রাজধানীর বিপনী-বিতানগুলোয় বৈশাখী কেনাকাটার ধুম
প্রকাশিত : ১৮:৩৬, ৮ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৯:১৮, ৮ এপ্রিল ২০১৮
বছর ঘুরে বাঙালির দুয়ারে আবারও কড়া নাড়ছে প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর মাত্র পাঁচদিন পরেই শুরু হবে বাঙালি ঐতিহ্য ধারণের এ উৎসব। নতুন এ বাংলা বছরকে বরণ করে নিতে সর্বত্র তাই সাজ সাজ রব। এই দিনকে সামনে রেখে মজাদার খাবার তৈরি আর পছন্দের বাঙালি পোশাক গায়ে ধারণে প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সবাই। রাজধানীর বিভিন্ন বিপনি-বিতানে ছুটছে শিশু, তরুণ-তরুণী ও বাঙালি বধুরা। যাদের সঙ্গে কেনাকাটায় থাকছেন বাড়ির অভিভাবকরাও। তারা দেখে-শুনে কিনে নিচ্ছেন নিজের পছন্দের পোশাক। বর্ষবরণের এ বেচা-বিক্রির ব্যস্ততায় ব্যবসায়ীদের মুখেও ফুটেছে হাসি। ঈদের মতো তাদের মনেও ছড়িয়ে পড়েছে বৈশাখীর আনন্দ। আজ রোববার রাজধানীর কয়েকটি বিপনী-বিতান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বৈশাখকে সামনে রেখে রাজধানীর বিপনি-বিতানের ফ্যাশন হাউসগুলো নিয়ে এসেছে শৈল্পিক ডিজাইনের সব পোশাক। হাউসগুলোতে মেয়েদের জন্য রয়েছে থ্রি পিস, শার্ট টপস, লং টপস, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ওড়না পালাজ্জো ইত্যাদি। পাশাপাশি রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের পোশাক। এসব পোশাকের বেশিরভাগেই প্রাধান্য পেয়েছে লাল-হলুদ ছাপ।
বিভিন্ন ডিজাইনের এ পোশাকগুলোর বেশিরভাগ সুতি কাপড়ের তৈরি। এসব পোশাকের নকশা করা হয়েছে ব্লক, বাটিক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ড স্টিচ, চুমকি, এমব্রয়ডারি ও হাতের কাজ ইত্যাদি। পোশাকগুলো বৈশাখের ক্রেতাদের একইসঙ্গে ঐতিহ্য ও আরামের স্বাদ দেবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব হওয়ার কারণে এর আমেজ প্রতিবছরই বাড়ছে। ঈদ বা পুঁজা উৎসবকে বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন চোখে দেখা হলেও এ উৎসব সবার জন্য। তাই এ উৎসবে মুসলিম-হিন্দু সবাই সমানভাবে কেনাকাটায় উৎসাহী হয়। বাঙালির এ উৎসব মুখর পরিবেশে কেনাকাটায় ব্যবসায়ীদের মুখেও হাঁসি ফুঁটে। তবে এবার অনলাইনে কেনাবেচা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণে বিপনী বিতানগুলোতে সাড়া অন্যবারের তুলনায় কম।
আজিজ সুপার মার্কেটের যোগী ফ্যাশন হাউস থেকে একটি পাঞ্জাবী কিনলেন সাজ্জাদ সবুজ। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছরই এই সময় পাঞ্জাবি ক্রয় করি। অন্যান্যবার এই সময় প্রচণ্ড ভিড় থাকলেও এবার তেমন নেই। ফলে দামও যেন একটু কমই মনে হচ্ছে। মাত্র ১৪শ’ টাকায় পছন্দের পাঞ্জাবিটা পেয়ে গেলেম। ভিড় কম থাকায় দেখেশুনে নিতে পারছি। দুই একদিনের মধ্যে মার্কেটে দেখেশুনে কেনা কঠিন হয়ে যাবে তাই আগেভাগে কিনে নিলাম।
একই মার্কেটের বকুল ফ্যাশন হাউজ থেকে ৩টি শাড়ি কিনলেন সানজিদ আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতিটি শাড়ীর গায়ে দাম লেখা আছে সাড়ে ২৪শ’ টাকা। আমি শাড়ি তিনটি ৭ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। এখন আমার ও বাচ্চাদের জন্য পাঞ্জাবি কিনবো। একই দোকান থেকে যুথি রহমান সাড়ে ১৬শ’টাকা দিয়ে একটি সুতি শাড়ি কিনলেন। তিনি জানান, বছরের এ দিনটি বরণ করতে আমি প্রতিবারই নতুন শাড়ি কিনি। এবারও কিনলাম পছন্দেরটি। তবে এবার মার্কেটে কম লোক থাকায় একটু দেখে-শুনে ক্রয় করতে পারলাম।
পহেলা বৈশাখের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি থাকলেও বেচা-কেনা কম কেন জানতে চাইলে আজিজ সুপার মার্কেটের যুগান্তর ফ্যাশন হাউজের স্বত্তাধিকারি মিজানুর রহমান বলেন, এখন সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। নগরবাসীর বেশিরভাগ শিক্ষিত। তারা কোন পোশাক ক্রয় করতে অনলাইনে সার্চ দিচ্ছে। পছন্দ অনুযায়ী ঘরে বসে কিনে নিচ্ছে। তাই আমাদের মতো স্থায়ী দোকানদারদের বেচা-কেনা কিছুটা কমে গেছে। অনলাইন বেচাকেনা হিসাব করলে বৈশাখীর বেচাকেনার ভিড় কিন্তু অনেক আগেই লেগে গেছে।
এদিকে রাজধানীর সাইন্সল্যাব মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। পা রাখার যেন জো নেই পাঞ্জাবির দোকানগুলোয়। মনসুর প্লাজায় পাঞ্জাবি কিনতে আসা আজাদ রহমান জানান, এবার খুব সহজেই পছন্দের বৈশাখী পোশাক কিনতে পারলাম। হলুদ রঙের সুতি পাঞ্জাবি কিনতে গুনতে হয়েছে ১৮ শ’ টাকা। নিউমার্কেটে শাড়ির দোকানেও রোববার ছিল ভিড়। সেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীরা দল বেধে এসেছেন বৈশাখী কেনাকাটা করতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সোহানা মাহজাবিন জানালেন, বান্ধবীরা মিলে একসঙ্গে বৈশাখের কেনাকাটায় এসেছেন। নিউমার্কেটে তুলনামূলক সাশ্রয়ে পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। সোহানা জানান, তিনি পছন্দের একটি শাড়ি কিনেছেন। দাম পড়েছে ১১শ’ টাকা।
আরকে// এআর