রাজশাহীতে আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন অবহিতকরণ কর্মশালা
প্রকাশিত : ১৯:৩২, ১১ নভেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৯:৩৩, ১১ নভেম্বর ২০২১
রাজশাহীতে আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন-২০২১ অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের সিটি হলরুমে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন।
ইউনিসেফ, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুফ নিউট্রিশন (গেইন) এবং নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (এনআই) বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় কর্মশালাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আয়োডিন একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুপুষ্টি, যা মানুষের স্বাভাবিক মানসিকও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। বুদ্ধিদীপ্ত থাকতে চাই আয়োডিনযুক্ত লবণ খাই। মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে আয়োডিনযুক্ত লবণের অপরিহার্যতার বিষয়টি দীর্ঘদিন তেমন গুরুত্বের সাথে দেখা হয় নাই। যার ফলে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, ঠাকুরগাঁ বিভিন্ন জেলার মানুষের আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ডসহ চোখ ও মস্তিষ্কের নানাবিধ জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হত। তবে বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত সর্তক। সরকারের নানামূখী উদ্যোগের ফলে এটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের অনেক দেশের তুলনায় আমরা নানা ক্ষেত্রে বর্তমানে পিছিয়ে থাকলেও এক সময় আমাদের ছিল গৌরবাজ্জ্বল ঐতিহ্য। বিভিন্ন সময় শোষণ ও বঞ্চনার ফলে আমরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে। দেশের সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন দৃশ্যমান। বিসিকের অনেকগুলি কাজ হচ্ছে। এসএমই ফাউন্ডেশন, ঐক্য ফাউন্ডেশন এ রকম অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছে। যারা নিজেদের কাজের মাধ্যমে বিসিককে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখছে।
মেয়র আরো বলেন, রাজশাহী কৃষি প্রধান অঞ্চল। এ অঞ্চলে কৃষি ভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। আলু, ধান, ভুট্টা, মাছ মাংস বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে। রাজশাহীতে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী-২ এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেখানে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বিসিক চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাক হাসান, এনডিসি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আয়োডিন মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। থাইরয়েড হরমোনের অন্যতম প্রধান উপাদান আয়োডিন। আয়োডিনের অভাবের কারণে দেহের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ প্রাকৃতিকভাবে বেশি আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খায়। দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষরা আয়োডিনের অভাবে থাকে। সামুদ্রিক মাছে রয়েছে প্রচুর আয়োডিন। পশু খাদ্যেও প্রয়োজনীয় আয়োডিন থাকতে হবে। নতুন এ আইনে ভোজ্য লবণে আয়োডিন যুক্ত না করিবার কঠোর দণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। আয়োডিনবিহীন লবণ ক্রয়-বিক্রয় না করার বিষয়ে জনমত গঠনে সকল মহলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিসিকের পেশাগত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়ে বিসিকের ঋণ গ্রহণ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিসিক রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক মো: রেজাউল আলম সরকার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিসিকের লবণ সেল প্রধান সরোয়ার হোসেন। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গেইন এর পোর্টফলিও লিড আশেক মাহফুজ। মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন বিসিক পরিচালক (প্রকৌশল ও প্রকল্প বাস্তবায়ন) মুহাম্মদ আতাউর রহমান ছিদ্দিকী।
আরো বক্তব্য রাখেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. মো: কাইয়ুম তালুকদার। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিসিক রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর বায়েজীদ। কর্মশালায় লবনচাষী, লবন ব্যবসায়ী, বিসিক আঞ্চলিক কার্যালয় ও জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালা শেষে বিসিক জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৩ কোটি টাকা বিতরণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাঁচটি গ্রুপের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ করেন রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। পাঁচটি গ্রুপের মধ্যে আবু সামা গ্রুপকে ৫০ লাখ, উম্মে সালমা গ্রুপকে ২০ লাখ, মঞ্জুর রহমান গ্রুপকে ১৮ লাখ টাকা, সোহেল রানা গ্রুপকে ২০ লাখ ও মোরেফা আক্তার জাহান ২৫ লাখ টাকা ঋণের চেক প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন আয়োডিন যুক্ত লবণ আইন-২০২১ এর প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। আইনে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ আইন ১৯৮৯ রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন, পরিশোধন, সংরক্ষণ, সরবরাহ বাধ্যতামূলক এবং ভোক্তা পর্যায়ে তা সরবরাহ অথবা বিপণন নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
আয়োডিনযুক্ত লবণ সরবরাহ, উৎপাদন, পরিশোধন, সংরক্ষণ নিশ্চিত করার বিষয়টি মনিটরিং করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সভাপতি করে ১৪ সদস্যের জাতীয় লবণ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান করা হয়েছে। এছাড়া জেলা ও প্রান্তিক লবণ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। আইনে আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন, সংরক্ষণ সরবরাহ,পাইকারি বিক্রি করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে বিধান করা হয়েছে। এছাড়া আইনে লবণে আয়োডিনযুক্তকরণ ও এর পরিমাণ, প্যাকেটিং, লেভেলিং, নিবন্ধন নবায়ন, নিবন্ধন বাতিল, রেজিস্ট্রার কর্তৃক পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ, লবণ প্রক্রিয়াকরণ শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা, আইনের বিধি লংঘনজনিত অপরাধ, দণ্ড, বিচার প্রক্রিয়া, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়েছে।
এসি
আরও পড়ুন