ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

রাজ বধূর জন্য শাড়ি পাঠাচ্ছে ভারতের ডাব্বাওয়ালারা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৫, ১৪ মে ২০১৮

বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা। তাই বিয়ের দিন মুম্বাই জুড়ে মিষ্টিমুখ করাবেন ডাব্বাওয়ালারা। মিষ্টি দেওয়া হবে টাটা ক্যানসার-সহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের আত্মীয়দের, যারা দিনের পর দিন হাসপাতালে এসে পড়ে থাকেন প্রিয়জনের জন্য।
‘মুলগা’ (মরাঠিতে ছেলে) প্রিন্স হ্যারি এবং স্নেহের ‘সুন’ (বৌমা) মেগান মার্কলের বিয়ে ১৯ মে। ইংল্যান্ডে সেই বিয়েতে নিমন্ত্রণ না পেলেও খুশিতে মাতোয়ারা ভারতের ডাব্বাওয়ালারা।

তাদের সংগঠনের মুখপাত্র সুভাষ তালেক বলেন, ‘আমরা হ্যারির জন্য মরাঠি বরের পোশাক পাজামা-কুর্তা আর গেরুয়া পাগড়ি কিনেছি। মেগান বৌমার জন্য কেনা হয়েছে সবুজ রঙের পৈথানি শাড়ি। ব্রিটিশ হাইকমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। এগুলো আমরা বাকিংহাম প্যালেসে কুরিয়ার করব। একই রকম পোশাক হ্যারির বাবা— আমাদের চার্লস আর ক্যামিলা-র বিয়ের আগেও কুরিয়ার করেছিলাম। বছর দু’য়েক আগে উইলিয়াম আর কেট বৌমা যখন মুম্বাই আসেন, তখনও আমরা ১২ জন ডাব্বাওয়ালা দাদার থেকে তাদের জন্য পোশাক কিনে পাঠিয়েছিলাম।’
সংগঠনের সভাপতি উল্লাস শান্তারাম জানালেন, ২০০৩ সালে রাজপরিবারের সঙ্গে তাদের বন্ধন শুরু হয়েছিল প্রিন্স চার্লসের হাত ধরে। মুম্বাইয়ে এসে ডাব্বাওয়ালাদের সঙ্গে আলাদা করে দেখা করেছিলেন তিনি।

‘একশো বছর ধরে আমরা মুম্বাইয়ে কাজ করছিলাম। কেউ আমাদের গুরুত্ব দিতেন না। চার্লস যখনই ডেকে কথা বললেন, গোটা পৃথিবী আমাদের ‘ম্যানেজমেন্ট গুরু’ বলে স্বীকৃতি দিল। দিন বদলে গেল। ২০০৫ সালে চার্লস ‘ভাই’য়ের সঙ্গে ক্যামিলা ‘ভাবি’র বিয়েতে আমাদের এখান থেকে দু’জন ডাব্বাওয়ালা আমন্ত্রিতও ছিলেন!’
সেই স্মৃতি জ্বলজ্বল করছে ডাব্বাওয়ালা সোপান মারে আর রঘুনাথ মেডকে-র মনে।

পুণের কাছে একটি গ্রাম থেকে সোপান বলেন, ‘বিয়ের দিন ডাব্বাওয়ালাদের নিজস্ব সাদা পোশাক আর টুপি-ই পরেছিলাম আমরা। চার দিন ছিলাম লন্ডনে। খুব খাতির করেছিলেন তারা। পাঁচতারা হোটেলে ছিলাম। গাড়িতে যাতায়াত করতাম। রানি নিজে এসে আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছিলেন আর বলেছিলেন, আমাদের দেওয়া পোশাক তাদের খুব পছন্দ হয়েছে।’
গত আড়াই বছর মুম্বাইয়ে ‘রোটি ব্যাঙ্ক’ চালান ডাব্বাওয়ালারা, বিভিন্ন রেস্তরাঁ, হোটেল ও পার্টির বাড়তি খাবার গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। হ্যারি-মেগানের বিয়ের দিন সেই দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ভোজের আয়োজন করবেন তারা।
উল্লেখ্য, ডাব্বাওয়ালা (আগে বলা হতো টিফিনওয়ালা) একজন ভারতীয়, বিশেষত মুম্বাইয়ে, যে কর্মচারীদের বাসা থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে তাদের অফিসে পৌছে দেয়। সকালের শেষদিকে ডাব্বাওয়ালারা বাসাবাড়িতে গিয়ে লাঞ্চবক্সে (ডাব্বা) ভরে দেয়া গরম গরম খাবার নিয়ে যায়, সাইকেল বা রেলওয়ের ট্রেনে চেপে তা অন্যের কর্মস্থলে পৌঁছে দেয় এবং বিকালে আবার খালি লাঞ্চবক্স ফিরিয়ে নিয়ে যায়। মুম্বাইয়ের খাদ্য সরবরাহকারীরাও ডাব্বাওয়ালাদের কাজে লাগায়; তখন তারা কেন্দ্রীয় রান্নাঘর থেকে তৈরি/রান্নাকরা খাবার বয়ে নিয়ে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়।
মুম্বাইয়ে অধিকাংশ অফিস কর্মচারীরা বাইরের বা হোটেলের খাবারের চেয়ে ঘরে-তৈরি খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে, সাধারণত স্বাদ ও পরিচ্ছন্নতার জন্যে, যেকারণে এই ব্যবস্থার উৎপত্তি। অনেক মহিলারা ডাব্বাওয়ালাদের মাধ্যমে এরকম ঘরে-তৈরি খাবার সরবরাহ করে উপার্জন করেন।

সূত্র : আনন্দবাজার

এসএ/

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি