যিকার অর্থে, রাগ-ক্ষোভ-অভিমান সবসময় আফসোস বয়ে আনে।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি