ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

রাজনীতি হচ্ছে মানবসেবার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা: বদিউল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫২, ৮ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:২৪, ৮ অক্টোবর ২০১৮

`রাজনীতি হচ্ছে মানবসেবার সর্বশ্রেষ্ট পন্থা` - এমন বিশ্বাস থেকেই মানুষকে ভালবাসার তাগিদে ৩৯ বছর ধরে রাজনীতির কঠিন পথে হেঁটে চলেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম। কৈশোর পার হওয়ার আগেই রাজনীতিতে হাতে খড়ি তাঁর। তারপর আর কখনো পেছনে তাকানোর সুযোগ হয়নি। ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কলেজে সাংগঠনিক সম্পাদক, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এবার তিনি চট্টগ্রাম-১২ ( পটিয়া) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। পটিয়ার বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনা, যুবলীগের রাজনীতি, তার বিভিন্ন পরিবল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে। কেন তিনি মনোনয়নের প্রকৃত দাবিদার তাও উঠে এসেছে তার বক্তব্যে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আপনার ভূমিকা কি?

বদিউল আলম: বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে প্রথমে আমি খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলাম। পরে ঢাকা বিভাগ উত্তরের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। পরে ঢাকা বিভাগ উত্তরের পাশাপাশি আমাকে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বও দেওয়া হয়। এর আগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলাম। আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা আমি পালনে চেষ্টা করেছি। আমি যখন যেখানে দায়িত্ব নিয়েছি সে সব এলাকার প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিট পর্যায়ে আমি সাংগঠনিক কাজ করেছি। প্রতিনিয়ত নেতা কর্মীদের উজ্জ্বীবিত রেখেছি।

এছাড়াও আমাদের যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিভিন্ন উপজেলায় সম্মেলন করেছি। হাতে গোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া বাকি সব এলাকায় ইতোমধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে জামালপুর, টাঙ্গাইল, নরশিংদী জেলা ও এর প্রতিটি উপজেলা, গাজীপুর জেলা ও তার প্রতিটা উপজেলা, শেরপুরের প্রতিটা উপজেলায় সম্মেলনের জন্য কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আমি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: যুবলীগ রাজপথের রাজনীতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান স্টিয়ারিং ফোর্স। সেই বিবেচনায় এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে যুবলীগ নেতাদের কেমন মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছেন?

বদিউল আলম: মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কে যুবলীগ করে কে আওয়ামী লীগ করে সেটি বিষয় নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব বিবেচনায় প্রার্থী মনোনয়ন দিবেন। তিনি দেখবেন, কে কোথায় জিতে আসার সক্ষমতা রাখে। এলাকার সাধারন মানুষ ভালবাসে, নেতাকর্মীরা যার উপর আস্থা রাখে, দলের দুর্দিনে যাদের ভূমিকা ছিল, দীর্ঘদিন ধরে যারা ত্যাগ স্বীকার করে আসছে তাদেরকেই আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেবেন। প্রার্থী ছাত্রলীগ,  যুবলীগ, আওয়ামী লীগ যাই হোক না কেন সেটা বড় কথা নয়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আগামী নির্বাচনে আওয়ামী যুবলীগ কেমন ভূমিকা রাখবে?

বদিউল আলম: যুবলীগের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি একজন সৃজনশীল রাজনীতিবিদ। তিনি যুবজাগরনের পথিকৃৎ। প্রথাগত রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাসী নন। হাতে কলমে তথ্য উপাত্ত দিয়ে তিনি আমাদের রাজনীতি করাচ্ছেন। দেশের কোথাও রাজনৈতিক কোন দলের গবেষণা সেল নেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান যুব গবেষনা কেন্দ্র- যুবজাগরন থেকে ইতোমধ্যে ৪০০- এর অধিক প্রকাশনা বের করেছেন। একটি প্রশিক্ষিত যুব গোষ্ঠী তৈরী করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার যে অর্জনগুলো আছে আমরা তা জানকে চাই ও জানাতে চাই। বিভিন্ন প্রকাশনা, ক্রোড়পত্র, বুলেটিন বের করে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান গুলোকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি পটিয়া ( চট্টগ্রাম-১২) থেকে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী। এখানেই আপনার ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল। সে বিবেচনায় পটিয়ার কোন কোন সমস্যা- সম্ভাবনা আপনার চোখে পড়ছে?

বদিউল আলম: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সহ নানা দিক বিবেচনা করে পটিয়াকে জেলা ঘোষণা করেছিলেন। চট্টগ্রাম দু`ভাগে বিভক্ত ছিল। চট্টগ্রামের গভর্নর ছিলেন দৈনিক আজাদীর অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। পটিয়ার গভর্নর ছিলেন জাকারুল হক চৌধুরী। জাকারুল হক চৌধুরী একটি গেজেটেড জেলার গভর্নর ছিলেন।  কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর পরবর্তী শাসকগোষ্টী বিষয়টিকে বেমালুম চেপে যায়। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু যে পটিয়াকে জেলা ঘোষনা করেছিলেন তাকে যদি অ্বার জেলায় রূপান্তর করা হয় তাহলে পটিয়ার অনেক সমস্যা মিটে যাবে। পর্যটনের দিক থেকে পটিয়া অনেক সম্ভাবনাময়ী এলাকা। দেশে একসময় লবনের চাহিদা মেটাত পটিয়ার লবনশিল্প। 

কক্সবাজার ও দক্ষিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লবন পরিশোধিত হতো পটিয়াতে। সেখান থেকেই সারা দেশে সরবরাহ করা হতো। মৎস্য পোনা চাষের ক্ষেত্রে পটিয়া শ্রেষ্ট জায়গা। দেশের মাছ চাষের জন্য যে পোনা উৎপাদিত হয় তা কিন্তু পটিয়াতেই হয়।

পটিয়া রেল ষ্টেশনে গেলে দেখবেন রাত এগারোটা থেকে রাত দু`টা পর্যন্ত পোনা মাছের হাট দেখবেন। হাজার হাজার মানুষ সেখানে মাছের পোনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখান থেকে পোনা কিনে নিয়েই সারা দেশে মাছ চাষ করা হয় ও আমাদের পুষ্টি চাহিদা মেটানো হয়। প

টিয়াতে বেশ কিছু পাহাড়ী এলাকা আছে। দেশের ফলজ ও বনজ চাহিদা মেটাতে এসব পাহাড়ী এলাকা ভূমিকা রাখছে। পটিয়াতে ভুটভুটি ছড়া নামে একটা জায়গা আছে। সেই জায়গাটিতে সরকার যদি সার্ভে করে তাহলে সেখানে প্রচুর খনিজ সম্পদ পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি আজকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও এই পটিয়া থেকেই উঠে এসেছেন? রাজনীতির এই বন্ধুর পথে কেন হাঁটছেন?

বদিউল আলম: ১৯৭৯ সালে বৃত্তি পরীক্ষায় অামি পটিয়া মহকুমা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করি। অামি খুব ডানপিটে ছেলে ছিলাম। তখন অাওয়ামীলীগের দুর্দিন। সে সময় কিছু রাজনৈতিক নেতা যারা বঙ্গবন্ধুকে মনে প্রাণে ভালবাসত ও অাওয়ামীলীগের রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করে যাচ্ছিল এমন কয়েকজনের দৃষ্টি পড়ে অামার উপর। তাদের সান্নিধ্যর অামার মধ্যে রাজনীতির বীজ বোপন হয়ে যায়। যেই বীজ অার কখনো উপড়ানো সম্ভব হয়নি। তখন কোন এক নেতা ( অাজকে তার নামটা অামার মনে নেই)  তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, ` রাজনীতি হচ্ছে মানবসেবার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা`। এই লাইনটি অামাকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই গত ৩৯ বছর ধরে অামি রাজনীতির পথেই হাঁটছি। অাল্লাহ রাব্বুল অালামীন যেন অামাকে এ পথেই কবুল করেন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অাসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে অাপনি কী ভাবছেন?বদিউল অালম: নদীর স্বার্থকতা হচ্ছে সাগরে মেশা। অামরা যারা রাজনীতি করি তেমনি অামাদের লক্ষ্য থাকে নির্বাচন। একজন রাজনৈতিক কর্মী সবসময় স্বপ্ন দেখে সে কখনো না কখনো জনপ্রতিনিধি হবে। অামিও ৩৯ বছর ধরে রাজনীতির কন্টকময় পথে হেঁটেছি। দলের দু:সময়- সুসময়ে কর্মীদের অাগলে রেখেছি। রাজনীতির প্রয়োজনে জেল- জুলুম- হুলিয়া সহ্য করেছি।  জামাত শিবিরের হাতে প্রতিহিংসামূলক ভাবে অাহত হয়েছি। এভাবে অামি তিল তিল করে জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অাগামী সংসদ নির্বাচনে যারা চট্টগ্রাম ১২ (পটিয়া) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের তুলনায় অাপনি কোন কোন দিকে এগিয়ে অাছেন বলে মনে করছেন? অাপনাকে দল কেন মনোনয়ন দিবে?

বদিউল আলম: এ প্রশ্ন শুধু অামাকে নয়, বরং যারা যারা অাওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদেরকেও করতে পারেন। `নৌকা`র হকদার কে?  নৌকার হকদার হচ্ছে তিনি, যিনি ছোটবেলা থেকে এই নৌকা`র রাজনীতির সাথে জড়িত। যিনি সবসময় নৌকা`কে ধরে অাছেন। এই নৌকা`র পেছনে যার রক্ত অাছে। এই নৌকার পেছনে যার ত্যাগ অাছে, কষ্ট অাছে। যার শ্রম, মেধা, জীবন যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় এই নৌকার পেছনে ব্যায় হয়েছে সেই নৌকার হকদার। অাবার এটাও সত্য কথা শুধু হকদার হলেই হবেনা, ত্যাগী হলেই হবেনা, নির্বাচনে জেতার সক্ষমতাও লাগবে। অামি মনে করি এসব বিবেচনায় অামার চেয়ে বেশী যদি কেউ থাকে তাহলে তিনি মনোনয়ন পাক। অার যদি অামি এসব বিবেচনায় এগিয়ে থাকি তাহলে অামি মনোনয়ন প্রত্যাশী। অামার বিশ্বাস, অামি এ সিটটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারব।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: যদি অাওয়ামীলীগ অাপনাকে মনোনয়ন দেয় ও বিএনপি শক্তিশালীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার জন্য অাপনি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?

বদিউল অালম: দেখুন, অামি পোড় খাওয়া মানুষ। রাজনীতির প্রতিটা বাঁকে অামাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে। পটিয়ায় অামি একবার চেয়ারম্যান ও একবার মেয়র হিসেবে অামি নির্বাচন করেছি। সর্বস্তরের মানুষ অামাকে ভোট দিলেও অামি ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হই।

একবার বিএনপি অামাকে পরাজিত করে। অারেকবার দলীয় পতিপক্ষের প্রতিহিংসায় অামার রেজাল্ট কেড়ে নেওয়া হয়। তাতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। অামাকে চোখ বেঁধে থানা হাজতে নির্মম ভাবে প্রহার করে। অামাকে কারাগারে পাঠায়।

অামি তৃণমূলে পরীক্ষা দেওয়া মানুষ। অাত্মপ্রত্যয়ী ও অাত্মবিশ্বাসী মানুষ জীবনে কখনো পরাজিত হয়না। যদি ১২ বছর একাগ্র চিত্তে অাল্লাহকে ডাকে তাহলে অাল্লাহর দিদার মেলে। অার অামি তো ৩৯ বছর ধরে এই পথে হেঁটেছি। মানুষকে ভালবেসেছি। মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। তার অামার শক্তি সাধারন মানুষ।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অাপনাকে ধন্যবাদ।

বদিউল অালম: অাপনাকেও ধন্যবাদ। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের জন্য শুভ কামনা।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি